Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বাড়ি গেলেন অসুস্থ উপাচার্য, শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ

সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ঘেরাও উঠল না সকালেও। ছাত্রদের বিক্ষোভে রাতভর অফিসেই আটকে রইলেন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। তাঁর সঙ্গে আটকে রইলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার-সহ একাধিক আধিকারিক। টানা প্রায় ২৪ ঘণ্টা ঘেরাওয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন উপাচার্য। অসুস্থ উপাচার্যকে শনিবার সকালে দেখে যায় মেডিক্যাল টিম। দুপুরে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও সন্ধ্যায় ফের অসুস্থ বোধ করেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া।

অসুস্থ উপাচার্যের ঘরে মেডিক্যাল টিম।

অসুস্থ উপাচার্যের ঘরে মেডিক্যাল টিম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৫ ১১:৩৭
Share: Save:

সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ঘেরাও উঠল না সকালেও। ছাত্রদের বিক্ষোভে রাতভর অফিসেই আটকে রইলেন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। তাঁর সঙ্গে আটকে রইলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার-সহ একাধিক আধিকারিক। টানা প্রায় ২৪ ঘণ্টা ঘেরাওয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন উপাচার্য। অসুস্থ উপাচার্যকে শনিবার সকালে দেখে যায় মেডিক্যাল টিম। দুপুরে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও সন্ধ্যায় ফের অসুস্থ বোধ করেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। বাড়ি যেতে চান তিনি। আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা অবশ্য তাঁকে যেতে দেন। তবে তাঁদের অবন্থান-বিক্ষোভ চলবে বলে জানিয়েছে পড়ুয়ারা।

এ দিন জঙ্গি ছাত্র আন্দোলনের মধ্যেই হয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। শুক্রবারই পড়ুয়াদের বিক্ষোভের সামনে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় শনিবারও। বিক্ষোভ এড়াতে এ দিন নিজের গাড়ি ছেড়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর গাড়িতে ওঠেন শিক্ষামন্ত্রী। সমাবর্তন অনুষ্ঠান বয়কট করবে বলে আগেই জানিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। প্রথমে রাজ্যপালের গাড়িকে ঘেরাও করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলেও গাড়িতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দেখে মত বদলায় আন্দোলনকারীরা। ফলে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যপাল এবং শিক্ষামন্ত্রী। পুলিশের সহায়তায় কোনও ক্রমে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পৌঁছন তাঁরা।


উপাচার্যের ঘরেই চলছে বিক্ষোভ।

মাস কয়েক আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলনের রেশ চলেছিল বহু দিন ধরে। যার ফলে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন তদানীন্তন উপাচার্য অভিজিত্ চক্রবর্তী। এ বার সেই যাদবপুর কাণ্ডেরই যেন ছায়া দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্সিতে। এ ক্ষেত্রেও ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদেরই একাংশ। এবং উপাচার্যকে দায়ী করা হয়েছে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকার জন্য। সেই অভিযোগেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলেন ছাত্রদের একাংশ।

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সকালে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এ দিনই প্রথম বার প্রেসিডেন্সি আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর আসার আগে থেকেই বছর তিনেকের পুরনো একটি ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন পড়ুয়াদের একাংশ। বিক্ষোভের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার সময়ে তাঁর দিকে কয়েক জন আন্দোলনকারী যেতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় তাঁদের। এর পরেই পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে উপাচার্যকে ঘেরাও শুরু করে আন্দোলনকারীরা।

রাতভর ঘেরাওয়ের পরেও অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড় উপাচার্য। তাঁর দাবি, “ওরা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেছে, তার জন্য আমি কন পদত্যাগ করতে যাব? পুলিশ এসেছিল ভিআইপিদের নিরাপত্তার খাতিরে। আমি পুলিশ ডাকিনি। গত এক বছর চার মাস ধরে বিভিন্ন ভাবে আমাকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমি কোনও দিনই পুলিশ ডাকিনি, আজও ডাকব না।” আন্দোলনকারীদের অবশ্য দাবি, উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢোকা অসম্ভব।

তবে ক্যাম্পাসে না ঢুকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কিন্তু মোতায়েন রয়েছে প্রচুর পুলিশ। গেটের বাইরে আলাদা ভাবে সভা করেছে এসএফআই এবং টিএমসিপি। মহাত্মা গাঁধী রোড এবং কলেজ স্ট্রিট ক্রসিংয় কিছু ক্ষণ অবরোধ করে এসএফআই।

এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা সমাবর্তন অনুষ্ঠান বয়কট করার কথা বললেও অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার বিষয়ে অনড় উপাচার্য। এমনকী ছাত্রদের একটা বড় অংশও অনুষ্ঠানে থাকতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি। এ দিন অবশ্য বেশ কিছু ছাত্রকে উপাচার্যকে ঘেরাও করে রাখার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা গিয়েছে।

তবে এখনও আন্দোলন থামার কোনও লক্ষণ নেই। উপাচার্যের ঘরের বাইরে তো বটেই, ভিতরেও বসে রয়েছেন বেশ কয়েক জন আন্দোলনকারী। চলছে স্লোগান। উপাচার্যের পদত্যাগ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE