প্রতীকী ছবি
স্ট্রোক হওয়ার পরে প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই সময়টা নষ্ট হয় বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে। জেলা থেকে শহরের মেডিক্যাল কলেজে আনতে অনেকটা সময়ও পেরিয়ে যায়। সব মিলিয়ে স্ট্রোকে আক্রান্তের উপকারের থেকে ক্ষতির আশঙ্কাই বৃদ্ধি পায়। তাই জেলা ও মহকুমা-সহ অন্যান্য স্তরের হাসপাতালেও যাতে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা যায়, তার জন্য টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাপনা চালু করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
প্রাথমিক পর্যায়ে এসএসকেএমের ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস’ (বিআইএন)-কে মূল কেন্দ্র (হাব) হিসাবে রেখে তার সঙ্গে টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাপনা শাখা কেন্দ্র (স্পোক) হিসাবে যুক্ত করা হচ্ছে সিউড়ি, আসানসোল, বারাসত, বসিরহাট ও ইমামবাড়া জেলা হাসপাতাল, কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতাল এবং বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালকে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সব হাসপাতালে স্ট্রোকের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। এমনকি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করতে পারলে রোগীকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়। সেই কারণেই এই ব্যবস্থা।’’
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া রোগীকে চটজলদি ওই সমস্ত হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবেন পরিজনেরা। সেখানে তৎক্ষণাৎ সিটি স্ক্যান করে সরাসরি তা টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাঠানো হবে বিআইএন-এ। সেখানে উপস্থিত স্ট্রোক বিশেষজ্ঞেরা (২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যাবে তাঁদের) সেই রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে পরামর্শ দেবেন। বিআইএন-এর ওই স্ট্রোক ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা, স্নায়ু-রোগ চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় বলেন, ‘‘ওই সাতটি হাসপাতালের চিকিৎসক-দলকে স্ট্রোক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। পুরো বিষয়টিই টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে আমাদের চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকবে। সিটি স্ক্যানের পরে রিপোর্ট দেখে যদি মনে হয় আরও উন্নত চিকিৎসা দরকার, তা হলে ওই রোগীকে কলকাতায় আনতে বলা হবে।’’
বিমানবাবু আরও জানান, মস্তিষ্কের ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক হয়। যে ওষুধের মাধ্যমে জমাট বাঁধা রক্তকে তরল করা সম্ভব, সেটি বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতালে পাওয়া যায়। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে কী ভাবে রোগীকে পরীক্ষা করার পরে বিষয়টি বুঝে নিয়ে সেই ওষুধ প্রয়োগ করা হবে, সে সম্পর্কে একটা ঠিকঠাক ধারণা দিতেই প্রশিক্ষণটি দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, অনেক সময়ে স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখে সেটিও বোঝা সম্ভব। জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে রোগীকে স্থিতিশীল করার পাশাপাশি আরও কী চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, তারও প্রশিক্ষণ পাবেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
এই ব্যবস্থাপনার জন্য সাতটি হাসপাতালের সুপার-সহ সংশ্লিষ্ট জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক জনকে ‘নোডাল অফিসার’ হিসাবে চিহ্নিত করতে, যিনি ওই শাখা কেন্দ্রের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করবেন। মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে স্ট্রোক বিশ্বে দ্বিতীয় এবং ভারতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এমনটাই উঠে এসেছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। এর পাশাপাশি, এ দেশে যে সমস্ত কারণে শারীরিক অক্ষমতা তৈরি হয়, তার মধ্যেও পঞ্চম স্থানে রয়েছে স্ট্রোক।
বিমানবাবু জানাচ্ছেন, স্ট্রোকের উপরে কলকাতায় হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, ১০০ জন আক্রান্ত হলে তার মধ্যে ৩৫-৪০ জন এক মাসের মধ্যে মারা যাচ্ছেন। আবার বাকি আক্রান্তদের মধ্যে চার-পাঁচ জন করে প্রতি বছর মারা যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পাইলট প্রকল্প হিসাবে এই ব্যবস্থাপনায় সাফল্য মিললে আগামী দিনে উত্তরবঙ্গ-সহ কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজকে ‘হাব’ তৈরি করে অন্যান্য হাসপাতালকে তার সঙ্গে যুক্ত করা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy