দিনযাপন: পাড়ার পরিচিত দৃশ্য। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বহু পুরনো আমাদের এই পাড়া। নামকরণ নিয়েও রয়েছে এক জনশ্রুতি। গত শতাব্দীর গোড়ায় মনসাদেবীর একটি বিগ্রহ পাওয়া গিয়েছিল এখানে। তার থেকেই পাড়ার নাম হয় মনসাতলা লেন। পাড়ায় কোনও মনসামন্দির নেই। সেটা আছে কিছুটা দূরে ডায়মন্ড হারবার রোডে।
খিদিরপুরের এই বর্ধিষ্ণু পাড়ায় আজও চোখে পড়ে সেকেলে স্থাপত্য। এর পাশাপাশি মাথা তুলেছে বহুতল। পরিবেশেও পড়েছে আধুনিকতার ছাপ। পাড়ার দু’প্রান্তের পরিবেশ দু’রকম। এক দিকটা এখনও আটপৌরে। অন্য দিকের আবহাওয়াটা বেশি বাণিজ্যিক।
কর্মব্যস্ততা জীবনকে গ্রাস করলেও হারিয়ে যায়নি পুরনো পড়শিদের সঙ্গে সম্পর্কের মাধুর্য। তার প্রমাণ মেলে সুখ-দুঃখে, বিপদ-আপদে প্রতিবেশীরা যখন নিঃস্বার্থে পাশে দাঁড়ান। পাড়ার মানুষের ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে মতান্তর আছে, মনান্তর নেই।
এখনও অটুট এ পাড়ার আড্ডা। সারাদিনের পরিশ্রমের পরে যখন রাতে আড্ডায় বসি সারাদিনের ক্লান্তি, গ্লানি যেন উধাও হয়ে যায়। এমনই প্রান্তবন্ত এ পাড়ার আড্ডা। সেটা বসে কখনও রকে কখনও বা দোকানের সামনে। তবে প্রবীণদের চেয়ে মাঝ-বয়সিদের বেশি আড্ডায় দেখা যায়।
কাছেই রয়েছে লাজপত হিন্দি হাই স্কুল, খিদিরপুর বালিকা শিক্ষায়তন, আর কর্পোরেশন স্কুল। ছেলেদের শারীরচর্চার জন্য রয়েছে খিদিরপুর ব্যায়াম সমিতি। এ পাড়ায় রয়েছে শতবর্ষ অতিক্রান্ত মাইকেল মধুসূদন লাইব্রেরি। পাড়ার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে আছে লাইব্রেরিটি। কাছেই আনন্দময়ী দরিদ্র ভাণ্ডার। দরিদ্রদের সাহায্যের জন্য এটি গড়ে উঠেছিল। এর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। পাড়াতেই বসবাস করতেন বাংলার নবজাগরণের অন্যতম ব্যক্তিত্ব অক্ষয়কুমার দত্ত এবং বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র ঘোষ।
পাড়ার পুজোটি দক্ষিণ কলকাতার পুরনো পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। এখানে থিমের চাকচিক্য না থাকলেও রয়েছে পূর্ণ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা। আলোকস্তম্ভের উজ্জ্বল আলো কিংবা নিয়মিত রাস্তা সাফাই উন্নত নাগরিক পরিষেবার ইঙ্গিত বহন করে। পাড়ায় রয়েছে একটি পার্ক। বর্তমানে সেটিতে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব চোখে পড়ছে। ছোটরা বিকেলে আর ছুটির দিনে ওই পার্কেই ফুটবল ক্রিকেট খেলে। এখন অতিবৃষ্টিতে জল জমলেও তাড়াতাড়ি তা নেমেও যায়।
আগের তুলনায় পাড়ার মধ্যে বেড়েছে যান চলাচলও। এ দিক-ও দিক থেকে ছুটে আসে বেপরোয়া বাইক। বেড়েছে পার্কিং সমস্যাও। আশেপাশের এলাকার অনেকেই এ পাড়ায় গাড়ি রেখে দীর্ঘ সময়ের জন্য কোথায় যেন চলে যান। এর জন্য পাড়ার মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। তবে মানিয়ে নেওয়াই এ পাড়ার মানুষের এক বড় গুণ। তাই এ সব সমস্যায় শান্তি নষ্ট হয় না এ পাড়ার।
লেখক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy