Advertisement
২২ মে ২০২৪
Christmas Cake

কেক-সুরভির আড়ালে ‘উধাও’ সাবেক শিল্পীরা 

পৌনে দুশো বছরের পুরনো আজমিরি বেকারির হেড মিস্ত্রি শেখ সৈয়দ রহমানের অনুপস্থিতি তীব্র ভাবেই খাঁ খাঁ করছে।

বৌবাজারের একটি কারখানায় চলছে কেক তৈরি।

বৌবাজারের একটি কারখানায় চলছে কেক তৈরি। নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৫৪
Share: Save:

ক্ষয়াটে, নুয়ে পড়া অবয়বে মিশে গিয়েছে সান্তাবুড়োর ধবধবে দাড়ি। বৌবাজারের আদ্যিকালের ভাটি উনুনের ঘরে মুখচোরা বৃদ্ধের ব্যস্ত উপস্থিতি। বড়দিনের কলকাতায় এই যুগলবন্দি কয়েক দশকের চেনা রসায়ন। ছবিটা পাল্টেছে এ বছর। পৌনে দুশো বছরের পুরনো আজমিরি বেকারির হেড মিস্ত্রি শেখ সৈয়দ রহমানের অনুপস্থিতি তীব্র ভাবেই খাঁ খাঁ করছে।

বেকারির মাঝবয়সি কর্তা শেখ হবিবর রহমান বলছিলেন, “রহমান ভাইয়ের বয়স ৮০ পেরিয়েছিল! সেই ১২-১৩ বছর বয়স থেকে এ লাইনে! এক দিন না এক দিন সবাইকেই যেতে হয়। কিন্তু রহমান ভাইয়ের মতো শিল্পীর হাতযশ বা চোখের গুণের পরম্পরাই হারিয়ে যাচ্ছে। বেকারির লাইনে মিস্ত্রির অভাব নেই। কিন্তু বাংলার কেক-শিল্পের আঁতুড়ঘর আরামবাগ-খানাকুলের ওস্তাদ শিল্পীরা এখন বিরল।”

নিউ মার্কেটের ইম্পিরিয়াল থেকে বৌবাজার, তালতলা, রাজাবাজার, খিদিরপুর, হাওড়ার কারখানার আনাচ-কানাচে বড়দিনে মিশে থাকে গত প্রজন্মের দক্ষ কারিগরদের জন্য হাহাকার। ঢাকার আরামবাগ বেকারি বা খুলনার হুগলি বেকারির গায়ে লেপ্টে দেশভাগের স্মৃতি। অসমের শেখ বেকারি, কোয়ম্বত্তূরের কারখানাতেও আরামবাগের ছেলেদেরই দাপট। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিইও আরিফুল ইসলাম বলছিলেন, “বেকারিতে মাইনে কম। ছেলেরা দিল্লি, মুম্বই, গুজরাতে সোনার কাজে ঝুঁকছে।”

অদক্ষ কারিগরের অবশ্য অভাব নেই। পুজোয় বর্ধমানের ঢাকিদের মতো বড়দিনে বেড়াচাঁপা, চাঁপাডাঙা, আরামবাগ, খানাকুলের ছেলেরাই রাজ্য জুড়ে ছেয়ে আছেন। কিন্তু চোখের আন্দাজে মাখন, ময়দা, শুকনো ফলের মাপ বলে দেবেন বা ভাটি উনুনের ভিতর থেকে সদ্য জ্বালাই হওয়া কেক ঠিক সময়ে বার করবেন, এমন দক্ষতা দুর্লভ। আজমিরির রহমান ভাইয়ের ছোট ছেলে হাসান ২৮-২৯ বছরেই হেড মিস্ত্রি। সেই সঙ্গে রয়েছেন ভাটি উনুনে কেক ঢোকানো বা বার করার নিখুঁত সময়জ্ঞানে দুরস্ত হাফিজ দেওয়ান। বেকারি কারখানার পরিভাষায় এই কাজের ওস্তাদদের বলে ট্যান্ডল। কিন্তু এমন জাত-শিল্পীর সংখ্যা কমছে।

আরিফুল বলছিলেন, “শহরের সাবেক বেকারিকে কোণঠাসা করছে নামী বিস্কুট কোম্পানির কেকের দাপট। ওটিজি বা ছোট আভেনের দৌলতে বেকিং এখন ঘরোয়া রান্নাও। সেই সঙ্গে দূষণের কারণে কয়লার ভাটি উনুন নিয়ে সমস্যা। তালতলাতেই সাবেক বেকারি ৪২ থেকে কমে এখন ১৭টি।”

কেক-নির্মাতারা বলছেন, কলকাতায় ভাল মাখন এখন উধাও। চড়া দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তবু হেভিওয়েট কেক বিশারদ থেকে ছোট বেকারি লড়ে যাচ্ছে। নাহুমের দাম বাড়েনি। কিন্তু তাদের কারখানারও সীমিত পরিকাঠামো। বো ব্যারাকের ওয়াইন কেক থেকে ছানার কেক বিশারদ রতন বড়ুয়াও লড়ছেন। কলকাতার বেশির ভাগ সাবেক বেকারির কেকে কিন্তু সুরার ছোঁয়া নেই। তবু স্বাদে কম নয় তারা। ঈশা নবির জন্মদিনে সেরা সৃষ্টিতে নিজেদের মেলে ধরছে গ্রামবাংলার ছেলেদের প্রয়াস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas Cake Boubazar Cake Shop Bakery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE