প্রস্তুতি: বৃষ্টির মধ্যেই কোনও রকমে চলছে মণ্ডপ বাঁধার কাজ। রবিবার, দেশপ্রিয় পার্কে। নিজস্ব চিত্র
পূর্ব কলকাতার একটি পুজোর উদ্যোক্তারা মণ্ডপের ঢাকা জায়গায় টাঙিয়ে রেখেছেন বিশাল মাপের ক্যালেন্ডার। তাতে লাল-নীল-সবুজ দাগ দেওয়া। লাল, অর্থাৎ, ওই দিনের মধ্যে যে কাজ হওয়ার কথা ছিল তা হয়েছে কি না। নীল, অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রা। আর সবুজ মানে যে কাজ হয়ে গিয়েছে। রবিবার গিয়ে দেখা গেল, যে সব কাজে এত দিনে সবুজ দাগ পড়ে যাওয়ার কথা, তার অধিকাংশতেই লাল দাগ। অর্থাৎ, দিন পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি।
রাস্তায় জল জমেনি। ছুটির দিন থাকায় পথে যানবাহন জটও পাকায়নি। কিন্তু, শনিবার থেকে নাগাড়ে বৃষ্টিতে পুজোর উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত। সামনে মাত্র আর একটা মাস। এ ভাবে বৃষ্টি হলে কী ভাবে যে কাজ শেষ হবে, বুঝেই উঠতে পারছেন না তাঁরা। যাঁরা মণ্ডপের কাজে প্লাইউড ব্যবহার করছেন, সেই উদ্যোক্তাদের সমস্যা আরও বেশি। কোথাও কোথাও বৃষ্টির জলে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে প্লাইউড।
সেপ্টেম্বরে পুজো বলে বৃষ্টি যে হবেই, তা ধরে নিয়ে এ বার পুরো মণ্ডপের জায়গা ঘিরে কাজ শুরু করেছেন অনেকে। সব প্রস্তুতি পুজোর ১০টি দিন ধরে। কিন্তু প্রস্তুতির সময়ে যে বৃষ্টি এ ভাবে ভোগাবে, তা ভাবতে পারেননি ওই উদ্যোক্তারা। একেই জুলাই মাসে লাগাতার বৃষ্টিতে ঠিক সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। তার উপরে অগস্টের এই বৃষ্টি সমস্যায় ফেলেছে উদ্যোক্তা থেকে শুরু ডেকরেটরের কর্মীদের।
এর সঙ্গে বাড়তি সমস্যার সৃষ্টি করেছে কলকাতায় হানা দেওয়া জ্বর। বহু মণ্ডপেই নিয়মিত চিকিৎসকের আনাগোনা চলছে। কারণ? ডেকরেটরের কর্মীরা জ্বরে কাবু। দক্ষিণের একটি পুজোর উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘ডেকরেটরের পাঁচ জন কর্মীর জ্বর। আমরাই ওঁদের ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ দিচ্ছি। বাড়ি ছাড়তে সাহস পাচ্ছি না। কারণ এক বার গেলে আর না-ও ফিরতে পারেন অনেকে।’’
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির ভয় দেখাচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত
উত্তর কলকাতার এক পুজো উদ্যোক্তা বলছেন, ‘‘এ বার পুজো এক মাস এগিয়ে আসায় বর্ষার কথা ভেবে মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরুই করেছি মাথার উপর বড় ত্রিপল টাঙিয়ে। খরচ হয়েছে প্রায় দু’লক্ষ টাকা। কিন্তু এ ভাবে নাগাড়ে বৃষ্টিতেও কাজ চালানো সমস্যা হচ্ছে।’’
দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোর কাজই বন্ধ রয়েছে। ওই পুজোর এক সদস্যের কথায়, ‘‘দশ দিন আগে আমাদের প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য শনিবার থেকে কিছুই করা যায়নি।’’ বেহালার এক পুজো উদ্যোক্তা আবার জানাচ্ছেন, ‘‘মাথার উপরে বিশাল মাপের ত্রিপল টাঙিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। রোদ না উঠলে প্লাস্টার অব প্যারিসের তৈরি মডেল শুকোচ্ছেই না।’’
একটানা বৃষ্টিতে দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজো মণ্ডপে ডাঁই করে রাখা প্লাইউড ফুলে-ফেঁপে একাকার। ওই পুজোর উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘প্লাইউড ভিজে যাওয়ায় কোনও কাজই করা যাচ্ছে না। সব থমকে রয়েছে। জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতি তো হচ্ছেই, পাশাপাশি পুজো এক মাস এগিয়ে আসায় বৃষ্টির কথা ভেবে টেনশন হচ্ছে।’’
ট্যাংরার একটি পুজো কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘জিএসটি-র জন্য এমনিতেই সব কিছুতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। তার উপরে মাথার উপরে ত্রিপল টাঙানো মানে কয়েক লক্ষ টাকা বাড়তি খরচ। এই মুহূর্তে বরুণ দেবতার উপর ভরসা করা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় নেই। যা পরিস্থিতি, অবিলম্বে বৃষ্টি না থামলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।’’
উত্তর কলকাতার এক পুজো উদ্যোক্তার সমস্যা আবার অন্য। ওই মণ্ডপ তৈরির জন্য অসম থেকে আনা হয়েছে সাত হাজার বাঁশ। ওই পুজো কমিটির এক কর্তার কথায়, ‘‘বাঁশের খাঁজে জল জমে ডেঙ্গির মশা জন্মায়। অতীতে এখানে ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল। আমরা ডেঙ্গি-আতঙ্কে রয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy