Advertisement
০১ জুন ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

সংক্রমণ কমলেও সংযমে ছাড় নয়, সতর্ক করছেন ডাক্তারেরা

বঙ্গে করোনা সংক্রমণের লেখচিত্র ফের নিম্নমুখী হতে শুরু করতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসক, সংক্রমণ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

বিধিভঙ্গ: সংক্রমণে রাশ টানতে সরকারি বিধিনিষেধের কড়াকড়ি এখনও চলছে। তবু শিয়ালদহের কোলে মার্কেটে দূরত্ব-বিধি মেনে চলার পরোয়া না করেই উপচে পড়েছে ভিড়। সোমবার।

বিধিভঙ্গ: সংক্রমণে রাশ টানতে সরকারি বিধিনিষেধের কড়াকড়ি এখনও চলছে। তবু শিয়ালদহের কোলে মার্কেটে দূরত্ব-বিধি মেনে চলার পরোয়া না করেই উপচে পড়েছে ভিড়। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২১ ০৫:৪৫
Share: Save:

দৈনিক সর্বোচ্চ আক্রান্তের নিরিখে প্রথম বারকে ছাপিয়ে গিয়েছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। কুড়ি হাজারের ঘরে পৌঁছে যাওয়া সেই সংখ্যাই শেষ কয়েক দিন ধরে আবার নামতে শুরু করেছে। ৩০ মে, অর্থাৎ রবিবার সেই সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ২৮৪।

১৭ দিন পিছিয়ে গেলে, গত ১৪ মে রাজ্যে এক দিনে করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন ২০৮৪৬ জন। যা দ্বিতীয় ঢেউয়ে সর্বোচ্চ। কিন্তু ঘটনা হল, বঙ্গে করোনা সংক্রমণের লেখচিত্র ফের নিম্নমুখী হতে শুরু করতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসক, সংক্রমণ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আর এই পরিস্থিতিতেই আমজনতার সামনে উঠে এসেছে বড় প্রশ্ন, উচ্ছ্বাস না দায়িত্বশীলতা? চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘করোনায় রাশ টানতে হলে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয়টাই ধরে রাখতে হবে। তা না-করে এখন যদি করোনা কমেছে বলে ফের নিয়ম ভাঙা শুরু হয়, তা হলে আবার বিপদ ধেয়ে আসতে বেশি সময় লাগবে না।’’

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৪ মে রাজ্যে করোনা পরীক্ষা হয়েছিল ৭০ হাজার ৫১ জনের। সে দিন পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছিল ২০ হাজার ৮৪৬ জনের। এর পর থেকেই করোনার দাপাদাপি কমতে শুরু করে। ২৭ মে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজারের নীচে (১৩০৪৬ জন) নেমে যায়। ওই দিন পরীক্ষা হয়েছিল ৫৭ হাজার ১৬৫ জনের। চিকিৎসকদের একাংশ জানিয়েছিলেন, যত ক্ষণ পর্যন্ত দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা পুনরায় ৭০ হাজারের ঘরে না পৌঁছচ্ছে এবং সে দিন কত জন সংক্রমিত হয়েছেন, তা দেখা যাচ্ছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত সংক্রমণ কমছে বলা ঠিক হবে না। গত ৩০ মে রাজ্যে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৭০ হাজার ৩১৫ জনের। যা গত ১৪ মে-র থেকেও বেশি। আর তাতে দেখা গিয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজারের ঘরে নেমে
গিয়েছে। দৈনিক পরীক্ষা ও আক্রান্তের সংখ্যার যদি আনুপাতিক হিসেব কষা হয়, তা হলে দেখা যাবে, ১৪ মে রাজ্যে টেস্ট পজ়িটিভিটি রেট ছিল ২৯.৮ শতাংশ। আর ৩০ মে সেটি ১৬.০৪ শতাংশ।

সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়ের কথায়, ‘‘কড়া বি ধিনিষেধ চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত কিন্তু সংক্রমণ কমছিল না, বরং প্রতিদিনই বাড়ছিল। ওই বিধি চালু হওয়ার পরেই সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। তাই নিয়ন্ত্রণ-বিধি উঠে গেলেও মানুষকে সংযত থাকতে হবে।’’ গত ১৫ মে থেকে রাজ্যে কড়া নিয়ন্ত্রণ-বিধি চালু হয়েছে। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত তা চলবে। বঙ্গে সংক্রমণে রাশ টানতে এই ধরনের বিধিনিষেধ জারি করা জরুরি হয়ে পড়েছিল বলেই মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে দৈনিক আক্রান্তের হারও অনেকটা কমেছে। যা আশাব্যঞ্জক, কিন্তু আত্মতুষ্টির কোনও কারণ নেই। বিধিনিষেধ ওঠার পরে যদি ফের করোনা-বিধি পালন করা না-হয়, তা হলে পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে পারে। একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে, গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের হার যেন বেড়ে না যায়।’’

আচমকা কেন কমছে সংক্রমণ? সেই বিষয়টি সকলেরই মাথায় রাখা উচিত বলে মনে করেন রাজ্যের কোভিড কেয়ার
নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা, চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘সংক্রমণের এই কমে যাওয়ার পিছনে আমাদের দায়িত্বশীল আচরণেরই ভূমিকা রয়েছে। কড়া নিয়ন্ত্রণ-বিধি বলবৎ হওয়ায় আমরা নিজেদের কিছুটা গুছিয়ে নিতে পারলাম।’’ প্রথম ঢেউয়ের পরে সকলে ভেবেছিলেন, করোনা চলে গিয়েছে। আর সেই সময়ে নিজেদের অগোছালো করে ফেলার জন্যই এ বার পরিস্থিতি এমন হয়েছিল বলে মত অভিজিৎবাবু-সহ অন্যান্য চিকিৎসকেরও।
প্রত্যেকেই বলছেন, ‘‘দেশে প্রতিষেধক প্রদান সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছতে এক বছরও সময় লাগতে পারে। তত দিন সকলকে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। না-হলে আবার নতুন ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Infection Coronavirus in West Bengal COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE