Advertisement
২৯ মে ২০২৪

রাস্তা থেকে রেল, শাসকের বিক্ষোভে ভোগান্তি চলছেই

রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে পেরিয়েছে দু’টো দিন। বুধবার শাসক দলের বিক্ষোভ-মিছিল-অবরোধ-প্রতিবাদে অবরুদ্ধ হয়েছে শহরের রাজপথ। বৃহস্পতিবারও সেই ধারা অব্যাহত। তেমন বড় অবরোধ না-হলেও, শহর জুড়ে মিছিল-বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুরে তৃণমূলের রেল অবরোধ। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন শশাঙ্ক মণ্ডল।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুরে তৃণমূলের রেল অবরোধ। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন শশাঙ্ক মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:২৮
Share: Save:

রোজ ভ্যালি-কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে পেরিয়েছে দু’টো দিন। বুধবার শাসক দলের বিক্ষোভ-মিছিল-অবরোধ-প্রতিবাদে অবরুদ্ধ হয়েছে শহরের রাজপথ। বৃহস্পতিবারও সেই ধারা অব্যাহত। তেমন বড় অবরোধ না-হলেও, শহর জুড়ে মিছিল-বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চলেছে দিনভর। রাজপথের পাশাপাশি মানুষ দুর্ভোগে পড়েন রেলপথেও।

সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ প্রায় হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে বাগবাজার থেকে মিছিল বেরোয় মন্ত্রী শশী পাঁজার নেতৃত্বে। কুমোরটুলি হয়ে, রবীন্দ্র সরণি দিয়ে গণেশ টকিজে পৌঁছে শেষ হয় মিছিল। আরও কিছু ক্ষণ ছিল জমায়েত। মিছিলে বেশ কিছু ক্ষণ অবরুদ্ধ হয় বি কে পাল অ্যাভিনিউ ও রবীন্দ্র সরণির সংযোগস্থল। রবীন্দ্র সরণিতে দীর্ঘক্ষণ আটকে ছিল স্কুলবাস, ট্রাম।

গণেশ টকিজে সমাবেশ চলাকালীন থমকে যায় মহাত্মা গাঁধী রোডের একাংশও। পোড়ানো হয় নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল। আর এই পুরো মিছিল-সমাবেশের চাপ পড়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে। ফলে শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটিতেও যানজটে আটকে যায় বহু গাড়ি। সূত্রের খবর, এ দিন এই মিছিলটি চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়েই করার কথা ছিল। সাধারণের দুর্ভোগের কথা ভেবেই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে না করে রবীন্দ্র সরণি দিয়ে মিছিলটি করা হয়েছে।

বেলা দেড়টা নাগাদ বেলেঘাটা রোড-সিআইটি রোড সংযোগস্থলে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে গণ-অবস্থান করেন পরেশ পাল। সেখান থেকে তাঁর নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ-ছ’শো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নারকেলডাঙায় বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান এক ঘণ্টা ধরে। দিলীপ ঘোষের ‘কু-কথা’র বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। কিন্তু এই কর্মসূচিতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেনি বলে দাবি পরেশবাবুর।

এ দিকে, ভর দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ব্যস্ত বিটি রোডেও অবরোধ চালায় তৃণমূল সমর্থকেরা। এর জেরে শ্যামবাজার থেকে শুরু করে গোটা বিটি রোডে যান চলাচল কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। আশপাশে বেলগাছিয়া, পাইকপাড়া, কাশীপুরের পথঘাটও থমকে যায়। তুমুল সঙ্কটে পড়েন সাধারণ মানুষ। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অসুস্থ রোগী— যানজটে থেমে থাকতে হয়েছে সবাইকে। যানজট এড়াতে সিঁথি অঞ্চলের বিভিন্ন গলি দিয়ে বেলগাছিয়া বা পাইকপাড়ায় বেরোতে শুরু করে বহু গাড়ি। ফলে কিছু ক্ষণের মধ্যে গলিগুলি আটকে যায়। অটো এবং রিকশা চলাও দুষ্কর হয়ে পড়ে।

রবীন্দ্রভারতীর বিটি রোড ক্যাম্পাসের তৃণমূলপন্থী কর্মী ইউনিয়ন ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে রাস্তা অবরোধ শুরু হয় বেলা ১২টা ২০ নাগাদ। চলে বেলা ১টা পর্যন্ত। রাস্তায় শুয়ে, বাসের মাথায় চড়ে মোদী বিরোধী স্লোগান চলতে থাকে। সিঁথি-কাশীপুর-বরাহনগর থানার পুলিশকর্তারা ঘটনাস্থলে থাকলেও অবরোধের সামনে তাঁরা কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে ছিলেন। বরং কখনও তাঁরা অবরোধকারীদের কাকুতিমিনতিও করেছেন। শেষে স্থানীয় বিধায়ক মালা সাহা ও এলাকার কিছু নেতার ফোন আসে অবরোধকারীদের কাছে। তার পর অবরোধ ওঠে।

শাসক দল প্রভাবিত বিভিন্ন ইউনিয়নের মিছিল, সভা, সমাবেশের প্রভাবে দুপুরের পরে বেশ কিছু ক্ষণে অচল হয়ে যায় এসপ্ল্যানেডের ডোরিনা ক্রসিংও। এর জেরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, চৌরঙ্গি রোড, লেনিন সরণি, এসএন ব্যানার্জি রোড-সহ মধ্য শহরের একাধিক রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়ে যায় বলে ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পার্ক সার্কাস মোড় থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প মালিক-শ্রমিক সংগঠনের হাজার তিনেক লোকের মিছিল এসএন ব্যানার্জি রোড ধরে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পৌঁছয়। সেখানে সারা দুপুর সভা চলে। ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, পার্ক সার্কাস, মল্লিক বাজার, রফি আহমেদ কিদওয়াই রোড, এসএন ব্যানার্জি রোডে থেমে যায় গাড়ি। একই সময়ে অবরোধ চলে হাজরা মোড়েও। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা একজোট হয়ে মোদীর কুশপুতুল পোড়ান।

এই যানজট ছাড়তে না ছাড়তেই ওয়াই চ্যানেলের সামনে থেকে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির হাজার খানেক লোকের মিছিল এসপ্ল্যানেড চত্বর ঘুরে ডোরিনা ক্রসিংয়ে জমায়েত হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে শ্রমিক নেতা তথা রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সভার শুরুতেই বলেন, ‘‘আপনারা রাস্তা ছেড়ে দিন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আছে রাস্তা আটকে সভা করা যাবে না। গাড়ি যাওয়ার পথ করে দিন।’’

শ্রমিক নেতার এই অনুরোধের মধ্যেই এসএন ব্যানার্জি রোড ধরে আইএনটিটিইউসির প্রভাবিত ঠিকা শ্রমিকদের একটি ইউনিয়নের শ’দেড়েক লোকের মিছিল এসে ডোরিনা ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এর পরে ডোরিনাতেই তাঁরা রাস্তা আটকে প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ান। ফলে গোটা ধর্মতলা চত্বরে থমকে যায়।

এ দিন সকালে সাড়ে এগারোটা নাগাদ শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় মল্লিকপুরে ট্রেন অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মী-সমর্কেরা। প্রায় আধঘণ্টা ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

blockade TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE