Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Dum Dum Fire

পাখিটা কি উড়ে যেতে পেরেছিল, পোড়া বস্তিতে প্রশ্ন বৃদ্ধের

শনিবার ভয়াল আগুনের গ্রাসে গিয়েছে বস্তির প্রায় শতাধিক ঘর। রক্ষা পায়নি গবাদি পশুও। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকেও যদি কিছু অন্তত বার করে আনা যায়, এই আশায় এ দিন ভোর থেকে পোড়া বস্তিতে ভিড় করেছিলেন বাসিন্দারা।

আগুনে পুড়ে ছাই ভিটে। তার মধ্যেই সম্বলটুকু খুঁজতে মরিয়ায়। রবিবার দক্ষিণ দমদম মেলা বাগান বস্তিতে।

আগুনে পুড়ে ছাই ভিটে। তার মধ্যেই সম্বলটুকু খুঁজতে মরিয়ায়। রবিবার দক্ষিণ দমদম মেলা বাগান বস্তিতে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:২৬
Share: Save:

শহর জুড়ে যখন বেশির ভাগ মানুষ পয়লা বৈশাখের আনন্দ উদ্‌যাপনে ব্যস্ত, তখন এই শহরেরই আর এক জায়গায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে শেষ সম্বলটুকু খুঁজে বার করার আকুল প্রচেষ্টা। রবিবার, বাংলা নতুন বছরের প্রথম সকালে এই দৃশ্যই দেখা গেল দক্ষিণ দমদমের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মেলাবাগান বস্তিতে।

শনিবার ভয়াল আগুনের গ্রাসে গিয়েছে বস্তির প্রায় শতাধিক ঘর। রক্ষা পায়নি গবাদি পশুও। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকেও যদি কিছু অন্তত বার করে আনা যায়, এই আশায় এ দিন ভোর থেকে পোড়া বস্তিতে ভিড় করেছিলেন বাসিন্দারা। বিভিন্ন সামগ্রী থেকে তখনও অল্প অল্প ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তারই মধ্যে যে যা পেয়েছেন, তা-ই বস্তায় পুরেছেন। বস্তির এক বাসিন্দা ইউসুফ জানালেন, ভোটার কার্ড থেকে শুরু করে অন্যান্য পরিচয়পত্র, দরকারি নথি— সব কেড়ে নিয়েছে আগুন। তাঁর কথায়, ‘‘কী ভাবে চলবে, জানি না। গরুগুলিকে বাঁচাতে পেরেছি ঠিকই। কিন্তু ওদের খেতে দেব কী?’’

অনেক কষ্টে তৈরি করা গয়নাগাটি কিছু অক্ষত আছে কি না, ছাইয়ের গাদার ভিতর থেকে তন্নতন্ন করে তা বার করার চেষ্টা করছিলেন এক মহিলা। তিনি জানান, বস্তির অনেকে লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। কেউ বা প্লাস্টিক বা কাগজ কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সর্বস্ব সঞ্চয় দিয়ে তাঁরা পরিবারের জন্য বেশ কিছু জিনিস তৈরি করিয়েছিলেন। আগুন থেকে কিছুই বাঁচানো যায়নি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বস্তির বাসিন্দাদের অনেকে পাখিও পুষতেন। এ দিন এক বৃদ্ধকে দেখা গেল, পাখি রাখার খাঁচা খুঁজে চলেছেন। কাঁদতে কাঁদতে বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আদরের পাখিটা উড়ে যেতে পেরেছে কি না জানি না।’’ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় ক্লাব সংগঠনের সদস্যেরা বস্তিবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের পরে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বাসিন্দাকে রবীন্দ্র ভবনে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭৫টি শিশু রয়েছে। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি অস্মি পোদ্দার জানিয়েছেন, বাসিন্দাদের খাবার, পোশাক থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। আগুন লাগার পরে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছিল বিদ্যুৎকর্মীদের। পর্যায়ক্রমে পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

তবে, কী ভাবে এত বড় আগুন লাগল, সেই সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানা যায়নি। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, বস্তির কোনও ঘরে রান্না করার সময়ে কোনও অঘটন, না কি পড়ে থাকা দাহ্য বস্তু থেকে আগুন লেগেছে— তা তদন্তের পরেই স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশকর্তারা প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত সন্দেহজনক কিছু মেলেনি।

দমদম রোডের হনুমান মন্দিরের পরে নবনির্মিত সেতু পার হলেই খালপাড়ে ওই বস্তি। শনিবারই বাসিন্দারা অভিযোগ করেছিলেন, নতুন সেতু তৈরি হওয়ার পরে বস্তির প্রবেশপথের পরিসর কমে গিয়েছে। যার ফলে আগুন লাগার খবর পেয়ে পৌঁছেও উৎসস্থলে যেতে প্রাথমিক ভাবে মুশকিলে পড়েছিল দমকল। শেষে রবীন্দ্র ভবনের পাঁচিলের কিছুটা অংশ ফাটিয়ে ঢুকতে হয় দমকলকর্মীদের।

দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির বাসস্থান তৈরির ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। ইতিমধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের একটি দল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ শুরু করেছে। দক্ষিণ দমদমপুরসভার এক কর্তা জানান, বস্তির বাসিন্দাদের জন্য পরিবেশবান্ধব শৌচাগার, পানীয় জল, ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে কবে আবার মেলাবাগান বস্তি ফিরবে জীবনের চেনা ছন্দে, আপাতত তারই অপেক্ষায় বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE