উদ্ধার হওয়া কঙ্কাল। রবিবার।
একেই বাঁকুড়ার তরুণী আকাঙ্ক্ষা শর্মার ‘মমি’ ভোপালে উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় দেশ জুড়ে শোরগোল। ঠিক সেই সময়েই আবার কঙ্কাল-কাণ্ড কলকাতা শহরে। তবে রবিনসন স্ট্রিটের মতো গৃহস্থ বাড়িতে নয়, খাস পুলিশ আবাসন চত্বরে। রবিবার দক্ষিণ শহরতলির নেতাজিনগর এলাকায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডের গাছতলা পুলিশ আবাসন চত্বরে ওই কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওখানে দু’জন মানুষের দেহ পোঁতা ছিল।
এ দিন কলকাতা পুলিশের ওই আবাসন চত্বরে নিকাশি লাইনের কাজের জন্য মাটি খুঁড়তেই প্লাস্টিকে মোড়া দু’টি মাথার খুলি ও কিছু হাড়গোড় উদ্ধার হয়। স্বভাবতই ওই ঘটনায় গোটা তল্লাটে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ আবাসন চত্বরে কাদের দেহ, কেন ও কী ভাবে মাটিতে পুঁতে রাখা হল, তা নিয়ে ধন্দে লালবাজারের কর্তাদের একাংশও।
গাছতলার ওই পুলিশ আবাসনটি ১৯৫৯ সালে নির্মিত হয়েছে বলে আবাসন দফতর সূত্রের খবর। এ দিন উদ্ধার হওয়া মাথার খুলি, কঙ্কাল দেখে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, কঙ্কাল দু’টি বছর দশেকের পুরনো।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গাছতলা পুলিশ আবাসনে নিকাশি ও জলের লাইন তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চারপাশে মাটি খোঁড়ার কাজ চলছে। ওখানে ১৩টি ব্লক। এ দিন সকালে আবাসনের ‘ডি’ ব্লকে পাঁচিল লাগোয়া একটি পরিত্যক্ত ভ্যাট খুঁড়তেই প্লাস্টিকে মোড়া কঙ্কাল দেখতে পান ঠিকাদার নিযুক্ত কর্মীরা। তাঁরাই পুলিশ আবাসনের কেয়ারটেকার উত্তম মুখোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানান। উত্তমবাবু নেতাজিনগর থানায় খবর দেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে এলাকা ঘিরে দেয়।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডিসি (এসএসডি) ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, ‘‘যে এলাকা থেকে দু’টি মানুষের মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার হয়েছে, সেখানে আগে ভ্যাট ছিল। উদ্ধার হওয়া মাথার খুলি ও হাড় ফরেন্সিক তদন্তের জন্য পাঠানো হবে।’’
ঘটনাস্থলে উৎসুকদের ভিড়।
নিকাশি লাইনের জন্য রবিবার সকালে ডি ব্লকের পাশেই মাটি খুঁড়ছিলেন সন্দেশখালির বাসিন্দা কানাই দাস। তিনি বলেন, ‘‘সকাল ন’টা নাগাদ পরিত্যক্ত ভ্যাট খোঁড়াখুঁড়ি করতেই মাথার খুলি ও হাড় বেরোয়। এর পরে আমরা কাজ বন্ধ করে কেয়ারটেকারকে জানাই।’’ খবর পেয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে ভিড় জমান আবাসিকেরা।
এক আবাসিক অগ্নিদীপ দত্ত বলেন, ‘‘বছর খানেক আগে ভ্যাটটি বন্ধ হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর এখানে আছি। এখানে খারাপ কিছু কখনও ঘটতে দেখিনি, ঘটেছে বলেও শুনিনি। হঠাৎ করে মাটি খুঁড়ে মানুষের কঙ্কাল বেরোনোয় অনেকেই ভয় পেয়েছেন।’’
ওই আবাসনে ১০৪টি পরিবারের থাকার ব্যবস্থা। তবে বাড়িগুলির বেহাল দশার কারণে ও বিভিন্ন পরিষেবা পাওয়ার সমস্যা আছে বলে আবাসনের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ঘরই ফাঁকা। আবাসিকদের কয়েক জন জানান, বছর খানেক আগে আবাসনের চারপাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছে। যেখানে কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে, আবাসনের সেই ডি ব্লকের গা ঘেঁষেই পাঁচিল। ওখানেই দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট ছিল। আবাসিকদের একাংশের অভিযোগ, পরিত্যক্ত ভ্যাটের পাশে পাঁচিল দেওয়া হলেও তার উচ্চতা বুক সমান হওয়ায় আশপাশের বাসিন্দা থেকে শুরু করে আবাসিকদের একাংশ ওখানে এখনও আবর্জনা ফেলেন। কিন্তু আবর্জনার সঙ্গেই কঙ্কাল এসেছে, নাকি তা পোঁতা ছিল, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
(নিজস্ব চিত্র)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy