রাস্তায় বাস কম থাকায় উপচে পড়েছে ভিড়। ছবি: শৌভিক দে।
বাস, ট্যাক্সি, অটো যে তেমন রাস্তায় নামবে না তা জানাই ছিল। কিছু যে তৃণমূলের সভায় লোক নিয়ে যাবে এবং কিছু যানজটের ভয়ে চলবে না সেটা ধরেই নিয়েছিলেন শহরবাসী। তাই বেশিরভাগ অফিসযাত্রীই ভরসা করেছিলেন মেট্রোর উপরে। কিন্তু পাতাল রেল ঢিমে তেতালায় চলে ভোগান্তি বাড়াল মানুষের।
ধর্মতলায় তৃণমূলের সভার জন্য এদিন যে মেট্রো উপচে পড়বে তা জেনেও কেন মেট্রো রেল কোনও আপতকালীন ব্যবস্থা নিল না সেই প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। এদিন সকল থেকেই হোঁচট খেতে খেতে চলেছে মেট্রো। শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে ১০ টা ২২ মিনিটে যে ট্রেনটি ছেড়েছিল সেটি গীতাঞ্জলীতে চার মিনিট, সূর্য সেনে চার মিনিট, নেতাজিতে চার মিনিট এবং নেতাজি এবং উত্তমকুমারের মাঝ খানে কেনই বা দাঁড়িয়ে গেল তার ব্যাখ্যা যাত্রীরা মেট্রো রেলের কাছ থেকে পাননি। ট্রেন যখন এক একটা স্টেশনে তিন-চার মিনিট দাঁড়িয়ে থেকেছে তখনই আতঙ্ক গ্রাস করেছে মানুষকে। মেট্রো মাঝপথে খারাপ হলে কী হবে সেটাই ছিল যাত্রীদের মধ্যে একমাত্র আলোচনার বিষয়।
তৃণমূলের সভার জন্য শহরের অনেক স্কুলে হয় এদিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, নয়তো তড়িঘড়ি ছুটি দেওয়া হয়েছে স্কুল। তবে অফিস যাওয়ার জন্য এদিন যাঁরা রাস্তায় বেরিয়েছেন অটো, ট্যাক্সি, বাস না পেয়ে নাকাল হয়েছেন। যাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁরা যে ভাবেই হোক পৌঁছতে চেয়েছেন কাছের কোনও মেট্রো স্টেশনে। কিন্তু মেটরো স্টেশন পৌঁছবেন কী করে? কোনও যানবাহনই তো নেই রাস্তায়!
কেন এই অবস্থা? বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনগুলি এর জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন শাসক দলকেই। বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনের এক নেতা জানিয়েছেন, প্রতি দিন যে সংখ্যক বাস রাস্তায় চলে, এ দিন তার প্রায় ৯০ শতাংশই ওই সমাবেশের লোক আনতে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে বাকি ১০ শতাংশ বাস সাধারণ মানুষের জন্যে রাস্তায় চলেছে। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। অমিল পরিষেবায় ভোগান্তি হয়েছে শহর জুড়েই। শুধু ডালহৌসি নয় শহরের সর্বত্রই এই চিত্র।
তবে শুধু শাসক দলের জন্যই নয়, বেসরকারি বাস সংগঠন গুলির দাবি রাস্তায় প্রবল যানজটের জন্যও রাস্তায় বাস চলতে পারেনি। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস এর সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে সংখ্যক বাস রাস্তায় নেমেছিল সেগুলি সমস্ত রুটে চলতেই পারেনি। যানজট হওয়ার কারণে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় তা থেমে গিয়েছিল।’’ এই একই কথা শনা গিয়েছে বেঙ্গল বাস সিণ্ডিকেটের সম্পাদক দীপক সরকারের মুখেও। তিনি জানান, রাস্তায় বাস চলতে না পারার জন্যে ভোগান্তি বেশি হয়েছে। ফলে পরোক্ষে সেই শহিদ দিবসের সমাবেশকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁরা।
একই হাল দেখা গিয়েছে সরকারি বাসের ক্ষেত্রেও। কলকাতায় মূলত কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগম (সিএসটিসি)-র বাসের সংখ্যাই বেশি। এ দিন কিন্তু সেই বাসেরও আকাল দেখা গিয়েছে। বেশির ভাগ বাস রাস্তায় নামতেই পারেনি। কেন? নিগমের যুক্তি যানজটের কারণে বিভিন্ন জায়গায় বাস দাঁড়িয়ে ছিল। যে কারণে বেশি বাস নামিয়েও পরিস্থিতির সামাল দেওয়া যেত না বলেই দাবি ওই কর্তার।
তবে নিগমেরই অন্দরের খবর, বেশি বাস থেকেও রাস্তায় তা নামানো হয়নি, এই তথ্য ঠিক নয়। মূলত শাসক দলের সমাবেশের জেরে সরকারি বাসও ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি নিগমের এক কর্তার। সিটিসি-র বেশিরভাগ বাস রাস্তায় চললেও সেগুলি মূলত শহরতলিতে চলে। যে কারণে কলকাতা শহরে তার সুফল খুব একটা পাওয়া যায়নি। আর বিভিন্ন ট্যাক্সি এবং অটো ইউনিয়ন সূত্রের খবর, অটো চালক এবং ট্যাক্সিচালকদের শতকরা ৯০ ভাগকে যেতে হয়েছিল ধর্মতলার সভায়। না হলে সাতদিন বসিয়েরাখার হিমকি দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূলের শ্রমিক নেতারা অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। তারা বলেছেন, অঠো এবং ট্যাক্সি চালকদের অনেকে স্বেচ্ছাতেই সভায় গিয়েছেন।
কিন্তু মেট্রো এমন ভোগালো কেন এদিন? মেট্রো রেল জানাচ্ছে, সকাল পৌনে দশটা নাগাদ ভিড় যখন সবে বাড়ছে, সেই সময় শহীদ ক্ষুদিরামে একটি বাতানুকূল ট্রেন ব্রেক আটকে (ব্রেক বাইন্ডিং) যাওয়ায় দাঁড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কোনওভাবেই সেটিকে মেরামতি করতে না পেরে যাত্রী নামিয়ে অবশেষে রেকটিকে ফেরত পাঠানো হয় কবি সুভাষের কারশেডে। তাতেই আপ লাইনে ট্রেন চলাচলে দেরি হয়ে যায় প্রায় ১৫ মিনিট। ওই বিভ্রাটের জের আর সারা দিনে কাটিয়ে উঠতে পারেনি মেট্রো। এরপরে স্টেশনগুলিতে ভিড় যতো বেড়েছে ততোই পিছিয়েছে মেট্রোর সময়। আর হাসফাঁস ভিড়ে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
এদিন সকালে একদিকে সভায় আসার জন্য সমর্থকদের ভিড়, অন্যদিকে রাস্তায় বাস ট্রাম না পেয়ে অফিস যাত্রীদের ভিড়। দুয়ে মিলে মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে ১১টার পরে বেশি কিছুক্ষণ ধরে ভিড়় আছড়ে পড়তে থাকে। কিন্তু তখন আবার ট্রেন চলছে সব দেরি করে। ফলে এক সময়ে স্টেশনগুলিতে আর দাঁড়ানোরও জায়গা ছিল না। ওই সময় এক একটি করে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢোকামত্রই আছড়ে পড়ছে মানুষ। অনেক ট্রেনরই দরজা বন্ধ হচ্ছিল না। ফলে তাতেও হয়েছে দেরি। হাসফাঁস ভিড়ে জেলা থেকে সভায় যোগ আসা যাঁরা মেট্রোয় উঠেছেন তাঁরাও ভোগান্তির শিকার। দুপুর একটা নাগাদ একটি মেট্রোর একটি কামরায় উঠে দেখা যায় সেখানে চটি ডাঁই হয়ে পড়ে। ভিড়ের চাপে সেগুলি অনভ্যস্ত যাত্রীদের পা থেকে খুলে গিয়েছে বলেই মনে করছেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন স্টেশনে একটা সময়ে ভিড় এতটাই বেশি হয়েছে যে আপিএফ জওয়ানদের লাঠি উঁচিয়ে মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। তবে নিত্যযাত্রীদের মন্তব্য, সকালে যদি মেট্রো বিভ্রাট এড়িয়ে সময়সারনি মেনে ট্রেন চালাতে পারত তবে এ ভোগান্তি হয়তো হত না।
নেই বাস*
মঙ্গলবার কত চলেছে
বেসরকারি বাস
(বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট)
৪৫০০
১০০০
বেসরকারি বাস
(জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস)
৭০০০
২০০
মিনিবাস
২৫০০
১২০০
সরকারি বাস
সিএসটিসি
৭৫০
৩৫০
সিটিসি
২০০
১৮৫
*সূত্র: বাস-মিনি বাস সংগঠন, সিএসটিসি, সিটিসি
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy