উন্নয়নের দাবি নিয়ে নয়, একেবারে পাটিগণিতের নিয়মে রাজনৈতিক লড়াই এ বার উত্তর ২৪ পরগনার জেলাসদর এবং রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন পুরসভা বারাসতের ভোটে। এক দিকে, সেই রাজনৈতিক লড়াই শাসকের সঙ্গে বিরোধীর। কোথাও আবার লড়াই হচ্ছে দলের অন্দরেই।
২০১০-র পুরভোটে ৩২টি আসনের মধ্যে ১৬টি আসন পেয়ে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। বামেরা পায় ১৩টি, কংগ্রেস একটি ও নির্দল দু’টি আসন। ২০১১-র বিধানসভা ভোটে ৩১টি আসনে এগিয়েছিল তৃণমূল। বামেদের জোটে মাত্র একটি। আবার গত বছরের লোকসভা নির্বাচনে ২৯টি আসনে এগিয়েছিল তৃণমূল এবং সিপিএম একটিতে। সে বার বিজেপি-র প্রাপ্তিযোগ হয় দু’টি আসন। গত ছ’মাসের মধ্যে একটি বিধানসভা ও একটি লোকসভা উপনির্বাচন দেখেছে এই জেলার বসিরহাট ও বনগাঁ। তার পর থেকে সেই রাজনৈতিক সমীকরণে তেমন কিছু বদল হয়নি।
কেন এই অবস্থা? তার অন্যতম কারণ সাংগঠনিক দুর্বলতা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার সিপিএম এবং শরিকেরা। বারাসতে বরাবরই ক্ষমতা ধরে রেখেছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। কিন্তু মনোনয়নের সময়ে প্রতীক ঠিকমতো দিতে না পারায় চারটি প্রার্থী পদ বাতিল হয়েছে ব্লকের। তার মধ্যে এক জন বিদায়ী কাউন্সিলরও ছিলেন।
মোট ৩৫টি আসন রয়েছে বারাসত পুরসভায়। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের সন্দীপ ঘোষের (বাপ্পা) বিরুদ্ধে এ বার লড়ছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী না থাকলেও আমাদের ফল ভাল হবে। জমি ছাড়ছি না। তৃণমূল বাইরে থেকে লোক আনছে। আমাদের মেয়ে-বৌরাও আঁশবটি নিয়ে তৈরি।’’ তৃণমূলের বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান সমীর চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের গোঁজ। ১৭ নম্বরেও নির্দল হিসেবে লড়ছেন প্রাক্তন কাউন্সিলর ও তৃণমূল নেতা অতনু ঘোষ।
সংগঠিত নয় সিপিএম-ও। তবে সে সব সমস্যা কাটিয়ে পুরভোটের ফল আশাপ্রদ হবে বলেই দাবি সিপিএমের জেলা সম্পাদক নেপালদেব ভট্টাচার্যের। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে লড়াই পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের দেবব্রত বসুর (বাচ্চু)। ভোট শান্তিপূর্ণ হবে বলে প্রদ্যুৎবাবু দাবি করলে দেবব্রতবাবুর পাল্টা জবাব, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোট হলে সিপিএম অনেক আসনই পাবে।’’ একই দাবি ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী রত্না ভট্টাচার্যের। দু’বারের কাউন্সিলর রত্নাদেবীকে হারাতে ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর অমরচন্দ্র দে-র মতো প্রবীণ নেতাকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কাউন্সিলর সজল ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে প্রার্থী সিপিএম কাউন্সিলর সুশীল সরকার। গত বার ওই ওয়ার্ডে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা তাপস দাশগুপ্তকে হারিয়েছিলেন সুশীলবাবু। তাপসবাবু এ বার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী। বাড়ি বাড়ি ঘোরার ফাঁকে বলেন, ‘‘এ বার বিপুল ভোটে জিতব।’’
ইতিমধ্যেই পুরভোটে বহিরাগতদের আনাগোনা এবং তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগ করতে শুরু করেছেন রাজ্যের একমাত্র বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য-সহ জেলা বিজেপি নেতারা। এটা কি তবে ভোটের আগেই ওয়াকওভার? মানতে নারাজ শমীকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘সর্বত্রই প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। লড়াই হবে সেয়ানে-সেয়ানে। একটি বাদে সব ক’টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। টিকিট না পেয়ে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি-র হয়ে লড়ছেন তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জনা বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘ক্লাব, সাধারণ মানুষ পাশে আছেন। তৃণমূল জঘন্য ভাষা ব্যবহার করছে। ফ্লেক্স, পোস্টার ছিঁড়ে দিচ্ছে। মানুষ এর জবাব দেবে।’’ নিজের ওয়ার্ডটি ছাড়াও আরও বেশ কিছু ওয়ার্ড বিজেপি পাবে, দাবি রঞ্জনাদেবীর।
গোষ্ঠী-কোন্দলে জেরবার কংগ্রেস। এই পুরসভায় বেশ কিছু ওয়ার্ডে প্রার্থীই দিতে পারেনি। বিগত বোর্ডে কেবল ৯ নম্বর ওয়ার্ডটিই ছিল কংগ্রেসের। কাউন্সিলর মানসী দাশগুপ্তের স্বামী অরবিন্দ দাশগুপ্ত এ বার ৯ নম্বরের তৃণমূল প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে লড়ছেন নিজের ভাই দীপক (ছানা) দাশগুপ্ত।
বড় ব্যবধানে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত বিদায়ী চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়। ২৫ বছর ধরে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জিতে চলেছেন প্রাক্তন এই শিক্ষক। সুনীলবাবুর কথায়, ‘‘আমি মানুষ ভালবাসি, মানুষও আমাকে ভালবাসে। নিজের ওয়ার্ডের পাশাপাশি গোটা বারাসতে সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’’
আগে ছিল বিবর্ণ। এখন ঝাঁ-চকচকে, বাতানুকূল বারাসত পুরসভায় বসে পানীয় জল থেকে শুরু করে নদর্মা, আলো, পুকুর সংস্কারের সেই পরিসংখ্যানই দিচ্ছিলেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলপ্রার্থী অশনি মুখোপাধ্যায়। বারাসতের সাংসদ কাকলী ঘোষ দস্তিদারের কথায়, ‘‘গত ৫ বছরে বারাসতে পুরসভা ব্যাপক উন্নয়ন তো করেছেই, পাশাপাশি সাংসদ-বিধায়ক কোটার টাকাতেও প্রচুর কাজ হয়েছে। সে জন্য প্রায় সব ক’টি আসনেই আমরা জিতব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy