Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘‘বাবা কেন দিদিমণিদের মারল’’, বুঝতেই পারছে না বিনোদিনীর ছাত্রী

বুধবার তিনি জানান, গোটা শরীরে ব্যথা। এ দিন আর স্কুলে আসতে পারেননি রূপাদেবী। শরীরের থেকেও অবশ্য তিনি বেশি আঘাত পেয়েছেন মনে।

বুধবার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের ক্লাসঘরে পড়ুয়ারা।

বুধবার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের ক্লাসঘরে পড়ুয়ারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

প্রথমেই চশমা ভেঙে যায়। তার পরে সব অস্পষ্ট! বাঁচার আকুতি জানিয়ে একনাগাড়ে চিৎকার করে যাচ্ছিলেন ওই শিক্ষিকা। তা-ও থামেনি চড়-থাপ্পড়। মুখে-বুকে-পিঠে পরপর মারের চোটে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন তিনি। শেষে স্কুলের ছাত্রীরা উদ্ধার করে তাঁকে।

মঙ্গলবার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলে এক শিশু পড়ুয়ার যৌন নিগ্রহের অভিযোগকে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের তাণ্ডবের শিকার হন ওই স্কুলের শিক্ষিকা রূপা ভট্টাচার্য। বুধবার তিনি জানান, গোটা শরীরে ব্যথা। এ দিন আর স্কুলে আসতে পারেননি রূপাদেবী। শরীরের থেকেও অবশ্য তিনি বেশি আঘাত পেয়েছেন মনে।

এ দিন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, অভিভাবকদের দল যখন হুড়মুড়িয়ে স্কুলের অফিসঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালাচ্ছে, তখন রূপাদেবীও করজোড়ে তাঁদের শান্ত হওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে না। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের অন্যায় না করার শিক্ষা দিই! কিন্তু আমাকেই যে এত বড় আঘাত পেতে হবে, সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।’’

বাবা যে দিদিমণিদের মেরেছে, এ কথা মানতেই পারছে না ওই স্কুলে গোলমালের ঘটনায় ধৃত বাপি হালদারের মেয়ে। সে শুধু জানতে চাইছে, বাবা কেন মারামারি করল? বুধবার আদালতে দাঁড়িয়ে বাপির স্ত্রী রূপালি বলছিলেন, ‘‘মাথা গরম করেই ও রকম করে ফেলেছে। জামিনটা হয়ে যাক। বাড়িতে মেয়েদের উত্তর দিতে দিতে আর পারছি না।’’ একই আর্তি আর এক ধৃত দীপক প্রামাণিকের স্ত্রী পাপিয়ার। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার স্কুলে গোলমাল করা ও মারধরের ঘটনায় বাপি ও দীপকের সঙ্গেই মুরারি বৈদ্য এবং সুন্দর নস্করকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এঁদের কেউ গাড়ি চালান, কেউ কল সারাইয়ের কাজ করেন। বাড়ি পঞ্চাননতলা ও বাবুবাগান বস্তিতে। এ দিন চার জনকেই এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের বিচারক। জামিন পেলেও তাঁদের আগামী ৩ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন আদালতে হাজির থাকতে হবে।

আদালত চত্বরে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র

ধৃতেরা জামিন পেলেও প্রকাশ্য রাস্তায় মার খাওয়ার স্মৃতি তাড়া করে বেড়াচ্ছে আর এক শিক্ষিকা শ্যামলী চৌধুরীকেও। তিনিও বুধবার স্কুলে আসতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারছি না। পা কাঁপছে। জীবনে এ রকম পরিস্থিতিতে কোনও দিন পড়িনি। লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি।’’ তাঁর কাতর প্রশ্ন, ‘‘কী করে এই পরিস্থিতি থেকে বেরোব,
বুঝতে পারছি না। মনে পড়লেই শিউরে উঠছি।’’

স্কুলে গোলমালের ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে পঞ্চাননতলা ও বাবুবাগানের সেলিমপুর বস্তির বাসিন্দাদের একাংশের বিরুদ্ধে। পঞ্চাননতলার বাসিন্দা এক অভিভাবক অভিযোগ উড়িয়ে বললেন, ‘‘কিছু হলেই সবাই আমাদের দোষ দেয়। কেউ কিন্তু প্রমাণ করতে পারবেন না যে, আমরাই ওখানে ছিলাম।’’ তাঁর দাবি, সংবাদমাধ্যমে যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁরা সেলিমপুরের বাসিন্দা।

ভিড়ে রুদ্র মূর্তিতে দেখা গিয়েছিল চেক লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তিকে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়ছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, ঢাকুরিয়া স্টেশন থেকে বাবুবাগান লেনের মধ্যে রিকশা চালান তিনি। লোকে তাঁকে ‘কালো ইঞ্জিন’ বলে ডাকে। এ দিন তাঁর দেখা মেলেনি। ভোলা নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘‘যে রকম দেখতে বলছেন, মনে হচ্ছে কালো ইঞ্জিন। ওই নামেই ডাকি আমরা। লক্ষ্মীকান্তপুরের দিকে থাকে। আজ কোথায়, বলতে পারব না।’’ পুলিশ অবশ্য ওই ব্যক্তি-সহ হামলাকারীদের খোঁজ চালাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhakuria School Teacher Assault Insult
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE