শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজোয় আশা ভোঁসলে। সঙ্গে পুজোর কর্ণধার সুজিত বসু। বৃহস্পতিবার। — শৌভিক দে
ঢাকে কাঠি পড়েছিল তৃতীয়াতেই। পঞ্চমীতে শহরে এল পুরোদমে উত্সবের মেজাজ। মেঘলা আকাশ, ঝিরঝিরে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই। এমনকী রাতেও যানজটে আটকে ছিল শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, বাইপাসও। মেট্রোতেও ছিল উপচে পড়া ভি়ড়।
উৎসবের মেজাজে রয়েছে প্রশাসনও। সকালে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ফেসবুকে রাজ্যবাসীকে ‘শারদ শুভেচ্ছা’ জানিয়েছেন।
হাতিবাগানের ফুটপাথের বিকিকিনি তো ফুরোয়নি এ দিনও। তার মধ্যেই শুরু হয়েছে পুজোর ভিড়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার শোভাবাজার মো়ড়ে কলকাতা পুলিশের এক সহকারী কমিশনার ফোনের ওপারে কাউকে বলছিলেন, ‘‘উফ! পঞ্চমীর সন্ধ্যায় এমন ভিড় আগে দেখিনি।’’ শ্যামপুকুর, সিকদারবাগান, কাশী বোস লেনের পুজো দেখে কলেজ স্কোয়ারের দিকে হাঁটা দিয়েছে ভিড়।
বিকেল থেকেই উত্তর শহরতলি থেকে একের পর এক ট্রেন ঢুকেছে শিয়ালদহে। সেই ভিড় হাঁটা পথে রওনা দিয়েছে কলেজ স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্ক, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দিকে। সে সব পুজো দেখে মেট্রোয় চেপেছে জনতা। কারও লক্ষ্য দক্ষিণ কলকাতা, কারও বা বেহালা। পুলিশের খবর, উত্তরের ভিড়ের বেশির ভাগটাই নেমেছে কালীঘাটে। সেখান থেকে এক দল চলে গিয়েছে ৬৬ পল্লি, বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ হয়ে চেতলা অগ্রণীতে। সেখান থেকে ভিড় আছড়ে পড়েছে নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘে। অন্য দল দেশপ্রিয় পার্ক ঘুরে ত্রিধারা দেখে ঢুকেছে হিন্দুস্থান পার্কে। রাত বাড়লেও ভিড় কমেনি ওই এলাকার পুজোমণ্ডপগুলিতে। বরং পায়ে পায়ে ভি়ড় এগিয়েছে বাবুবাগান, যোধপুর পার্কের দিকে। বেহালা-বড়িশা এলাকার পুজোগুলিতেও পঞ্চমীর রাতে উপচে পড়া ভিড়।
সন্ধ্যা থেকেই ভিড় ছিল শ্রীভূমি স্পোর্টিং, দমদম তরুণ দলের মতো পুজোগুলিতে। গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে শহরতলির অনেকেই ঢুঁ মেরেছেন ওই পুজোগুলিতে। ফলে ভিড়ও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। রাতে ভিআইপি রোডের কিছু এলাকায় নজরে পড়েছে বেপরোয়া হেলমেটহীন মোটরবাইক-আরোহীও।
বাগবাজার থেকে ঠাকুর দেখে যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শোভাবাজার পর্যন্ত এসেছিলেন রিয়া সেনগুপ্ত। তার পরেই রীতিমতো খোঁড়াতে শুরু করলেন তিনি! নতুন জুতোয় পায়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে গড়িয়াহাটের মোড়ে সিগারেট কিনতে নেমেছিলেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। এক়ডালিয়ার ভিড় দেখে মন্তব্য করলেন, ‘‘পঞ্চমীতেই সব দেখে ফেললে বাকি দিনগুলোয় কী করবে এরা?’’ একডালিয়া, সিংহীপার্ক হয়ে ভিড়ের একটি বড় অংশ হাজির হয়েছে কসবা পাড়ার পুজোগুলিতে।
ভবানীপুর অবসরের পুজোকর্তা শ্যামল নাগদাস এর মধ্যেই চিন্তায় প়ড়ে গিয়েছেন। ১৫০ ফুট রেলিং দিয়েছিলেন তাঁরা। ‘পরির দেশে’ মানুষের ভিড় দেখে পুলিশ নিদান হেঁকেছে, আরও ১৫০ মিটার রেলিং দিতে হবে। হাজরার ভিড় ঢুকেছে বকুলবাগান, কালীঘাট মিলন সঙ্ঘেও। মিলন সঙ্ঘের প্রতিমা এ বার আমজনতার তারিফ কুড়িয়েছে। মণ্ডপে এক মহিলাকে বলতে শোনা গেল, ‘‘দুগ্গা নয়, যেন আমাদের ঘরের মেয়ে মনে হচ্ছে!’’
রাত আটটা। উল্টোডাঙা থেকে ভিড় হাঁটছে খন্নার দিকে। আর হাঁটতে হাঁটতেই ঢুকে পড়ছে তেলেঙ্গাবাগান, করবাগানের মণ্ডপে। পঞ্চমীর সন্ধ্যাতেই ভিড় সামাল দিতে নাকাল হচ্ছেন পুজোকর্তারা। বিক্ষিপ্ত ভাবে ভিড় জমছে গিরিশ পার্ক, পোস্তার মণ্ডপগুলিতেও। এ বার মহিলাদের হাতে ক্ষমতা গিয়েছে দর্পনারায়ণ ঠাকুর স্ট্রিটের পুজোর। সন্ধ্যার গেরস্থালি কাজ সেরে কোমর বেঁধে ভিড় সামলাতে নেমেছেন শুভ্রা দাস, রিঙ্কু ভট্টাচার্য, মালতী সাহার মতো পুজোকর্ত্রীরা। এ দিকে পঞ্চমীতেও কেনাকাটায় ছেদ পড়েনি। তাই মণ্ডপের পাশাপাশি নিউ মার্কেট, শপিং মলেও ভিড় লেগেছিল। ফিরতি পথে সেই ভিড়ও ঢুকেছে বিভিন্ন মণ্ডপে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy