Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

ব্রিগেডমুখী মিছিলের চাপে যানজট, ভুগল শহর

লালবাজারেরও দাবি, কয়েকটি রাস্তা ভিআইপি-দের যাতায়াতের জন্য বন্ধ রাখায় এবং অন্য কিছু রাস্তা দিয়ে মিছিল যাওয়ায় শহরবাসীকে যানজটে পড়তে হয়েছে ঠিকই, তবে তা অল্প সময়ের জন্য।

শনিবার সমাবেশের জেরে অবরুদ্ধ বিদ্যাসাগর সেতু। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

শনিবার সমাবেশের জেরে অবরুদ্ধ বিদ্যাসাগর সেতু। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

সরকারি হোক বা বেসরকারি, অধিকাংশ বাসই রাস্তায় ছিল না। হাতে গোনা যে ক’টি গাড়ি নেমেছিল, বেলা বাড়তে তারাও মাঝেমধ্যে আটকে পড়ছিল ব্রিগেডমুখী মিছিলের চাপে। শনিবার ব্রিগেডের সমাবেশের জেরে এ ভাবেই কিছু রাস্তা যানজটে আটকে যাওয়ায় ভোগান্তি হল শহরের। ট্র্যাফিক পুলিশ যদিও দাবি করেছে, তাদের তৎপরতায় যানজট হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি।

লালবাজারেরও দাবি, কয়েকটি রাস্তা ভিআইপি-দের যাতায়াতের জন্য বন্ধ রাখায় এবং অন্য কিছু রাস্তা দিয়ে মিছিল যাওয়ায় শহরবাসীকে যানজটে পড়তে হয়েছে ঠিকই, তবে তা অল্প সময়ের জন্য। সেই ভোগান্তি হয়েছে দক্ষিণ এবং মধ্য কলকাতার কয়েকটি রাস্তায়। যদিও পথে নামা শহরবাসীদের অনেকেই জানিয়েছেন, পুলিশের দাবি পুরোপুরি ঠিক নয়। যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকে গন্তব্যে পৌঁছতে যথেষ্টই বেগ পেতে হয়েছে তাঁদের।

এ দিন সকাল আটটা থেকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের ব্রিগেডমুখী মিছিলের দখলে চলে যায় শহরের বিভিন্ন রাস্তা। উত্তরবঙ্গ থেকে আগে আসা দলীয় সমর্থকেরা সকালে প্রথমে ব্রিগেড ভরাতে শুরু করেন। সল্টলেক এবং কসবা থেকে আসা সমর্থকদের দেখা যায়, মাঠের সামনের দিকে ভিড় বাড়াতে। বেলা বাড়তেই হাওড়া সেতু, স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে ব্রিগেডে আসে তৃণমূল সমর্থকদের একের পর এক মিছিল। বি টি রোড ও শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, জওহরলাল নেহরু রোড হয়ে এগোয় একাধিক মিছিল। মিছিল আসতে দেখা যায় শিয়ালদহ, মৌলালি, এস এন ব্যানার্জি রোড, ধর্মতলা হয়েও। হাজরা থেকেও আসে মিছিল।

অনিয়ম: মৌলালি মোড়ে চলছে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া শনিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, সকাল আটটার পর থেকেই ওই ছোট-বড় মিছিল আসতে থাকায় আশুতোষ মুখার্জি রোড, এ জে সি বসু রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, জওহরলাল নেহরু রোডে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সকাল সাড়ে দশটার পরে বন্ধ হয়ে যায় ডাফরিন রোড, মেয়ো রোডও। ব্রিগেডমুখী সমর্থকদের গাড়ির চাপে বন্ধ হয়ে যায় খিদিরপুর রোড এবং রেড রোডের যান চলাচলও। রাস্তার এক পাশে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়ি। সভা শুরু হওয়ার আগেই কার্যত গাড়ির চাপে অবরুদ্ধ হয়ে যায় পার্ক স্ট্রিট। এক সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় জওহরলাল নেহরু রোডের গাড়ি চলাচলও।

এ দিন সকাল ন’টার পরে বাঁশদ্রোণীর বাড়ি থেকে বি বা দী বাগ যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন অমিতাভ সরকার। রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটি এসি বাসে চাপেন তিনি। যানজট ঠেলে বাসটি কালীঘাট পৌঁছনোর পরেই মিছিলের জন্য আটকে পড়ে। প্রায় ২০ মিনিট আটকে থাকার পরে পুলিশ হাজরা মোড় থেকে বাসটি ঘুরিয়ে দেয় বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে। বাধ্য হয়ে সেখানে নেমে মেট্রোয় চেপে রওনা দেন অমিতাভ। পুলিশ জানিয়েছে, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড এবং আশুতোষ মুখার্জি রোড দিয়ে ধর্মতলার দিকে একের পর এক মিছিল যাওয়ার ফলেই গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য পথে পাঠাতে হয়েছে। রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘুরিয়ে দিতে হয় সমর্থকদের গাড়িও। দক্ষিণের দিক থেকে আসা ব্রিগেডমুখী সব গাড়িকেই হাজরা মোড়ে থামিয়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। বাসে থাকা সমর্থকেরা সেখান থেকে হেঁটেই সভাস্থলে পৌঁছন।

এ দিন ভিআইপি-দের যাতায়াতের জন্য কুইন্স ওয়ে, ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউ এবং হসপিটাল রোড দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। জওহরলাল নেহরু রোড দিয়ে মিছিল আসায় উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার মধ্যে চলাচল করা গাড়িগুলিকে বিপাকে পড়তে হয়। মল্লিকবাজারের দিক থেকে আসা হাওড়ামুখী বাসগুলিকে হেস্টিংস মোড় হয়ে যেতে হয়েছে।

লালবাজারের একটি অংশের দাবি, ভিড় হবে আশঙ্কা করেই শুক্রবার রাত থেকে ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা রাস্তায় নেমেছিলেন বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে, যাতে শহরের বাইরে থেকে আসা গাড়ি কোনও ভাবেই রাস্তা অবরুদ্ধ করতে না পারে। কিন্তু শনিবার সকাল থেকেই সমর্থক-বোঝাই বাইরের গাড়ি আসায় আটকে যায় বিভিন্ন রাস্তা। পুলিশের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘রাস্তার গতি মসৃণ রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন ট্র্যাফিক বিভাগের অফিসারেরা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE