Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ময়দানি মজা কি মাঠেই মারা যাবে

এ-ও কি ‘সহিষ্ণুতা’র কলকাতা? প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে শীত-পার্বণের আমুদে শহরে। যখন ছুটির হাওয়ায় চিড়িয়াখানা-ময়দান-পার্ক স্ট্রিট-ভিক্টোরিয়া-গঙ্গাবিহারে মাতোয়ারা হয় কাছের-দূরের জনতা।

 হুল্লোড়ের এই ময়দান আজ থাকবে রাজনীতির দখলে।

হুল্লোড়ের এই ময়দান আজ থাকবে রাজনীতির দখলে।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৩১
Share: Save:

এ-ও কি ‘সহিষ্ণুতা’র কলকাতা?

প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে শীত-পার্বণের আমুদে শহরে। যখন ছুটির হাওয়ায় চিড়িয়াখানা-ময়দান-পার্ক স্ট্রিট-ভিক্টোরিয়া-গঙ্গাবিহারে মাতোয়ারা হয় কাছের-দূরের জনতা। কাল, বছরের শেষ রবিবার শহরে আম-নাগরিকের হইহুল্লোড়ের এ সব ‘হট স্পট’-এর দখল নিতে পারে ব্রিগেডমুখী লাখো লোকের মিছিল। অনেকেরই আশঙ্কা, তাতে চৌপাট হবে বচ্ছরকার উৎসবের আমেজ।

‘‘পুলিশ এ সময়ে রাজনৈতিক জমায়েতের অনুমতি দেয় কোন আক্কেলে! এতটা সহিষ্ণু না হলেই কি চলছিল না!’’ শনি-সন্ধ্যায় গড়িয়াহাটে কেনাকাটার ফাঁকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন হায়দরাবাদ থেকে বচ্ছরকার ছুটিতে শহরে প্রত্যাগত তানিয়া পালচৌধুরী। রবি-সকালে এক বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে দিনভর লঞ্চ ভাড়া করে গঙ্গাবক্ষে ঘোরার পরিকল্পনা রয়েছে মধ্য তিরিশের ওই মহিলার। সকালে কতটা আগে নিউ আলিপুরের বাড়ি থেকে বেরোলে ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে মিলেনিয়াম পার্কের জেটিতে ঠিক সময়ে পৌঁছনো যাবে, তা নিয়েই এখন ঘোর দুশ্চিন্তা তাঁর।

দিল্লি-হিমাচল বেড়িয়ে চট্টগ্রামে ফেরার আগে সফরের শেষ দু’টো দিন কলকাতার জন্য বরাদ্দ করেছিলেন সপরিবার ফারহানা ও রকিবুল। এ দিন বিকেলে দিল্লি থেকে উড়ানে কলকাতায় নেমে সদর স্ট্রিটের হোটেলে ঢোকার পরে তাঁদেরও মন খারাপ! ‘‘হোটেলের অনেকে ভয় দেখাচ্ছেন, বাইরে বেরোলেই ভিড়ের চোটে নাস্তানাবুদ হব! কত ভেবেছিলাম, নন্দনে চেনা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে ময়দানে ঘোড়ায় চড়ব, ফুচকা খাব!’’ সন্ধ্যার আগে কলকাতা স্বাভাবিক হবে কি না, ঠিক বুঝতে পারছেন না। গোটা একটা রবিবার ভণ্ডুল হওয়ার আশঙ্কায় নিউ মার্কেট পাড়ায় মুখ ব্যাজার করে ঘুরছিলেন ঘোর কলকাতাপ্রেমী বাংলাদেশি ওই দম্পতি।

বাস্তবিক, আমজনতার দুর্ভোগ যে কার্যত অনিবার্য, তা মেনে নিচ্ছেন লালবাজারের কর্তারাও। কিন্তু পুলিশই তো এ ধরনের সভার অনুমতি দিয়ে থাকে। ‘‘সে তো আমরা সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করি বা সমাবেশে আসার মিছিল কোন পথে আসবে, তা ঠিক করে দিই,’’ বলছেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র। তাঁর দাবি, কোন রাস্তা দিয়ে মিছিল করে এলে আমনাগরিকের ভোগান্তি সব থেকে কম হবে বা যান চলাচল ঠিক থাকবে, তা-ও পুলিশই মাথায় রাখে। সেই মতো সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলিকে পরামর্শও দেয়। রাজীবের কথায়, ‘‘সমাবেশ ও কলকাতার জনজীবন দু’টোই যাতে একই সঙ্গে মসৃণ ভাবে চলে, তা আমরা দেখব।’’

ব্রিগে়ডের সভাস্থল ঘিরে পুলিশি টহল। শনিবার। ছবি : দেবাশিস রায়

কিন্তু পুলিশ ব্রিগেডে সভা করার অনুমতি না দিলে তো বচ্ছরকার উৎসব এ ভাবে মাটি হওয়ার আশঙ্কা আগেই নির্মূল হয়ে যেত? জবাব এড়িয়ে যাচ্ছেন পুলিশকর্তা। ব্রিগেডের সভা-সমাবেশের নেপথ্যে অবশ্য সেনা-কর্তৃপক্ষেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু কলকাতায় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র উইং কম্যান্ডার সিমরান পাল সিংহ বিরদি-ও আমনাগরিকের ভোগান্তির প্রশ্নে দায় নিতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘শহরবাসীর ভোগান্তি ঠেকানোর কাজটা স্থানীয় প্রশাসনের। এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’’

অর্থাৎ, রাজনৈতিক সমাবেশের জেরে কলকাতার আমজনতার ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলেই কার্যত অপার ‘সহিষ্ণুতা’রই মেজাজে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগে মিছিল-মিটিংয়ের জেরে জনতার ভোগান্তি যত দূর সম্ভব কম করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সব যে অনেকটাই কথার কথা, গত চার বছরে মমতার দলও তা বুঝিয়ে দিয়েছে।

বাস্তবিক, কাজ বা ছুটির দিন নির্বিশেষে শহরের আমনাগরিকের গন্তব্য স্থানগুলি রাজনীতির ঝাণ্ডাধারীদের দাপটে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া নিয়ে কারওই মাথাব্যথা নেই। এবং এ বিষয়ে এত মাথাব্যথার আছেটা কী, মিছিল-সমাবেশের সংগঠকেরাও তা বুঝতে পারছেন না। রবিবারের সমাবেশের আয়োজক সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, কাজের দিনে তো কিছু হচ্ছে না। প্রতি বারই তাঁদের ব্রিগেড সমাবেশ হয় রবিবারে। অনেক আগে থেকেই দিনটা জানিয়ে দেওয়া হয়। এ বারও সেটাই হচ্ছে।

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বরং অন্য কৌশলের কথা বলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য সময়ে ব্রিগেডে এসে কেউ কেউ চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, ভিক্টোরিয়ার বাগানে ঢুকে পড়েন। এ বার সেটা মাথায় রেখেই আমরা বার্তা দিচ্ছি, শাসক দলের বিরুদ্ধে সিপিএমের প্রস্তুতি দেখতে ও পথে না-গিয়ে বরং সকলে ব্রিগেডেই চলে আসুন।’’

চিড়িযাখানর অধিকর্তা আশিস সামন্তের অভিজ্ঞতা অবশ্য বলছে, ‘‘অন্য বারের মতো ব্রিগেডের দিনেই এ বারও ভিড় বেড়ে যেতেই পারে।’’ শহরের এক অভিজ্ঞ ট্রাফিককর্তার টিপ্পনি, ‘‘যা বুঝছি, ভিড়-যানজট সামলাতে কপালে দুঃখ আছে! পলিটিক্যল পার্টি আর বছর শেষের মরসুমি পার্টি, দু’টোই কাল (রবিবার) একাকার হয়ে যাবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

brigade new year moidan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE