সঞ্জু সাউ। — নিজস্ব চিত্র
ছবিতে, ঘোষণায়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও হুঁশ ফেরেনি তাঁদের। হেলমেট ছাড়াই নিয়মিত তাঁরা যাতায়াত করছেন দ্বি-চক্র যানে। দশমীর রাতে নিজের প্রাণ দিয়ে সেই ‘অনুরোধ না মানা’-র খেসারত দিলেন সঞ্জু সাউ। ৩৯ বছরের ওই গৃহবধূর বাড়ি ফুলবাগানে।
কী ঘটেছিল? পুলিশ জানায়, ওই রাতে আমহার্স্ট স্ট্রিটে বাপের বাড়িতে বিজয়া সেরে স্কুটারের পিছনে বসে বাড়ি ফিরছিলেন সঞ্জুদেবী। তাঁর হেলমেট ছিল না। স্কুটার চালাচ্ছিলেন তাঁর ছেলে শুভম। দু’জনের মাঝে বসেছিল শুভমের বোন, ১২ বছরের সঞ্জন। তারও হেলমেট ছিল না। শুধু শুভম হেলমেট পরে ছিলেন। এমনিতে একটি স্কুটারে তিন জন চড়াটাই বেআইনি। তার উপরে দু’জনের মাথায় হেলমেট ছিল না।
পুলিশ জানায়, রাত ১২টা নাগাদ মানিকতলা মোড় পেরিয়ে বাগমারি সেতুতে ওঠার পরেই স্কুটারের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন শুভম। সঞ্জুদেবী আসন থেকে ছিটকে পিছন দিকে উল্টে পড়েন। মাথার পিছনে গুরুতর চোট লাগে তাঁর। মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে সঞ্জুদেবীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁর গায়ের উপরে গিয়ে পড়ে মেয়ে সঞ্জন। সে কারণে তার তেমন চোট লাগেনি। শুভমের চোটও সামান্য। হেলমেট থাকায় তিনি বেঁচে যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশের অভিযোগ, প্রচার করে, পথ-নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করে, এমনকী জরিমানা করার পরেও নিয়মিত হেলমেট ব্যবহার করছেন না শহরবাসীর একাংশ। স্থানীয় বাসিন্দারাও পাল্টা অভিযোগ করেছেন, হেলমেট না থাকলে পুলিশের যে কড়াকড়ি থাকার কথা, তা সকালের দিকে নজরে এলেও রাতের দিকে সে ভাবে দেখা যায় না। মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পরে তাই রাতের শহরে হেলমেটহীন মোটরবাইক বা স্কুটার আরোহীদের উপরে পুলিশি নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রাফিক পুলিশের এক অফিসার জানান, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে কোনও ট্রাফিক পুলিশকর্মী থাকেন না। মানিকতলা এবং বিবেকানন্দ রোডের মোড়ে যাঁরা থাকেন, রাত গভীর হলেই তাঁরা চলে যান। তবে
ওই অফিসারের দাবি, দিনের অন্য সময়ে হেলমেটহীন কোনও বাইক-আরোহীকে এই রাস্তায় দেখতে পেলে জরিমানা করা হয়।
সঞ্জুদেবীর আত্মীয় শিবচরণ সাউ এ দিন বলেন, ‘‘সঞ্জুদেবীর সঙ্গে হেলমেট ছিল। কিন্তু যত দূর জানি, হেলমেট নিয়ে বেরোলেও তিনি সেটি পরেননি।’’ পুলিশেরও সন্দেহ, হেলমেট হাতে ধরেই বসেছিলেন সঞ্জুদেবী।
দুর্ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে ওই রাস্তার হাল নিয়েও। বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পিচের রাস্তার চেয়ে পাশেই কংক্রিটের ট্রামলাইনের উচ্চতা কয়েক ইঞ্চি বেশি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ কারণে অনেক সময়ে দ্রুত গতিতে থাকা মোটরবাইক বা স্কুটারের চাকা ওই দুই উচ্চতার মাঝে পড়ে পিছলে যায়। রাস্তার যে অংশে মঙ্গলবার দুর্ঘটনা ঘটেছে, বাগমারি সেতুতে ওঠার পরেই সেই অংশটির সামনে ফুটপাথে একটি মন্দির আছে। মন্দিরের জন্য ফুটপাথটিকে রাস্তার দিকে একটু বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে রাস্তাও হয়ে গিয়েছে সরু। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায়ই মোটরবাইক ও স্কুটার-দুর্ঘটনা ঘটার সেটিও একটি কারণ। পুরসভাকে বারবার বলা সত্ত্বেও রাস্তার ওই অংশে ট্রামলাইন এবং পিচ রাস্তার উচ্চতার মধ্যে ফারাক ঠিক করা হয়নি।
পরিবহণ দফতরের বক্তব্য, কংক্রিটের ট্রাম লাইন তাদের অধীনে থাকলেও পিচ রাস্তার সঙ্গে উচ্চতার সামঞ্জস্য ঠিক রাখা মূলত পুরসভার কাজ। তবে, অভিযোগ পেলে অনেক সময়েই পরিবহণ দফতর পিচ ঢেলে ওই ফারাক ঠিক করে দেয় বলেও দাবি করেছেন এক পরিবহণ-কর্তা। যদিও সময়ের সঙ্গে সেই পিচ আবার গলে গিয়ে ফারাক তৈরি হয়।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে বলেন, ‘‘পুরসভা এই কাজ করে ঠিকই। কিন্তু কোথায় ওই কাজ করতে হবে, কোন সংস্থাকে দিয়ে তা করানো হবে, তার দায়িত্ব পরিবহণ দফতরের অধীনে ট্রাম কর্তৃপক্ষের। পুরসভাকে দিয়েই তাঁরা কাজটি করান।’’ বাগমারি সেতুর মুখে রাস্তার ওই অবস্থার কথা তাঁর এই মূহূর্তে জানা নেই বলেও জানিয়েছেন রতনবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy