রক্ষণাবেক্ষণ: শিয়ালদহ উড়ালপুল থেকে তোলা হবে পিচের অতিরিক্ত আস্তরণ। নিজস্ব চিত্র
মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞেরা সেতুর উপরের পিচের পুরু আস্তরণকে চিহ্নিত করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, পিচের পুরু আস্তরণ দেওয়ায় উড়ালপুলের ওজন বেড়ে গিয়েছিল। সেই ভার রাখতে না পেরে সেটি ভেঙে পড়ে। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সম্প্রতি নগরোন্নয়ন দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কেএমডিএ নির্মিত কয়েকটি উড়ালপুলের উপর থেকে পিচের পুরু আস্তরণ ছেঁটে ফেলা হবে। ভবিষ্যতে আর কোনও সেতু ভেঙে যাতে বিপর্যয় না ঘটে, সে কারণেই রাজ্য সরকারের এমন উদ্যোগ।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘শহর এবং শহরতলির উড়ালপুলগুলি রক্ষণাবেক্ষণের সময়ে কোথাও পিচের মোটা আস্তরণ থাকলে তা যাতে ছেঁটে ফেলা হয়, কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে ওই উড়ালপুলগুলিতে পিচ দেওয়ার জন্য ‘সিঙ্গল ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট’ ব্যবহার করা হবে।’’
কেএমডিএ-র আধিকারিকদের একাংশ জানান, রাস্তা টেকসই করতে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট ব্যবহার করা হয়। কারণ ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টে চুনাপাথর থাকায় তা জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কিন্তু বিটুমিন দিয়ে পিচ করলে সেটি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাঁরা জানিয়েছেন, দূষণ ঠেকাতে বাইরে থেকে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের আস্তরণ তৈরি করে উড়ালপুলগুলিতে দেওয়া হবে।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, শহর এবং শহরতলিতে কেএমডিএ-র তৈরি যে সব উড়ালপুল রয়েছে, মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পরে সেগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কোথায় মেরামতি প্রয়োজন, সেই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী। তার পরেই বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি কমিটি গড়ে উড়ালপুলগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে আটটি উড়ালপুল মেরামতি করা হবে।
কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানান, আপাতত শিয়ালদহ উড়ালপুল, ইএম বাইপাসের অম্বেডকর সেতু এবং গৌরীবাড়ির অরবিন্দ সেতু থেকে পিচের মোটা আস্তরণ ছাঁটা হবে। পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি উড়ালপুলে মেশিন ব্যবহার করে এই কাজ করা হবে। সেতু-বিশেষজ্ঞ তথা কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন নগর স্থপতি দীপঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘যে কোনও সেতু বা উড়ালপুল তৈরির সময়ে সেটি কতটা ওজন ধরে রাখতে পারবে, তা ঠিক করতে হয়। বারবার পিচ দেওয়ার ফলে উড়ালপুলের ওজন নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার কাঠামো। ফলে যে কোনও সময়ে সেটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে।’’ দীপঙ্করবাবু জানান, শহরের রাস্তায় বহু দিন আগেই মোটা পিচের আস্তরণ কেটে রাস্তা নিচু করার কাজ শুরু করেছে পুরসভা।
কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ জানান, রাস্তা মেরামতির সময়ে তাতে বারবার পিচের আস্তরণ দেওয়া হয়। ফলে রাস্তার উচ্চতা, সংলগ্ন বাড়িগুলির ভিতের থেকে বেশি হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই জল ঢুকে যায় বাড়িতে। যাতে ক্ষতি হয় নিকাশির। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা নীলাংশু বসু বলেন, ‘‘২০১৪ সালে প্রথম ‘মিলিং মেশিন’ ব্যবহার করে রাস্তার উপরে পিচের আস্তরণ কাটা শুরু হয়। পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে ওই কাজ হয়েছিল প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড এবং গল্ফগ্রিনে। পরে অন্য জায়গাতেও এই কাজ হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy