ছোডুপ লেপচা।
পার্ক সার্কাসের পরে ভারতীয় জাদুঘর। দু’মাসের মধ্যেই আবার উর্দিধারীর গুলিতে প্রাণ গেল কলকাতায়। কিন্তু এখনও পুরনো ঘটনার চার্জশিটই জমা পড়ল না আদালতে। ফলে পরিষ্কার হয়নি, কী কারণে পার্ক সার্কাসের কাছে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে শেষে নিজের ছোড়া গুলিতেই প্রাণ হারিয়েছিল কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর পঞ্চম ব্যাটালিয়নের কর্মী ছোডুপ লেপচা। তাঁর গুলিতে মৃত্যু হয় এক তরুণীর, আহত হন আরও দু’জন। শনিবার সন্ধ্যায় জাদুঘরের ঘটনা শুনে কালিম্পংয়ের প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে গ্রামের বাড়ি থেকে তার পরিবারের সদস্যরা ফোনে বলেন, ‘‘কিসের চাপে বার বার এমন ঘটছে সেটা জানা দরকার। এই ঘটনায় হয়তো জানাও যাবে। কিন্তু আমাদেরটা জানব কার থেকে? ছোডুপই তো নেই।’’
শনিবার সন্ধ্যায় জাদুঘরে একের পর এক গুলি চলার শব্দ শোনা যায়। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিয়োরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) এক কর্মী এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে ছুড়তে এক সহকর্মীকে মেরে ফেলেছে। আহত হয়েছেন আর এক সহকর্মীও। মুহূর্তে অনেকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে গত ১০ জুন পার্ক সার্কাসে বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের কাছের ঘটনা।
ওই দিন উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তার কাজে যুক্ত ছিল ছোডুপ। সেখান থেকে বেরিয়ে লোয়ার রেঞ্জ রোডের একটি বাড়িতে উঠে যায় সে। নেমে এসে রাইফেল উঁচিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। লোয়ার রেঞ্জ রোডের চারমাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছোড়া সেই গুলিতে মৃত্যু হয় মোটরবাইক আরোহী রিমা সিংহ নামে এক তরুণীর। আহত হন মোটরবাইকের চালকও। এর পরে ছোডুপ নিশানা করে আরও কয়েক জনকে। পরে পুলিশ ছ’রাউন্ড গুলি চলেছে বলে দাবি করলেও স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী অন্তত ১৬ থেকে কুড়ি রাউন্ড গুলি চলেছিল ওই দিন। কিন্তু কেন এমন ঘটাল ওই পুলিশকর্মী, তা পরিষ্কার হয়নি। ঘটনাস্থলে এক পুলিশকর্তা সরাসরি ছোডুপের মানসিক সমস্যা রয়েছে বলে দাবি করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ কথা বলে ছোডুপের পরিবারের সঙ্গে। ছোডুপের দাদা এবং বৌদি কলকাতায় আসেন। তাঁরা অবশ্য ওই পুলিশকর্মী কোনও মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন না বলে দাবি করেন।
ছোডুপের বাড়ি কালিম্পং শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে টাকনা গুম্বা গাঁওয়ে। সেখানেই দাদা-বৌদি এবং দুই বোনের সঙ্গে থাকত ছোডুপ। বাবা ফুরদেন শেরিং লেপচা ছিলেন কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক কনস্টেবল। কর্মরত অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হওয়ায় গত বছরের অগস্টে পুলিশে চাকরি পান ছোডুপ। কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর পঞ্চম ব্যাটালিয়নে যুক্ত হলেও ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে তাকে পাঠানো হয় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের কাজে।
ছোডুপের বৌদি প্রমীলা প্রধান এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশের কাছে সব জানিয়েছি। এ বার পুজোর সময়ে ফিরলে বিয়ের কথা পাকা হবে বলে ঠিক ছিল। মেয়েও দেখা হয়ে গিয়েছিল।’’ প্রমীলা বলে চলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুর পরে ও এখানেই থেকে যেতে চেয়েছিল। আমরাই জোর করে কাজে পাঠাই। হয়তো সেটাই কাল হল।’’
ছোডুপের বোন অংমিত লেপচা আবার বললেন, ‘‘এ দিনই আমরা কলকাতায় আবার গুলি চলার ঘটনা শুনলাম। এক পুলিশকর্মীকে ফোনও করেছিলাম, কিন্তু তিনি ধরেননি। দাদার ঘটনাটা কেন ঘটেছিল সেটা আজও জানতে পারিনি। পুলিশও কিছু বলতে পারেনি।’’
তদন্তে কী বেরোল? ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা লালবাজারের এক অফিসার বললেন, ‘‘ক’টা গুলি চলেছিল এবং কী ভাবে সবটা ঘটানো হয়েছিল তার একটা স্পষ্ট চিত্র তদন্তে পাওয়া গিয়েছে। তবে যে হেতু এই ঘটনায় মূল অভিযুক্তই মৃত, তাই এর বেশি কিছু জানা যায়নি। দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হবে।’’
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় যদিও বললেন, ‘‘এই মামলার এখনও বহু দিক দেখা বাকি। কেউ গুলি চালিয়ে লোক মারল এবং তার পর নিজের ছোড়া গুলিতেই মারা গেল, এই ঘটনায় কোনও প্ররোচনা ছিল কি না, সেটা দেখা দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy