Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Surgery

মাংসপিণ্ডের বদলে হল কান, বালকের হাসি ফিরল চিকিৎসায়

নদিয়ার বাসিন্দা সঞ্জীব দেবনাথ ও ঝুমুর দেবনাথের একমাত্র সন্তান সৌম্যজিৎ জন্মগত ভাবে ‘মাইক্রোশিয়া’য় আক্রান্ত। অর্থাৎ, ওই বালকের কানের বাইরের অংশ ঠিক মতো তৈরিই হয়নি।

অস্ত্রোপচারের আগে (বাঁ দিকে), অস্ত্রোপচারের পরে (ডান দিকে)

অস্ত্রোপচারের আগে (বাঁ দিকে), অস্ত্রোপচারের পরে (ডান দিকে) নিজস্ব চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৫৭
Share: Save:

স্কুলে কিংবা খেলতে যেতে চাইত না ছোট ছেলেটি। গেলেও, বাড়ি ফিরে মায়ের কোলে মুখ গুঁজে খালি কাঁদত। প্রশ্ন করত, ‘আমার কি কান হবে না? সবাই আমায় দেখে হাসে।’ ছেলেকে সান্ত্বনা দিতেন বাবা-মা। সেই ছেলেরই পুরো কান তৈরি করে হাসি ফেরাল এসএসকেএম হাসপাতাল।

নদিয়ার বাসিন্দা সঞ্জীব দেবনাথ ও ঝুমুর দেবনাথের একমাত্র সন্তান সৌম্যজিৎ জন্মগত ভাবে ‘মাইক্রোশিয়া’য় আক্রান্ত। অর্থাৎ, ওই বালকের কানের বাইরের অংশ ঠিক মতো তৈরিই হয়নি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ১০ হাজার বাচ্চার মধ্যে ১ থেকে ৫ জনের জন্মগত এই ত্রুটি দেখা যায়। সৌম্যজিতের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, জন্মের পর থেকেই তার ডান দিকের কানের জায়গায় একটা ছোট্ট মাংসপিণ্ড ছিল। কোনও কথা খুব চেঁচিয়ে বলতে হত ওই বালককে। সঞ্জীব বলেন, “স্থানীয় বিভিন্ন চিকিৎসককে দেখালেও কেউ কোনও দিশা দেখাতে পারছিলেন না। রোজ ছেলেটা কাঁদত। শেষে কল্যাণীর হাসপাতাল থেকে আমাদের এসএসকেএমে যেতে বলে।”

সেখানেই পর পর দু’বার অস্ত্রোপচার করা হয় ওই বালকের। তার বাবা জানাচ্ছেন, ছ’বছর বয়সে সৌম্যজিৎকে প্রথমে পিজিতে আনা হয়। সেখানে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, অস্ত্রোপচারে কান তৈরি করা সম্ভব। তবে তার জন্য বয়স হতে হবে ৬ থেকে ৮ বছর। প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক সৌম্য গায়েন বলেন, “ওই বয়সের মধ্যে প্রথম অস্ত্রোপচারটি করা গেলে ভাল ফল মেলে। বুক থেকে তরুণাস্থি (কার্টিলেজ) নিয়ে কানের কাঠামো তৈরি করতে হয়। ওই বয়সে তরুণাস্থি খুব নমনীয় থাকে।”

ঝুমুর বলেন, “ছেলে স্কুল থেকে ফিরে রোজ কাঁদত। কান নেই বলে বন্ধুরা ঠাট্টা করত। ডাক্তারবাবুর কথা মতো আমরাও ওকে বলতাম, এক দিন ঠিক কান তৈরি হয়ে যাবে।” মাঝে দু’বছর কোভিডের জন্য বাধা হলেও, বছরখানেক আগে পিজিতে প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক অরিন্দম সরকারের নেতৃত্বে সৌম্য গায়েন, মনোরঞ্জন সৌ-সহ চার চিকিৎসকের দল ওই বালকের প্রথম পর্যায়ের অস্ত্রোপচারটি করেন। মাথার ডান পাশে উঠে থাকা ছোট মাংসপিণ্ডের বদলে তৈরি হয় সম্পূর্ণ কান।

সম্প্রতি দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করে কানের পুরোপুরি আদল নিয়ে এসেছেন সৌম্য। তাঁর কথায়, “অস্ত্রোপচারটি জটিল। খুব সাবধানে পাঁজরের উপর থেকে তরুণাস্থি সংগ্রহ করতে হয়। না হলে ফুসফুসে ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়। কানের প্রতিটি ভাঁজকে তৈরি করাও খুবই জটিল। পর পর দু’বার অস্ত্রোপচার করে তবেই পুরোপুরি সাফল্য আসে।”

দিনকয়েক আগে, পুনরায় ওই বালককে পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। এখন সে সুস্থ রয়েছে। অরিন্দমের কথায়, ‘‘বাবা-মাকে বিষয়টি জানতে হবে যে, সন্তানের এমন সমস্যা থাকলে তা ঠিক করা সম্ভব। কান পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে শিশুর আনন্দ ফিরিয়ে দেওয়া যায়। তবে ৫-৮ বছরের মধ্যে অস্ত্রোপচার করলে খুব ভাল হয়।’’ সদ্য পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া সৌম্যজিৎ এখন হাসিমুখে বলছে, “আর তো কেউ বলবে না, আমার কান নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Surgery SSKM Hospital Boy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE