দূষণ: হাওড়া সেতু লাগোয়া চাঁদমারি ঘাটের কাছেই শহরের নিকাশির জল পড়ছে গঙ্গায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
গঙ্গার ঘাটগুলিই শুধু নয়। কলকাতা এবং হাওড়া— পড়শি দুই শহরের গঙ্গাতীরের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে দূষণ ছড়াচ্ছে অবাধে। গত মাসে রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে হওয়া একটি বৈঠকে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার গঙ্গাতীর প্লাস্টিক এবং অন্য কঠিন বর্জ্য-মুক্ত রাখার
আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন এখনও দেখা যায়নি। বটানিক্যাল গার্ডেন লঞ্চঘাট থেকে গোলাবাড়ি ঘাট হয়ে কলকাতার শোভাবাজার থেকে প্রিন্সেপ ঘাট পর্যন্ত লঞ্চে ঘুরে দেখার পরে পরিবেশকর্মীদের চোখে গঙ্গার ঘাট ও তীরের যে অবর্ণনীয় ছবি ধরা পড়েছে, তা নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন তাঁরা। পরিবেশকর্মী
সুভাষ দত্তের অভিযোগ, দুই পারের পুর বর্জ্য থেকে শুরু করে নির্মাণ-বর্জ্য, শিল্পজাত তরল বর্জ্য এখনও অবাধে গঙ্গায় ফেলা হচ্ছে। বহু জায়গায় নদী তীরের মাটি কেটে ‘খুবলে’ নেওয়া হচ্ছে গঙ্গাকে। তিনি জানিয়েছেন, এই পবিত্র নদীকে অপবিত্র করার অপচেষ্টা
নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক উদাসীনতাও আদালতের সামনে তুলে ধরা হবে।
এক হাজার গ্রাম ও ৫০টি শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গাকে শুদ্ধ রাখতে ১৯৮৪ সালে কেন্দ্রের নির্দেশে তৈরি হয়েছিল গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান (গ্যাপ)। ২০১১ সালে সেটির পরিবর্তে তৈরি হয় ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা (এনএমসিজি)। যার উদ্দেশ্য ছিল জাতীয়, রাজ্য এবং জেলা স্তরে পৃথক পৃথক কমিটি গড়ে গঙ্গাদূষণ ঠেকানো এবং নদীতে জলের প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখা। কিন্তু তাতে কোনও কাজ না হওয়ায় জাতীয় পরিবেশ আদালত একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গঙ্গাতীর সংলগ্ন পুরসভাগুলিকে নির্দেশ দেয়, তরল বর্জ্য সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করে গঙ্গায় ফেলতে। কিন্তু অভিযোগ, এর পরেও অধিকাংশ পুরসভা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোনও পদক্ষেপ না করে সেগুলি অশোধিত অবস্থাতেই গঙ্গায় ফেলছে।
এই অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতেই কলকাতা ও হাওড়ার গঙ্গাতীর ও ঘাটগুলি লঞ্চে করে ঘুরে দেখেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, দুই শহরের গঙ্গাতীরের চিত্র প্রমাণ করে দিয়েছে, প্রশাসনিক ব্যর্থতা কোন মাত্রায় গেলে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীর দুই পাড় কার্যত আর্বজনা ফেলার জায়গা হওয়ার পাশাপাশি তরল দূষিত বর্জ্য ফেলার জায়গাও হয়ে দাঁড়ায়।
পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, হাওড়ার দিকে বটানিক্যাল গার্ডেন লঞ্চঘাট থেকে উত্তরে এগোলেই চোখে পড়বে, দুই দিকের তীরে থাকা একের পর এক বড় বড় নিকাশি নালার পাইপ থেকে ক্রমাগত নদীতে এসে মিশছে নিকাশি-বর্জ্য। যার ফলে জলের রং কালো হয়ে
গিয়েছে। পাশাপাশি, নদী-তীরের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে পড়ে আছে আবর্জনা-সহ প্লাস্টিক ও নির্মাণ-বর্জ্য। জোয়ারের সময়ে সেগুলিও গিয়ে মিশছে গঙ্গায়। ভয়াবহ অবস্থা কলকাতার দিকে পোস্তা এলাকার ঘাট ও তীরের। আর্বজনায় ভরা পাড়েই শৌচকর্ম করছেন স্থানীয় লোকজন। তার পাশেই নিকাশির বড় নর্দমা দিয়ে কালো জল এসে মিশছে গঙ্গায়। হাওড়া সেতুর নীচে মল্লিকঘাটের অবস্থাও অবর্ণনীয়। ফুল বাজারের যাবতীয় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ঘাটের পাশে। আর্বজনায় ভরে গিয়েছে পুরো তীর।
সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও গঙ্গাদূষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই এ বার আমরা আইনি পথে যাব। গঙ্গাতীর ও ঘাটগুলির সব ছবি ও তথ্য প্রমাণ আকারে পরিবেশ আদালতের কাছে পেশ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy