নির্মল মাজি এবং প্রশান্ত ভট্টাচার্য।
তাঁদের সংগঠনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগাযোগ নেই বলেই দাবি সদস্য-চিকিৎসকদের। কিন্তু ওই সংগঠনের সভাপতি পদে যে দু’জন লড়াই করছেন, তাঁরা কেউই রাজনীতির সঙ্গে সংযোগবিহীন নন। এক জন প্রার্থী স্বীকার করছেন, তিনি তৃণমূলপন্থী। অন্য জন রাজ্যের শাসকদলের বিধায়ক। তিনি অবশ্য এক ধাপ এগিয়ে। তাঁকে জয়যুক্ত করার প্রচারে দাবি করা হয়েছে, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচিত প্রার্থী!
সব মিলিয়ে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কলকাতা শাখার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিবাদ তুঙ্গে উঠেছে। মঙ্গলবার তা প্রকাশ্যে এসেছে। আইএমএ-র কলকাতা শাখার সভাপতি পদে লড়ছেন বিধায়ক তথা চিকিৎসক নির্মল মাজি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন সম্প্রতি ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের করোনা সংক্রান্ত কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকায় থাকা চিকিৎসক প্রশান্ত ভট্টাচার্য। যিনি নিজেও দাবি করেছেন, তিনি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক। ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও এক সময়ে যুক্ত ছিলেন। গত ছ’বছর (তিনটি পর্যায়ে) ধরে আইএমএ-র কলকাতা শাখার সভাপতি পদে রয়েছেন নির্মল। সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন প্রশান্ত।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে নির্মলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন প্রশান্ত ও তাঁর অনুগামীরা। অভিযোগ, তাঁকে সমর্থন না করলে এবং যে সমস্ত চিকিৎসক তাঁর ‘লবি’র নন, তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন নির্মল। এ দিন প্রশান্ত বলেন, ‘‘রীতিমতো মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে ধমকাচ্ছেন উনি। বদলি করে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। আমরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু যাঁর জন্য (নির্মল) বেশির ভাগ চিকিৎসক সরকারের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, আমরা তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’’
নির্বাচনে সহ-সম্পাদক পদে মনোনয়ন জমা দেওয়া চিকিৎসক অমিতাভ দত্তের অভিযোগ, ‘‘বিগত তিনটি পর্যায়ে নির্মলবাবু কোথাও গায়ের জোরে নির্বাচন হতে দেননি। সর্বত্রই স্বঘোষিত, স্বনির্বাচিত হয়ে পদ আঁকড়ে রাখছেন। ওই এক জন ব্যক্তির বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই।’’ সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ পদে এক জন করে এবং সহ-সভাপতি ও সহ-সম্পাদক পদে তিন জন করে নির্বাচিত হবেন। এ ছাড়াও কার্যকরী কমিটির ২৫টি পদে নির্বাচন হবে আইএমএ-র কলকাতা শাখার ভোটে। নির্মল, প্রশান্ত ও তাঁদের অনুগামীরা মিলিয়ে প্রায় ৫৮-৬০ জন মনোনয়ন জমা করেছেন। তা প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ, বুধবার।
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নির্মল বলেন, ‘‘ক্ষমতা আগলে রাখি না। কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে লড়াই না করেন, তা হলে কী করব? তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছি। রোগীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে প্রশান্ত জেল খেটেছেন, এখনও মামলা চলছে। ছাত্র সংগঠন করার সময়েও অনেক দুর্নীতি করেছেন। যৌন হেনস্থার অভিযোগ থাকা এক জনকে সভাপতি পদে কোনও চিকিৎসক মেনে নিতে পারছেন না।’’ আইএমএ-র কলকাতা শাখার ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি প্রোমোটারদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য প্রশান্ত চক্রান্ত করেছেন বলেও এ দিন অভিযোগ করেন নির্মল। যদিও অপর পক্ষের দাবি, সভাপতি হওয়ার পর থেকে বাড়ি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েও নির্মল কিছু করছেন না। যৌন হেনস্থার অভিযোগ সম্পর্কে প্রশান্ত বলেন, ‘‘অনেকের বিরুদ্ধেই অনেক অভিযোগ ওঠে। মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।’’
আইএমএ-র কলকাতা শাখার মুখপাত্র, নির্মল-ঘনিষ্ঠ কৌশিক বিশ্বাস বলেন, ‘‘পরাজয়ের ভয়ে আগে থেকে নির্মলদার নামে অপপ্রচার হচ্ছে। এই নির্বাচনের সঙ্গে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ যোগ নেই।’’ তা হলে প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন যে প্রচার চালাচ্ছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচিত প্রার্থী লেখা কেন? ‘‘আমি এই সংগঠনেরও সভাপতি। সেখানকার কনিষ্ঠ সদস্যেরা আবেগের বশে ভুল করে ফেলেছেন’’— জবাব নির্মলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy