মান্ধাতার আমলের ডাক-ব্যবস্থার ভোল বদলাতে শহরের বড় ডাকঘরগুলোয় আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা হচ্ছে। কোর ব্যাঙ্কিং সলিউশন (সিবিএস) ও পরিকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত ডাককর্মীদের সেভিংস ব্যাঙ্কে পেনশন দেওয়া হবে। রাজ্যে ডাকঘরের সিবিএস পরিষেবা শুরু হবে টালিগঞ্জ ডাকঘর দিয়ে। পর্যায়ক্রমে হবে শহরের অন্য বড় ডাকঘরেও। শুরু হয়েছে প্রস্তুতিও।
সিবিএস চালু হলে ব্যাঙ্কের মতো ডাকঘরের গ্রাহক এটিএম কার্ডের সুযোগ পাবেন। ডাকঘরের হিসেব কম্পিউটার-নিয়ন্ত্রিত হলেও তা ‘লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক’ অর্থাত্, ‘ল্যান’-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ডাকঘরে সীমাবদ্ধ। সিবিএস চালু হলে গ্রাহক কম্পিউটারে ‘ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক’ -এর মাধ্যমে সিবিএস-নিয়ন্ত্রিত অন্য ডাকঘর থেকেও পরিষেবা পাবেন। চিফ পোস্ট মাস্টার জেনারেল বেঙ্গল সার্কল অরুন্ধতী ঘোষ বলেন, “টালিগঞ্জ ডাকঘরে ডিসেম্বরে শুরু হবে প্রাথমিক কাজ। এক-একটি ডাকঘরে বছর খানেক এই পরীক্ষা হয়। এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ডাকঘরের গ্রাহকদের এটিএম কার্ড দেওয়া হবে।” তিনি বলেন, এই পরিষেবার সুফল দ্রুত অন্য বড় ডাকঘরে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে।
রেল, টেলিকম-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার সিংহভাগ অবসরপ্রাপ্তের পেনশন ডাকঘরে সেভিংস ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দেওয়া হয়। কলকাতায় পার্ক স্ট্রিট, বড়বাজার, জিপিও, আলিপুর, ব্যারাকপুর প্রভৃতি ডাকঘরের কিছু অবসরপ্রাপ্ত ডাককর্মীর প্রাপ্য ভাতা সরাসরি জমা হয় তাঁদের সেভিংস ব্যাঙ্কে। কিন্তু এই সব ডাকঘরে বাকি অবসরপ্রাপ্ত এবং অন্য ডাকঘরগুলোয় অবসরপ্রাপ্ত সব ডাককর্মীকে এই ভাতা নিতে প্রতি মাসে গরমে, কম পরিসরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, কিছু ক্ষেত্রে ফুটপাথেও।
পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষে প্রথমে শহরের ছোট-বড় নানা ডাকঘরে সেভিংস ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আরও বেশি অবসরপ্রাপ্ত ডাককর্মীকে পেনশন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন ডাক-কর্তৃপক্ষ। সিপিএমজি বলেন, “এ ব্যাপারে পেনশনভোক্তাদের একটা বড় অংশের অনীহা লক্ষ্য করা গিয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে অর্থাত্, ব্যাক্তিগত ভাবে টাকা নিতেই অধিকাংশ বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত বেশি স্বস্তিবোধ করেন। ওঁরা যাতে সেভিংস ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পেনশন নিতে আশ্বস্ত ও নিশ্চিন্তি বোধ করেন, তাই কিছু ডাকঘরে পর্যায়ক্রমে সচেতনতা শিবিরেরও ব্যবস্থা হচ্ছে।” এই সঙ্গে পেনশনভোক্তাদের সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলছেন ডাক-কর্তারা।
শহরের বড় ডাকঘরের পরিকাঠামো উন্নত করতে ক’বছর ধরেই ‘প্রোজেক্ট অ্যারো’ প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সংস্কার ও মেরামতির অভাবে বেশ কিছু ভাড়ার ডাকঘরের বেহাল দশা। বিপদও ঘটছে কিছু ক্ষেত্রে। তা স্বীকার করে অরুন্ধতী ঘোষ বলেন, “মোট ডাকঘরের ৮৭ শতাংশই ভাড়া বাড়িতে। এগুলোয় পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য সুদূরপ্রসারি কিছু রূপায়ণে সমস্যা হয়। বেশ কিছু পুরনো ভবনের মালিকানা নিয়ে আইনি সমস্যা আছে। যেখানে নেই, সেখানে মালিকদের সঙ্গে মেরামতি নিয়ে কর্তৃপক্ষ কথা বলছেন। সরকার সংস্কারের জন্য এ রকম ডাকঘরপিছু বছরে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy