ভরদুপুরের ব্যস্ত ধর্মতলার মোড়। গাড়ি-ঘোড়া সামলাতে নাকাল হওয়া ট্রাফিক সার্জেন্ট খেয়াল করলেন, নিউ মার্কেট, ময়দান মার্কেট থেকে জনা কয়েক তরুণ-তরুণী সোজা হেঁটে আসছেন রাস্তার দিকে। চোখ আটকে স্মার্টফোনে! দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়া গাড়ির মাঝখানে এসে ওঁরা পড়লে যে কোনও সময়েই ঘটে যেতে পারে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা।
খাস কলকাতায় অবশ্য এখনও এমন়টা হয়নি। কিন্তু সাইবার জগতে আসা নতুন খোলা ‘পোকেমন গো’-র সুবাদে বিদেশে কিন্তু দুর্ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে। সেই সব ছবি-খবরও ছড়িয়ে পড়ছে নেটে। খাস কলকাতা-সহ এ দেশেও যে ভাবে ‘পোকেমন গো’ নিয়ে উন্মাদনা শুরু হয়েছে, তাতে তেমনই দুর্ঘটনার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে।
চলতি মাসেই সাইবার জগতে আত্মপ্রকাশ করেছে এই খেলা। এত দিন ক্যান্ডিক্রাশ বা ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান-এ মজে থাকা কিশোর-তরুণেরা নেমে পড়েছেন নতুন খেলা ডাউনলোড করতে। প্রাথমিক ভাবে আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য এই খেলা বাজারে এলেও ব্যবহারকারীরা বলছেন, অ্যাপল-স্টোর বা গুগল প্লে থেকে তা মিলছে না। ডাউনলোড হচ্ছে অন্য কিছু সাইট থেকে।
এ নিয়ে উন্মাদনাও তুঙ্গে। পরিস্থিতি এমনই যে গুগলে ‘হাউ টু প্লে’ লিখলেই তার সঙ্গে চলে আসছে ‘পোকেমন গো’।
নতুন এই খেলা নিয়ে এত উন্মাদনা কীসের? কেনই বা এটি খেলায় বিপদের আশঙ্কা? পোকেমন কার্টুন হিসেবে বেশ কিছু বছর ধরেই জনপ্রিয়। তার সঙ্গে জুড়েছে এই খেলার কৌশলও। এই খেলায় জুড়ে রয়েছে গুগল ম্যাপ ও ভার্চুয়াল জগত। ডাউনলোড করার পরে ফোনের জিপিএস চালু করলে গেমের সার্ভার খেলোয়াড়ের অবস্থান জেনে নেয়। এলাকার মানচিত্র অনুযায়ী বলে দেওয়া হয় কোথায় রয়েছে পোকেমন। সেখানে পৌঁছে ক্যামেরা চালু করলেই পোকেমনের ছবি মিলবে। সেটিকে বল মেরে ধরতে হবে। একই পুরস্কার নিতে আসবে একাধিক খেলোয়াড়। যে আগে পৌঁছতে পারবে, সে-ই জিতবে পুরস্কার।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও পোকেমন নিয়ে মেতে উঠেছে শহর। নিত্যনতুন স্টেটাসে ভরে উঠছে ফেসবুক। যেমন মেডিক্যাল ছাত্র অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়ালে লেখা, ‘‘পরীক্ষার আগে রাস্তায় রাস্তায় পোকেমন ধরে বেড়াতে হলে আস্তিক হওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’ কেউ কেউ আবার পোকেমন ধরতে ধরতে ক্লাসে যাওয়ার ইচ্ছেও জানিয়েছেন। ছড়াচ্ছে কৌতুক-কার্টুনও। যেমন এক ব্যক্তি পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরে কাঁচুমাচু মুখে বলছেন, ‘‘পোকেমন ধরতে গিয়েই প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ঢুকে পড়েছিলাম।’’ কখনও বা অমিতাভ বচ্চনের রাগী মুখে ছেলেকে প্রশ্ন, ‘‘ক’টা পোকেমন ধরলে?’’
এই মজার মধ্যেও বিপদের আশঙ্কা কিন্তু উড়িয়ে দিচ্ছেন না পোকেমন-প্রেমীরা। ফেসবুকেও ছড়াচ্ছে সতর্কতা। কলকাতার পথ-ঘাটে মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে পোকেমন ধরতে গিয়ে যে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তা মেনে নিয়ে কলেজ-ছাত্র অগ্নিভ পাহাড়ি বলছেন, ‘‘ডাউনলোড করার পরে এক বারই খেলেছি।’’ পুলিশ অফিসারেরাও বলছেন, শহরে লোকজন ফোনে কথা বলতে বলতে পথে হাঁটেন, গাড়ি চালান। বিপদের তোয়াক্কা করেন না। তার সঙ্গে জুড়েছে সেলফি হুজুগও। এর পরে যদি লোকে পোকেমন ধরতে রাস্তায় নামে, বিপদ বাড়বেই। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘রাস্তাতেও নামতে হবে না। বিপদ ঘটানোর জন্য ভিড়েঠাসা ফুটপাথ দিয়ে খেলতে খেলতে হাঁটাটাই যথেষ্ট।’’ তা হলে উপায় কী? পুলিশকর্তারা বলছেন, খেলা তো আটকানো যাবে না। কিন্তু পথঘাটে খেললে যে বিপদ হতে পারে, তা বোঝাতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy