অবসরে: বিকেলের আড্ডায় দুই প্রবীণা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বাঁচার তাগিদেই প্রয়োজন সমষ্টির। আর পাড়া মানে তো সমষ্টিগত এক অস্তিত্ব, যেখানে সকলকে নিয়ে মিলেমিশে থাকা। আবার অনেক কিছুর সঙ্গে মানিয়েও নেওয়া।
সে সময়ে বাইপাসের অদূরবর্তী নতুন পাড়ায় বাড়ি কিনছি শুনে অনেকে নানা রকম ভয় দেখিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে এখানে এসেই পেয়েছি শান্তির সন্ধান। রাসবিহারী কনেক্টেরর ধারে বোসপুকুর পেট্রোল পাম্পের পাশে ধর্মতলা রোড হয়ে প্রান্তিক পল্লির রাস্তাটা ঠিক যেন দু’টি বাহুর মতো ছড়িয়ে গিয়েছে শপিং মল আর স্কুলের কাছে।
যখন বাড়ি কিনি, তখন সামনের রাস্তাটি ছিল খোয়া-সুড়কির। নির্মীয়মাণ বহুতলের জমা জলে ছিল মশার বাড়-বাড়ন্ত। বাড়ি লাগোয়া বিঘেখানেক মজা পুকুর। পুকুর পাড়ের বিশাল সব গাছে মিষ্টি ডাক দেওয়া রং-বেরঙের পাখিদের আনাগোনা, রাতবিরেতেও রাসবিহারী কানেক্টরে অঢেল গাড়ির যাতায়াত, চার দিকে নতুন সব বাড়ি, ঘিঞ্জি ভাবের লেশ মাত্র নেই। ভোরে বাঁশি বাজিয়ে জঞ্জাল সংগ্রাহের প্রচলনও এ পাড়াতেই
প্রথম পেলাম।
কাঁচা রাস্তায় পিচের প্রলেপ পড়েছিল, খাল বুঁজিয়ে তৈরি হয়েছিল ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশন। তার পরে অবশ্য দেখতে দেখতে রূপান্তরের রথ অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে। কাউন্সিলর তরুণ ও উদ্যমী, নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন ‘মডেল ওয়ার্ড’ গড়ার। তাঁর স্বপ্ন পূরণের পথ ধরে রাস্তার ধারের নর্দমাগুলি বাঁধিয়ে হয়েছে ‘কার্ব চ্যানেলিং’।
নাগরিক পরিষেবার কোনও অভাব নেই এখানে। এক বার, পাড়ার একটি ছেলের জ্বর হওয়ায় খবর পেয়ে পরদিনই পুর-প্রতিনিধিদের উদ্যোগে মশা মারার ধোঁয়া পাড়ার আনাচ-কানাচে ছড়ানো হয়েছিল। এখনও মাঝেমধ্যেই পুর প্রতিনিধিরা বাড়িতে ঢুকে দেখেন কোথাও জমা জল আছে কি না। খোলনলচে বদলে গিয়েছে খালের বোজানো অংশের, যেখানে এখন ফোয়ারাশোভিত পার্ক আর উদয়শঙ্করের নামাঙ্কিত মঞ্চ তৈরি হয়েছে। রাজপথে পড়েছে ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টের আস্তরণ। হাতের কাছেই তৈরি হয়েছে বিশাল শপিং মল, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, আন্তর্জাতিক মানের স্কুল। প্রান্তিক পল্লিতে সম্প্রতি একটি বড় হোটেলও হয়েছে। তবে কিছু মানুষের নাগরিক সচেতনতা খানিক কম থাকায় পুকুর পাড়ে এখনও জমতে থাকে প্লাস্টিক বন্দি আবর্জনা। এ ছবিটা বদলালে আরও ভাল হতো।
নতুন সব বাড়িতে উঠতি শ্রেণির বাস, তাই পুরনো পাড়াগুলির মতো বৃদ্ধদের আড্ডা এখানে বিরল। তবে যুবক-প্রৌ়ঢ়দের মধ্যে সৌহার্দের খামতি নেই। সেই সূত্রেই বেশ কয়েকটি সর্বজনীন সরস্বতী-কালী পুজো হয় এখানে। যোগাযোগের উষ্ণতা আজও আছে। প্রয়োজনে পাশে আছেন সকলেই।
প্রান্তিক পল্লি এলাকাটা উঁচু, তাই বর্ষায় জল দাঁড়ায় না। কিন্তু নিকাশি খালটি উপচে গেলে জলের উল্টো প্রবাহে রাস্তার নর্দমাগুলি পাঁকের ফোয়ারা হয়ে দাঁড়ায়। সেই পাঁকে বাড়ির উঠোন ভেসে যায়। বছরে দু’-তিন বার এমনটা ঘটে। কাজেই খালের জল ধারণের ক্ষমতা বাড়ানোটা জরুরি। এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি মজা পুকুর আছে। সংস্কার করে, পাড়ে কিয়স্ক গড়ে ব্যবসায়িক ব্যবহারে লাগালে সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি উপার্জনের উপায়ও হতে পারে।
রাস্তা চওড়া হওয়ার পরেও আলোকস্তম্ভগুলি রয়ে গিয়েছে পুরনো অবস্থানে। ফলে গাড়ি চালাতে হয় এঁকেবেঁকে। ফলে পথচারীরা পড়েন আতান্তরে। বড় রাস্তায় অজস্র বাসরুট, কিন্তু সব ক’টি উল্টোডাঙামুখী। বৈষ্ণবঘাটা বা কামালগাজির দিকে একটিও যায় না। তবুও বলা উচিত, এ অঞ্চলে নাগরিক সুযোগসুবিধার পাল্লা অনেকটাই ভারী। তবুও বলা উচিত এখানেই পেয়েছি নিশ্চিত নিরাপত্তা আর সুখের সন্ধান।
লেখক চিকিৎসক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy