সচেতন: গরমে পথচারীদের শুধু জল পান করানোই নয়, রাস্তা নোংরা হওয়া আটকাতে সেই গ্লাস সংগ্রহ করে নিচ্ছে ছোটরা। শুক্রবার, বালিগঞ্জে। ছবি: সুমন বল্লভ।
গত এক সপ্তাহে রাজ্যে ৩৩ জন হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, তীব্র গরমে সতর্ক না হলে আগামী দিনে সমস্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। কারণ, শুধু রাস্তায় ঘোরাঘুরিতে নয়, বাড়িতে বদ্ধ পরিবেশে থাকলেও হিট স্ট্রোক হতে পারে।
তীব্র গরমে তাপজনিত অসুস্থতা নিয়ে এপ্রিলের শুরুতেই সতর্কতা জারি করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেই সময়ে নির্দিষ্ট পোর্টালে তাপজনিত অসুস্থতায় আক্রান্তদের তথ্য নথিভুক্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই গত এক সপ্তাহে ৩৩ জন অসুস্থের তথ্য আপলোড হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। যার বড় অংশই বিভিন্ন জেলার। যেখানে তাপপ্রবাহের মাত্রা বেশি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘অসুস্থেরা খুব সঙ্কটজনক হয়েছিলেন, তেমনটা নয়। প্রত্যেককেই চিকিৎসায় সুস্থ করা সম্ভব হয়েছে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হিট স্ট্রোক মূলত দুই রকমের হয়। ‘এক্সারশনাল’ অর্থাৎ, তীব্র রোদে দীর্ঘক্ষণ ঘোরাঘুরি বা পরিশ্রমের কারণে হিট স্ট্রোক এবং ‘ক্লাসিক বা নন এক্সারশনাল' অর্থাৎ, ঘরে থেকেও যে হিট স্ট্রোক হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের শিক্ষক-চিকিৎসক সুগত দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এক্সারশনাল হিট স্ট্রোকে অসম্ভব ঘাম হয়, কিন্তু ক্লাসিকের ক্ষেত্রে ঘাম বেশি হয় না। সেটা ঠিক সময়ে বুঝতে না পারলে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, বাড়িতে বদ্ধ ঘরে থাকার কারণে মানুষ ক্লাসিক হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আর, ষাটোর্ধ্ব, শিশু এবং কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎপিণ্ডের রোগে আক্রান্ত বা স্থূলকায়দের ওই ঝুঁকি অনেক বেশি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ঘরে থাকলেও শরীরে বাইরের তাপমাত্রার প্রভাব পড়ে। কিন্তু দেহের তাপ বাইরে বেরোতে পারে না। কারণ, বয়স্ক, শিশু এবং কোমর্বিডিটিতে আক্রান্তদের দেহের বাইরে তাপ বার করার প্রক্রিয়া এমনিতেই ঠিক থাকে না।
সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-তে দু’জন হিট স্ট্রোক আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে। ৫২ ও ৭৭ বছর বয়সের ওই দুই রোগীর অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে ভেন্টিলেশন দিতে হয়েছে। দু’জনেরই বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়েছিল। প্রবল গরম লাগা, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, গা বমি, ঘাম না হওয়া, পেশিতে ব্যথা, দুর্বলতার মতো সমস্যা হলেও বাড়িতে থাকার কারণে বেশির ভাগ সময়েই অধিকাংশ মানুষ এই উপসর্গগুলিকে তাপজনিত অসুস্থতার লক্ষণ বা হিট স্ট্রোকের পূর্বাভাস বলে বুঝতে পারেন না। তাতেই বড় সমস্যা তৈরি হয়। দেরিতে চিকিৎসা শুরুর ফলে প্রাণের ঝুঁকি দেখা দেয়।
হিট এগজ়শন থেকে হিট স্ট্রোকের দিকে যাওয়ার নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি বলেন, ‘‘তাপজনিত অসুস্থতায় ওই সব লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, তীব্র তাপে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ঠিক কাজ করে না। বেশি দেরি করলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হতে শুরু করবে।’’ তবে, যে কোনও হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রেই শরীর ঠান্ডা করার প্রক্রিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালু করা প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা এটাও বার বার জানাচ্ছেন, রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলেও ওই প্রক্রিয়া বন্ধ করা যাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy