ঘরের পাশেই জঞ্জালের স্তূপ। ছবি: অরুণ লোধ।
বাড়ির শৌচাগারের জল পড়ছে পুকুরে। যেখানে পুকুর নেই, সেখানে সরাসরি রাস্তায় জমা হচ্ছে শৌচকর্মের জল। দেখে-শুনে গা গুলিয়ে উঠছে বাসিন্দাদের। তবু উপায় নেই। এই রাস্তা দিয়েই রোজের চলাফেরা। মনে হতে পারে কোনও অজ পাড়াগাঁয়ের দৃশ্য এটি। তা কিন্তু নয়।
জায়গাটি খাস কলকাতা পুরসভার ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁঠালবেড়িয়া রোডের অন্তর্গত ছোট মসজিদতলা। গর্বের সঙ্গে এলাকাবাসী বলেনও তাঁরা কলকাতার বাসিন্দা। ‘সুসজ্জিত’ এই কলকাতার মধ্যেই যে আছে অন্য এক কলকাতা। যেখানে প্রতিদিনই মানুষ ভুগছেন পানীয় জলের সমস্যায়। নিকাশির কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থা আজও তৈরি হয়নি সেখানে। অথচ এঁরা ভোট দেবেন আগামী ১৮ এপ্রিল। কলকাতা পুরবোর্ড গঠনে ওঁদেরও ভূমিকা থাকবে। এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘ওই এলাকায় জল ও নিকাশি নিয়ে সমস্যার কথা শুনেছি। এলাকাটা খুবই ঘিঞ্জি। রাস্তাও সরু। তাই এত বছরে উপযুক্ত নিকাশি তৈরিতে সমস্যা হয়েছে।’’
মসজিদতলায় ঢুকলেই নজরে আসে পুকুর সংলগ্ন বাড়িগুলির রাস্তা সরু করে কাটা। বর্জ্য জল পুকুরে পড়ায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। কোথাও বা বাড়ির কাছে কুয়ো খুঁড়ে শৌচাগারের জল ধরে রাখতে হয়। যেখানে কুয়ো করার মতো জায়গা নেই, সেখানে আবার নিকাশির জল ধরে রাখতে হয় ড্রামে। তাতে দুর্গন্ধও বেরোয়। এ সবেই প্রায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন এলাকার বাসিন্দারা।
আজও বটতলা থেকে সফির কাঠগোলা রেললাইন পর্যন্ত এলাকায় কোনও নিকাশির ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। কাঁঠালবেড়িয়া রোডের উপরে মাজার পর্যন্ত অংশে হাই ড্রেন হয়েছে ২০১০-এ। এর পর থেকে এলাকার মসজিদ ছাড়িয়ে সাত ভাইয়ের পাড়ার শুরু পর্যন্ত কোনও নর্দমাই নেই। সাত ভাইয়ের পাড়া থেকে বটতলা, কিছুটা নর্দমা হলেও তা খুব সরু এবং আবর্জনায় ঢাকা।
বাইরের কাউকে দেখলে ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেন না তাঁরা। পানীয় জলের সমস্যা তাঁদের নিত্য সঙ্গী। তাঁদেরই এক জন আমির মুন্সীর কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কয়েক জন গভীর নলকূপ বসিয়ে তেষ্টা মেটাচ্ছেন। তবে সেই সামর্থ ক’জনেরই বা আছে!’’ আর সরকারি সাহায্যে তৈরি রাস্তার নলকূপগুলিও ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। বারবার জানিয়েও মেরামতির কোনও ব্যবস্থাই হয় না।
আবর্জনা সাফাই নিয়ে বাসিন্দা িরনা খাতুন জানাচ্ছেন, ‘‘পুরসভার সাফাইকর্মীরা এলাকার ফাঁকা জায়গায় যত্রতত্র, এমনকী পুকুরেও আবর্জনা ফেলে দিয়ে যায়। বারাবার বলেও কোনও কাজ হয়নি।’’
এ সব নিয়ে পুরসভা, পুর-প্রতিনিধি এবং বিধায়ককেও জানানো হয়েছে, দাবি সাদ্দাম হোসেন নামে এক বাসিন্দার। বলেন, ‘‘তখন পুরসভা জানিয়েছিল, এই রাস্তা দিয়ে একটি জলের পাইপ যাওয়াই নিকাশি তৈরির মূল বাধা। ওই পাইপ না তুললে নিকাশির কাজ হবে না।’’ বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করছেন স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি ও মেটিয়াবুরুজ এলাকার তৃণমূলের বিধায়ক মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, “আগের পুর-বোর্ডের সময়ে ডিপ টিউবওয়েল পাম্প হাউস থেকে জলের পাইপ কাঁঠালবেড়িয়া রোড দিয়ে গিয়েছে। তার জন্যে নিকাশির লাইন করা যায়নি।’’
শিন্টু মুন্সী নামে এক বাসিন্দার অভিযোগ, বিধায়ক হওয়ার পরে পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করে মানুষকে জল পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জলের লাইনের কাজ শেষ করেন মমতাজ। কাঁঠালবেড়িয়া রোড সংলগ্ন বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, কাজ শেষে দেখা গেল, তাঁরা জল পাচ্ছেন না। অথচ বদরতলা, কাঞ্চনতলা-সহ ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জল পাচ্ছেন।
এখন অবশ্য মমতাজ বলছেন, “কোনও জলকষ্ট নেই। মিথ্যে বলছেন বাসিন্দারা।’’ তিনি জানান, রাস্তার কয়েকটি নলকূপ রয়েছে। আর অস্থায়ী নিকাশির ব্যবস্থা করতে ড্রেন করতে চেয়েছিলাম। বাসিন্দারা বাধা দেওয়ায় করতে পারিনি। এর জন্য বরাদ্দ ৩৪ লক্ষ টাকা ফিরে গিয়েছে।”
কী বলছেন পুরসভার কর্তারা?
কলকাতা পুরসভার জল বিভাগের ডিজি বিভাস মাইতি বলেন, ‘‘নিকাশির কাজে ওই এলাকায় জলের লাইন তুলতে বললে তুলে দেওয়া হবে।’’ মেয়র জানান, কেইআইআইপি-২ প্রকল্পে নিকাশি নিয়ে বিস্তৃত পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেই আওতায় ওই কাজও হবে। পানীয় জল দেওয়া নিয়ে তাঁর প্রতিশ্রুতি, ‘‘গার্ডেনরিচ জল-প্রকল্পের পাঁচ কোটি গ্যালন জল গাঁধী ময়দান হয়ে দ্রুত পৌঁছবে ওখানেও।’’ যদিও ভোটের আগে এমন আশ্বাস তাঁরা আগেও শুনেছেন। কিন্তু কাজ হয়নি, আক্ষেপ এলাকাবাসীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy