Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Hastings

কাদের তার ছিঁড়ে দু’টি মৃত্যু, উত্তর অজানাই

ওটা কীসের তার ছিল, তা এখনও জানা যায়নি।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫৮
Share: Save:

ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তবু জানা গেল না, ঠিক কীসের তার ছিঁড়ে পড়ে হেস্টিংস মোড়ে শেষ হয়ে গেল দু’টি প্রাণ। শুক্রবার রাত পর্যন্ত এ নিয়ে বিভ্রান্ত কলকাতা

পুলিশ জানিয়েছে, সব সরকারি দফতরেই ছুটি চলছে। ফলে ওটা কীসের তার ছিল, তা এখনও জানা যায়নি। বেশ কিছু জায়গায়

চিঠি পাঠানো হয়েছে। ছুটি না মেটা পর্যন্ত আসল ব্যাপার জানা সম্ভব হবে না।

বিদ্যাসাগর সেতুর যে র‌্যাম্পটি হেস্টিংস মোড়ে

মিশেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে এক মহিলাকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়েরা। পাশেই একটি তার বিপজ্জনক ভাবে ঝুলতে দেখে সন্দেহ হয় তাঁদের। মহিলা

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন ভেবে বাঁশ দিয়ে ঠেলে তাঁকে সোজা করা হয়। তখনই দেখা যায়, মহিলার কোলে রয়েছে একটি শিশুকন্যা। দু’জনেরই দেহ প্রায় নিথর। এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসকেরা দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

ওই ঘটনার পরেই এ নিয়ে শোরগোল পড়ে নানা

মহলে। জানা যায়, হেস্টিংস মোড়ের কাছে বিদ্যাসাগর সেতুর নীচের ঝুপড়িতে থাকতেন শাহিদা বিবি নামে ওই মহিলা। পাঁচ ছেলে-মেয়ের সংসারে বছর আঠারোর বড়

মেয়ে ছাড়া সকলেরই বয়স দু’মাস থেকে ১০ বছরের মধ্যে। শাহিদার স্বামী সঞ্জীব শেখ পেশায় রংমিস্ত্রি। তাতেও সংসার চলে না। দু’মাসের কোলের সন্তানকে নিয়ে তাই প্রতিদিনই হেস্টিংস মোড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে বেরোতেন

শাহিদা। বৃহস্পতিবারও বেরিয়েছিলেন। ওই মহিলার বৃদ্ধ বাবা শেখ সুবেদ আলি শুক্রবার বলেন, ‘‘দুপুর একটা নাগাদ ঝড়-বৃষ্টির পরে রাস্তার ধারের একটি রেলিংয়ে হাত দিতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় মেয়ে। নাতনিকেও

বাঁচানো যায়নি।’’

তবে তারটি কীসের ছিল?

এই প্রশ্নেরই রহস্য এখনও কাটাতে পারেনি পুলিশ। যে রেলিংয়ে মহিলা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট

হয়েছেন, তার পাশ দিয়েই গিয়েছে ট্রামলাইন। স্থানীয়দের অনেকের দাবি, তারটি ট্রামেরও হতে পারে। একটি অংশ আবার দায়ী করেছে ওই রাস্তার মোড়ে লাগানো গ্লো সাইনবোর্ডকে। ওই বোর্ড থেকেই ছেঁড়া তার ঝুলতে দেখেছেন বলে তাঁদের দাবি। এক বাসিন্দার আবার অভিযোগ, ‘‘বিদ্যুতের তার সংক্রান্ত ব্যাপার যখন, তখন তো সেটা সিইএসসি-র দেখার কথা।’’ এলাকাটি কলকাতা পুলিশের হেস্টিংস থানার অন্তর্গত। সেখানকার তদন্তকারী আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘চিঠি দিয়ে সিএসসিই-র কাছ থেকে আমরা এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম। তারা জানিয়ে দিয়েছে, তাদের সব তারই মাটির নীচ দিয়ে গিয়েছে। তবু সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।’’

এই সব টালবাহানা নিয়ে অবশ্য ভাবতেই চান না শাহিদার মা নুরজাহান বিবি। তাঁর এক কোলে শাহিদার দু’মাসের ছেলে। অন্য হাতে ধরা শাহিদার চার মাসের ছেলের হাত। পায়ে জুতো তো দূরের কথা, পরনের পোশাকও শতচ্ছিদ্র। কোনও মতে ঝুপড়ির ঘর থেকে বেরিয়ে নুরজাহান বললেন, ‘‘কার জন্য মেয়ের এমন মৃত্যু, জানি না। শুধু সবাই মিলে এই বাচ্চাগুলোকে কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিক। ওর মা-ই তো ওদের খাওয়াত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hastings Electrocution Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE