লুকোচুরি: পরিবারের কারও মুখেই নেই মাস্ক। তাঁদের বোঝাতে ব্যস্ত এক পুলিশকর্মী। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁতেই শহরের অন্যান্য জায়গার মতো পার্ক স্ট্রিটের বহুতলের ছাদ থেকেও ফাটতে শুরু করেছিল দেদার শব্দবাজি। শব্দ-তাণ্ডব রুখতে পুলিশ তখন কোথায়? দেখা গেল, বছরের শেষ দিনের উৎসবমুখী জনতাকে ফাঁকা করতেই তাদের ব্যস্ততা। যদিও কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘সব দিকে পুলিশের নজর ছিল। মাস্ক না পরায় ধরা হয়েছে, বাজিও উদ্ধার হয়েছে। বেপরোয়া গতির বাইকও আটকানো হয়েছে।’’
হিসেব দিয়ে কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পাঁচ কিলোগ্রাম বাজি ও ২৬২ লিটার মদ উদ্ধার হয়েছে। জুয়া খেলার অভিযোগে দু’জনকে এবং অন্যান্য কারণে ১৬ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভব্য ও বিশৃঙ্খল আচরণের জন্য ধরা হয়েছে ১২৭০ জনকে। কিন্তু সারা শহর থেকে উদ্ধার হয়েছে পাঁচ কিলোগ্রাম বাজি!
উদ্ধারের এই বড় ফাঁক গলেই বছরের শেষ রাতে পার্ক স্ট্রিট, এ জে সি বসু রোড, এক্সাইড মোড়, ধর্মতলা থেকে বাইপাস— সর্বত্রই কার্যত পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে, থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে, দেদার বাজি ফাটিয়ে, বেপরোয়া বাইক চালিয়ে, ভেঁপু বাজিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানালেন উৎসবমুখী জনতা।
আরও পড়ুন: বিলেতফেরত আরও তিন যাত্রী আক্রান্ত
অথচ ইংল্যান্ডে ধরা পড়া করোনার নতুন স্ট্রেন ইতিমধ্যেই আতঙ্ক ফিরিয়ে আনছে। তাই বর্ষশেষে সতর্ক থাকতে বার্তা দিয়েছিল প্রশাসন। কলকাতা হাইকোর্টও বলেছিল, শহরের কোথাও যাতে ভিড় না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে পুলিশকে।
সেই সতর্কীকরণের ফল দেখা গেল ওই রাতে। বিহারের বাসিন্দা আহিল খান তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন বর্ষবরণ উৎসব দেখতে। বন্ধ অ্যালেন পার্কের সামনে চেয়ারে মাস্ক ছাড়াই বসেছিলেন তাঁরা। করোনার ভয় নেই? উত্তর, ‘‘এমনিতেও তো জ্বর, সর্দি, কাশি হয়, এটাও তেমনই।’’ পাশেই ছিলেন রাজারহাটের বাসিন্দা কে শ্রীনিবাসন ও তাঁর মা কে গৌরী। বয়স্ক মাকে নিয়ে ভিড়ে কেন এলেন? ‘‘মাস্ক পরে বার বার হাত স্যানিটাইজ় করলেই হবে।’’ ― উত্তর শ্রীনিবাসনের।
আরও পড়ুন: বিলেতফেরত আরও তিন যাত্রী আক্রান্ত
পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাতের চেকিং পয়েন্টে এক দল তরুণ-তরুণীকে পুলিশ ধরেছিল মাস্ক না পরার জন্য। বকাবকি করে মাস্ক পরিয়ে তাঁদের এগোনোর অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুটা যাওয়ার পরেই দেখা যায় মাস্ক উধাও তাঁদের। কারণ বাহারি আলোর কারুকাজের সামনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তোলার হিড়িক। মাস্ক কোথায়? পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘মুখ ঢাকলে ছবি তুলব কী ভাবে?’’ গোটা পার্ক স্ট্রিট জুড়ে ভিড় সরাতে একনাগাড়ে বাঁশি বাজাতেও দেখা গিয়েছে পুলিশকে। রাত বারোটা বাজতেই শহর জুড়ে চলেছে বাজির দৌরাত্ম্য। ফেটেছে শেল, শব্দবাজি।
অন্যান্য বছর রাত ১২টা বাজলেই পার্ক স্ট্রিট মোড় এবং অ্যালেন পার্কের সামনে ভিড় দাঁড়িয়ে যায়। সেখান থেকেই চিৎকার করে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছর। ওই দিনও সেই ভিড়ের আশঙ্কা করেই বারোটা বাজার মিনিট দশেক আগে পার্ক স্ট্রিট ও মির্জা গালিব স্ট্রিটের মোড় থেকে কাউকেই আর অ্যালেন পার্কের দিকে যেতে দেওয়া হয়নি। বরং পার্কের দিক থেকে মোড়ের দিকে হটিয়ে একটি দলকে মির্জা গালিব স্ট্রিট দিয়ে ধর্মতলায় আর অন্য দলকে সোজা পার্ক স্ট্রিট মেট্রোর দিকে পাঠানো হয়েছে। তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। মির্জা গালিব স্ট্রিট দিয়ে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড ঘুরে ভিড় পৌঁছে গিয়েছে অ্যালেন পার্কের দিকে। যা দেখে এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘মণ্ডপ, ঠাকুর থাকলে বুঝতাম। কিছুই তো নেই। তা-ও যে কেন এক জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষ, মাথায় ঢুকছে না।’’
তবে কি মানুষ নতুন বছরটা কোভিড ১৯-এর সতর্কতা ভুলে শুরু করতে চান? এক চিকিৎসকের মন্তব্য, “ভুলে যাব বললে তো আর হবে না। কিছু দিন পরে ফের মনে করতে হবে। মনে রাখতে হবেই। কারণ এটা সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা নয়, এ হল অতিমারির সঙ্গে বিশ্বব্যাপী লড়াই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy