সকাল থেকে সাদা পোশাকের কয়েক জনকে বাড়ির আশপাশে দেখে সন্দেহ করেছিল পোড় খাওয়া তিন জন দুষ্কৃতীই। কিন্তু লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখার গোয়েন্দারাও আঁচ করে ফেলেছিলেন বাড়ির ভিতরে থাকা তিন জনের মনোভাব। তাই আগে থেকেই চার দিকে ঘিরে এবং পিছনের খালে ভুটভুটি তৈরি রেখেছিলেন। আর সেই জালেই ধরা পড়ল হরিদেবপুরের পানশালার বাইরে গুলি চালানোর ঘটনায় তিন অভিযুক্ত ভোদকা ওরফে সমীর বাগ (৪০), বাপ্পা ঘোষ এবং ধনঞ্জয় মিস্ত্রি ওরফে ধনা। তবে এখনও অধরা ওই ঘটনার মূল পাণ্ডা নান্টে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার সকাল থেকে হেমননগর কোস্টাল থানা এলাকার কালিতলা পঞ্চায়েতের জঙ্গল লাগোয়া সামসেরনগরে ভূপতি মণ্ডলের বাড়িতে নজর রেখেছিলেন তাঁরা। ঠিক ছিল সন্ধ্যা নামলেই শুরু হবে অপারেশন। পরিকল্পনামতো সেই ভাবে সব চললেও, এক সময়ে বাড়ির ভিতরে থাকা তিন জন যুবক বুঝে যায়, বাইরে পুলিশ অপেক্ষা করছে। পিছনের দরজা দিয়ে সঙ্কীর্ণ খালের জলে ঝাঁপ দিয়ে সুন্দরবনের আরও ভিতরে চলে যেতে চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে যায় গোয়েন্দাদের হাতে।
এ দিনের অভিযানে থাকা এক অফিসার জানান, বিকেল হতেই তাঁরা বাড়ি ঘিরে ফেলে অভিযুক্তদের বাইরে আসার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু দুষ্কৃতীরা ঘর থেকে বার হতে চায়নি। শেষে গুলি চালানোর কথা বলতেই কাজ হয়। দুষ্কৃতীরা দরজা খুলে দেয়। তবে দরজা খুলে দিলেও শেষবারের মতো পালানোর চেষ্টাও করে তারা। বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে তিনজনে কুড়েখালি নদীর জলে ঝাঁপিয়ে সুন্দরবনের জঙ্গলের মধ্যে ঢুকতে যায়। কিন্তু আগে থেকে নদীতে ভুটভুটি রেখেছিল পুলিশ। জঙ্গলের মধ্যে পালানোর আগেই তাদের হাতে ধরা দিতে বাধ্য হয় ভোদকা, বাপ্পা এবং ধনঞ্জয়। এ দিন কলকাতার প্রগতি ময়দান এলাকা থেকে অস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হয় অপর এক অভিযুক্ত সম্রাট মণ্ডলকে।
কিন্তু কী করে অভিযুক্তেরা হিঙ্গলগঞ্জ পৌঁছল? তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, গত বুধবার রাতে গুলি চালানোর পরই বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তিন জন ধামাখালি পৌঁছয়। সেখান থেকে ভুটভুটি এবং মাছ ধরার নৌকা করে পৌঁছয় হেমনগরের যোগেশগঞ্জ এবং পরে সামসেরনগরে। সেখানে পৌঁছে তিন জন নিজেদের পর্যটক বলে পরিচয় দেয় এবং স্থানীয় ভূপতি মণ্ডলের বাড়িতে ঘর ভাড়া নেয়। চব্বিশ-পঁচিশ বছরের তিন যুবককে দেখে গ্রামবাসী কিংবা বাড়ির মালিকের কোনও সন্দেহ হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তের গ্রামে হঠাৎ করে অপরিচিত লোক দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় পুলিশের।
স্থানীয় পুলিশ দেরি করেনি। খবর পাঠায় পুলিশ সুপারের কাছে। সেখান থেকে খবর আসে লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখার গোয়েন্দাদের কাছে। কিন্তু নিশ্চিত হওয়ার দরকার ছিল। তাই কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযুক্তদের বিবরণ চান তাঁরা। আর তার পর নিশ্চিত হওয়ার পরেই হিঙ্গলগ়়ঞ্জের পথে রওনা হয়। সোমবার রাতেই ধৃতদের নিয়ে গোয়েন্দারা কলকাতার দিকে রওনা দিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবার কলকাতার আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy