০২ মে ২০২৪
আলোচনা শুরু হয় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্লেগ মহামারির সময়ের কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে।
Usha Utthup

এই অতিমারির শেষ কোথায়! ওয়েবিনারে উত্তর খুঁজলেন বিশিষ্টজনেরা

আলোচনা শুরু হয় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্লেগ মহামারির সময়ের কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে।

ওয়েবিনারের একটি দৃশ্য

ওয়েবিনারের একটি দৃশ্য

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২১ ১১:২৯
Share: Save:

গত দেড় বছর ধরে অতিমারির প্রকোপে মানুষ উদ্‌ভ্রান্ত। এক অনিশ্চয়তার মধ‌্যে আটকে গোটা পৃথিবী। কী ভাবে বা কবে এর থেকে মুক্তি মিলবে সেই প্রশ্নই এখন সবার মনে। ‘দ‌্য বেঙ্গল’ আয়োজিত ‘এই অতিমারির শেষ কোথায়’— শীর্ষক ওয়েবিনারে এই বিষয়ে উঠে এল মূল্যবান মতামত।

ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক কুণাল সরকার, শ‌্যামাশিস বন্দ‌্যোপাধ‌্যায়, সঙ্গীতশিল্পী উষা উত্থুপ, পরিচালক অরিন্দম শীল ও অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার। সঞ্চালনা করেন সৌমিত্র মিত্র।

আলোচনা শুরু হয় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্লেগ মহামারির সময়ের কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে। কলেরা, প্লেগ, স্প‌্যানিশ ফ্লুয়ের মতো নানা মহামারির সাক্ষী ইতিহাস। কুণাল এই প্রেক্ষিতেই আলোচনা শুরু করেন। স্প‌্যানিশ ফ্লুয়ের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে নানা ধরনের জড়িবুটি, গাছগাছালির পাতা, শেকড়-বাকড় বেটে ওষুধ তৈরি করে সবাইকে খাওয়াতেন। আরও বেশ কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, স্প‌্যানিশ ফ্লু থেকেও এক দিন মুক্তি মিলেছে। কুণালের মতে এই অতিমারি মানুষ নিজেই সৃষ্টি করেছে। প্রকৃতিকে টপকানোর আকাঙ্ক্ষা, মারণ রোগ নিয়ে গবেষণা থেকেই এই ঝামেলার সূত্রপাত। প্রথম যখন এ দেশে কোভিড ছড়ায় তখন প্রতিরোধ করার বা লড়াই করার মতো কোনও কিছুই হাতে ছিল না।

এখন ভারতবর্ষে ২২ শতাংশ মানুষের প্রথম টিকা ও ছয় শতাংশ মানুষের দ্বিতীয় টিকা নেওয়া হয়েছে। তাঁর মতে, আমরা এখন টিকাকরণের মাঝামাঝি জায়গায়। যে সমস্ত দেশে টিকাকরণের মাত্রা বেশি সে সমস্ত দেশে ক্রমশ সব খুলে দেওয়া হচ্ছে। টিকাকরণের ফল সংক্ষেপে বলতে গেলে, যাঁদের অন্তত একটি টিকা বা যাঁদের দু’টি টিকাই নেওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে গুরুতর অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা কম। ‘ভ‌্যাকসিনেশন ট্রেন্ড’ অনুসারেই এই ভাইরাসের গতিপথ নির্ধারিত। তাঁর মতে সামনের বছর জুন-জুলাই মাসের মধ‌্যে আমাদের দেশে টিকাকরণ সম্পূর্ণ হবে। মোটামুটি ৩৫-৪০ শতাংশ টিকাকরণ হলে তখন চিত্রটা অনেকটাই পাল্টে যাবে।

উষা উত্থুপের মতে সবাইকে ‘অপটিমিস্ট’ হতে হবে। সমস্ত নিয়মবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেন তিনি। সমস্ত শিল্পীদের প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের চার দেওয়ালের গণ্ডির মধ‌্যে থেকেই তাঁদের শিল্পকর্ম এগিয়ে নিয়ে যেতে আহ্বান জানান তিনি। প্রত‌্যেককে সতর্ক থাকতে হবে। প্রত‌্যেকটি মানুষ সতর্ক থাকলে তবেই রেহাই মিলবে।

পরবর্তী বক্তা ছিলেন অরিন্দম শীল। যে দেশে একটা ১০ ফুট বাই ১০ ফুট ঘরে ১০ জন করে মানুষ বসবাস করে সেখানে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলা কতটা সম্ভব সেই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। তিনি মনে করেন তাঁর সিনেমা কবে মুক্তি পাবে বড় কথা নয়। এমন অনেক কলাকুশলী, মানুষজন রয়েছেন যাঁদের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে জীবনযাপন দুরূহ হয়ে উঠেছে। যাঁদের রোজের রোজগার তাঁদেরও চরম সঙ্কট। এই সময় শুধু নিজেরটা নয়, সবার কথা ভাবতে হবে। কাজের সুবাদে গ্রামে-গঞ্জে এই সময় ঘুরেছেন তিনি। এই সমস্ত অঞ্চলে আমরা যে অতিমারির মধ‌্যে রয়েছি, তা বোঝার কোনও লক্ষণ নেই। সকলকে সতর্ক হতে হবে। টিকাই যে এই অতিমারির থেকে রক্ষার একমাত্র চাবিকাঠি এতে কোনও দ্বিমত নেই। প্রত‌্যেকটি মানুষ যাতে টিকা পান সেই দিকে নজর দিতেই হবে।

দেবশঙ্কর হালদারের মতে, আমাদের এই অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুঝতে যুঝতে চলতে হবে। অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে, বিজ্ঞানের বাতলে দেওয়া পোশাক পরে, কাজের একটা নতুন রূপ নির্ধারণ করতে হবে। মঞ্চের এক জন অভিনেতা হিসাবে তিনি মনে করেন, বিজ্ঞানকে ঢাল করেই মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। একলা থেকেও মানুষের সঙ্গে সেতুবন্ধন করতে হবে।

চিকিৎসক শ‌্যামাশিসের মতে কোন ‘ওয়েভের’ মধ‌্যে আমরা আছি সেটার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এটা বোঝা যে ভাইরাসটি এখনও অতীত হয়ে যায়নি, খুব তাড়াতাড়ি যাবেও না। আবার টিকাকরণ সমীক্ষার ফল এমনও নয় যে দূরত্ব বিধি বা মাস্ক ব‌্যবহার বন্ধ করা যাবে। আমাদের এখানে প্রচুর মানুষের ‘সেরোকনভার্শন’ অর্থাৎ অ‌্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে টিকাকরণ যত বৃদ্ধি পাবে রোগের প্রকোপ তত কমবে। মৃত‌্যুর হার হ্রাস পাবে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনীয়তাও কমবে। দ্বিতীয় বার টিকাকরণের পর আবারও টিকাকরণের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আগে ৬০-৭০ শতাংশ টিকাকরণ সম্পূর্ণ করে আবার ‘হাই রিস্ক পপুলেশন’ নিয়ে কাজ করা উচিত। ওয়েবিনারে বহু মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেন দুই ডাক্তারবাবু। দীপেন ভট্টাচার্য নামে এক দর্শক লিখেছেন, ‘অতিমারির শেষ কোথায় অনুষ্ঠানটি দেখলাম। অনবদ‌্য একটি অনুষ্ঠান হল। দুই ডাক্তারবাবুর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও পরামর্শ আমাদের খুবই উপকারে লাগবে। আবার এমন অনুষ্ঠানের প্রত‌্যাশায় রইলাম।’ রাজু কুণ্ডু জানান, ‘এই অনুষ্ঠান থেকে করোনা বিষয়ে যে ভয়-ভীতি ছিল তার থেকে অনেকটা মুক্তি পেলাম। খুব ভাল লেগেছে।’ এই ওয়েবিনারের ডিজিটাল মিডিয়া সহযোগী ছিল ‘আনন্দবাজার ডট কম’।

সমগ্র আলোচনা থেকে যে ভাবনা উঠে এসেছে তা হল এই ভাইরাস থেকে রেহাই মেলার একটাই পথ— টিকাকরণ। শুধু নিজের নয়, অন‌্যের দিকেও নজর দিতে হবে এবং সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চলা আবশ‌্যিক। তবেই হবে জয়।

ওয়েবিনারটি দেখুন -

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE