ভাঙচুরের পরে সেই ক্লাব। রবিবার, মহিষবাথানে। নিজস্ব চিত্র
দোকান ও ক্লাব ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল মহিষবাথান এলাকায়। শনিবার গভীর রাতে বিধাননগর পুর এলাকার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েক জন। রাতে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রাতেই এই ঘটনায় দু’পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে বিধাননগরের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করেছে। রবিবারও এলাকায় ছিল চাপা উত্তেজনা। ভাঙচুরের ঘটনায় দু’পক্ষই তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিত। অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ জানিয়েছে, এটি একটি ব্যক্তিগত বিবাদের ঘটনা। একে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বলে প্রচার করা হচ্ছে। রবিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গোলমালের সূত্রপাত শনিবার রাত বারোটা নাগাদ। অভিযোগ, প্রথমে মহিষবাথানে একটি ক্লাবের কাছাকাছি কাঠের দোকানে হামলা চালান কয়েক জন যুবক। ভাঙচুরও চালানো হয় বলে অভিযোগ। দোকানের কর্মচারী মারফত খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান দোকানের মালিক রজনী বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী মুনমুন বিশ্বাস। রজনী ও মুনমুন দোকানে গেলে ক্ষিতীশ ও তাঁর দলবল তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। এই মারধরের খবর পৌঁছয় রজনীর এক আত্মীয়ের কাছে। তিনি মহিষবাথানের কাছে নয়াপট্টির বাসিন্দা। ঘটনার খবর পৌঁছয় বিধাননগর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়দেব নস্করের কাছে। জয়দেববাবুর দাবি, ‘‘ঘটনাটি শুনেই রজনীকে থানায় অভিযোগ জানাতে বলি।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাতেই রজনী ও মুনমুন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই ক্লাবটি মূলত তৃণমূলকর্মী ক্ষিতীশ মণ্ডল ও তাঁর দলবল দ্বারা পরিচালিত।
স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, রজনীরা থানায় যাওয়ার পরেই অন্য একটি দল ওই ক্লাবে হামলা চালায়। ক্লাবের টিভি, ক্যারম বোর্ড, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর করা হয়। ওই ক্লাবে তখন কয়েক জন সদস্য হাজির ছিলেন। তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ফুলচাঁদ প্রামাণিক নামে ক্লাবের এক সদস্যের মাথা ফেটে গিয়েছে। এর পরে ক্লাবের সদস্যেরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ওই ক্লাবে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিধানগনর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়দেব নস্করের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। জয়দেববাবুর বক্তব্য, শনিবার রাতে ক্ষিতীশ মণ্ডলের দলবল দোকানে হামলা চালায়। তাঁর দাবি, ‘‘ক্লাব ভাঙচুরের ঘটনায় আমার কোনও অনুগামীর যোগ নেই।’’ ক্ষিতীশ মণ্ডলের দাবি, ‘‘দোকান ভাঙচুরের সঙ্গে ক্লাব ভাঙচুরের ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। এই ঘটনায় আমার কোনও যোগ নেই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’
ক্লাবের সদস্যদের অভিযোগ, শনিবার রাতে জনা কুড়ি যুবক মোটরবাইকে করে এসে ক্লাবে ঢুকে হামলা চালায়। আহত চার জনকে হাসপাসাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই জনা কুড়ি সদস্য ঘটনাস্থলে এসে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি
চালায়। ক্লাব সদস্যদের দাবি, ক্লাবে ভাঙচুরের পরে স্থানীয়েরা অবরোধ করেন। তখন উত্তেজনায় দু’-একটি ঢিল দোকানে লেগে থাকতে পারে। তবে দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়নি। পুলিশ অবশ্য গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পরপর দু’টি ঘটনার মধ্যে কোনও যোগসূত্র আছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দু’টি অভিযোগ খতিয়ে দেখেই যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’ স্থানীয় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটি কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়। ব্যক্তিগত বিবাদের জেরেই এমন ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy