Advertisement
১৮ মে ২০২৪

সরকারি বাগানে ফুল ফোটাচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষী

একটি বেসরকারি অফিসের কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি ছেড়ে ২০১০-এ একটি বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহকারী সংস্থায় যোগ দেন বিডন স্ট্রিটের সত্যরঞ্জনবাবু। তাদের তরফেই উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জি পার্কে কাজ শুরু করেন তিনি।

 অবসর: জগৎ মুখার্জি পার্কের সেই বসার জায়গা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

অবসর: জগৎ মুখার্জি পার্কের সেই বসার জায়গা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ০২:৫৯
Share: Save:

বছর সাতেক আগে কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার পরেই সত্যরঞ্জন দলুইয়ের জীবনটা বদলে গিয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীর কাজের গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি এখন পুরসভার উদ্যান বিভাগের নয়নের মণি। অফিসার থেকে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী— সকলের এক কথা, ‘‘সত্যরঞ্জনবাবুর মতো নিরাপত্তারক্ষী থাকলে উদ্যানগুলির শ্রী ফিরবে।’’

একটি বেসরকারি অফিসের কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি ছেড়ে ২০১০-এ একটি বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহকারী সংস্থায় যোগ দেন বিডন স্ট্রিটের সত্যরঞ্জনবাবু। তাদের তরফেই উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জি পার্কে কাজ শুরু করেন তিনি। নিরাপত্তারক্ষী যে-ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে উদ্যান সংস্কারে এগিয়ে এসেছেন, তাতে অভিভূত কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার। দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘নিজের খরচে এক জন নিরাপত্তারক্ষী উদ্যান সংস্কারের কাজে যে-ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতে শহরের অন্য উদ্যানের নিরাপত্তারক্ষীদেরও শেখা উচিত। পুরসভার তরফে অবিলম্বে সত্যরঞ্জনবাবুকে পুরস্কৃত করা হবে।’’

বর্তমানে কলকাতা পুরসভার অধীনে প্রায় সাতশো উদ্যান রয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা প্রায় আটশো। গাছের পরিচর্যার জন্য মালি রয়েছেন প্রায় চারশো জন। পুরসভার উদ্যান বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘মালির সংখ্যা কমে যাওয়ায় নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা অনেক বেড়েছে। গাছ পরিচর্যার জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের উদ্যোগী হওয়ার কথা বলা হলেও বেশির ভাগ কর্মী সেই দায়িত্ব পালন করেন না।’’

চায়ের দোকানের ফেলে দেওয়া ছোট ছোট প্লাস্টিক সংগ্রহ করে তাতে মাটি দিয়ে গাছের চারা তৈরি করছেন সত্যরঞ্জনবাবু। তাঁর তৈরি বিভিন্ন প্রজাতির ফুল-ফলের গাছ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা তো নিচ্ছেনই, আশপাশ থেকেও বিনামূল্যে গাছ নিতে আসেন অগণিত মানুষ। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ মিত্র বলেন, ‘‘সত্যরঞ্জনবাবু আসার পর থেকে উদ্যানের চেহারাটাই বদলে গিয়েছে। ওঁর জন্য গর্ব হয়।’’ সত্যরঞ্জনবাবুর সহকর্মী শিবদাস ভৌমিকের কথায়, ‘‘সত্যরঞ্জনবাবু আসার পর থেকে একটা জিনিস বুঝেছি, কোনও কাজই ছোট নয়। ভালোবেসে কাজ করলে সব কাজই সম্মানের। ওঁকে দেখে কাজ করার অনুপ্রেরণা পাই।’’

জগৎ মুখার্জি পার্কের ফটক দিয়ে ঢোকার পরেই রয়েছে একটি বসার জায়গা। সত্যরঞ্জনবাবু সেটিকে আরও আকর্ষণীয় করতে উদ্যোগী হয়েছেন। নিজের টাকা খরচ করে সেখানে দু’টি পাখার ব্যবস্থা করেছেন। মাস কয়েক আগে একটি আলমারি কিনে তাতে বই, সংবাদপত্র রাখার ব্যবস্থাও করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আশপাশের বাসিন্দারা ছাড়াও দূর থেকে অনেকে এসে বসেন। তাঁদের বিনোদনের জন্যই এই ব্যবস্থা।’’ মেয়েকে টিউশন পড়াতে এনে উদ্যানে অপেক্ষা করেন খড়দহের বাসিন্দা ববিতা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘গত দু’বছর ধরে এখানে আসি। যত ক্ষণ খুশি উদ্যানে বসে বিনা পয়সায় সংবাদপত্র, বই পড়ার সুযোগ পাই। সত্যবাবুর জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।’’ স্থানীয় কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘সত্যবাবু নিজের উদ্যোগে বই সংগ্রহ করছেন। আমরা আরও কিছু বই দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE