ফাইল চিত্র।
গতিশীল যানের রাস্তা করে দিতে থমকে গিয়েছে ঐতিহ্যের যাত্রা।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য গত কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি রুটের ট্রাম। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কলকাতার উত্তরের সঙ্গে বি বা দী বাগ সংযোগকারী রুটগুলো। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, শ্যামবাজার, বিধাননগর, রাজাবাজারের ডিপো থেকে যে ট্রামগুলো বি বা দী বাগ এলাকায় আসত, সেই সব রুট গত কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের এক আধিকারিক জানান, বিধান সরণি দিয়ে বি বা দী বাগ এবং শিয়ালদহ হয়ে বি বা দী বাগ আসা রুট দু’টিও ছিল যথেষ্ট লাভজনক। প্রচুর অফিসযাত্রী, কলেজ পড়ুয়া এবং বয়স্ক, যাঁরা বি বা দী বাগ এলাকায় আসতেন তাঁদের কাছে ট্রামই ছিল ভরসা।
শুধু উত্তর নয়। দক্ষিণের খিদিরপুর, গড়িয়াহাট, পার্ক সার্কাস, বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ ডিপো থেকে বি বা দী বাগ এলাকায় আসা সমস্ত ট্রামই এসে থমকে যাচ্ছে ধর্মতলায়। ফলে শহরের দক্ষিণ থেকেও মানুষ ট্রামে সরাসরি বি বা দী বাগ এলাকায় আসতে পারছেন না। বালিগঞ্জ এলাকা থেকে নিয়মিত ট্রামে চেপে অফিস পাড়ায় আসা কয়েক জন যাত্রী জানান, বি বা দী বাগ এলাকায় ট্রাম বন্ধ হওয়ায় বদলে গিয়েছে রুটিন। পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম সূত্রে খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য কলকাতার উত্তর বা দক্ষিণ থেকে ট্রাম বি বা দী বাগে ঢুকতে পারছে না। ফলে বহু রুট বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
শহরবাসীর প্রশ্ন, ফের কবে তা চালু হবে? যদিও নির্দিষ্ট ভাবে কবে থেকে তা চালু হবে, তা বলতে পারেননি পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের কর্তারা।
বৌবাজার এলাকার বাসিন্দা এক নিত্যযাত্রী বসন্ত মৌলিক জানান, নিয়মিত বি বা দী বাগ এলাকার অফিসে তিনি ট্রামে চেপেই আসতেন। বসন্তবাবু বলেন, ‘‘বাড়ির সামনে থেকে ট্রাম ধরতাম। দূষণ নেই, ভিড় কম। আরামের যাত্রা ছেড়ে এখন ভিড় বাসে উঠে অফিসে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’’ অফিস বা অন্য কাজে যাঁরা নিয়মিত ট্রামে চাপতেন, গত কয়েক মাসে তাঁদের ভোগান্তি বেড়েছে। পাশাপাশি শহর থেকে পরিবেশবান্ধব এই যানের বিভিন্ন রুট ধীরে ধীরে বন্ধ হওয়ায় কলকাতা থেকে ট্রাম হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে।
লালদিঘি বা শিশির ভেজা রেসকোর্সের পাশ দিয়ে হেলেদুলে চলেছে ট্রাম। নিশ্চিন্তে উঠছেন-নামছেন অফিসযাত্রী, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, বয়স্করা। ট্রামের ঢংঢং আওয়াজে বি বা দী বাগ এলাকা যেন আরও জমজমাট। ট্রামে চড়তে ভালবাসেন এমন মানুষদের মতে, যানবাহনের ভিড়ে কলকাতার হেরিটেজ ট্রাম বি বা দী বাগ এলাকার সৌন্দর্য বাড়াত।
পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (যুগ্ম) সুদীপ মিত্রের আশ্বাস, ‘‘কী ভাবে বন্ধ রুটগুলোয় ফের ট্রাম চালানো যায়, তা নিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়ার যে সব রুট বন্ধ রয়েছে সে সবের বিকল্প পথ খোঁজা হচ্ছে।’’
কলকাতার ট্রাম নিয়ে দীর্ঘ দিন গবেষণা করছেন শৌভিক মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে মনে রাখা উচিত, সারা দেশে একমাত্র কলকাতাতেই ট্রাম চলে। পরিবেশবান্ধব ট্রাম হেরিটেজ তালিকাভুক্ত। গতি বাড়াতে ট্রাম বন্ধ করে দিলে তা হবে হেরিটেজে হানা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy