ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
অরিত্র: টিভিতে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, কালো টাকা উদ্ধারে আর দুর্নীতি রুখতেই এ ভাবে আচমকা নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত। কিন্তু যাদের অত কালো টাকা, তারা কি আর বাড়িতে কলসিতে রাখে? সে তো বিদেশি ব্যাঙ্কে। নোট বাতিল তা হলে কালো টাকা উদ্ধারের জন্য নয়? বরং নাজিব, সিমি, কাশ্মীর, ওয়ান র্যাঙ্ক-ওয়ান পেনশনের মতো বিষয়গুলো থেকে দেশের মানুষের নজর ঘোরাতেই!
কৃষ্ণদেব: আমার কিন্তু মনে হয় টাকার কালোবাজারি বা জাল হওয়া রুখতে এ রকমই একটা স্টেপ জরুরি ছিল। ওই টাকাগুলোর একটা বড় অংশই তো সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের হাতিয়ার। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে যদি নোট বাতিল করে সেটা আটকানো যায়, দেশের জন্যই তো ভাল! আর সিদ্ধান্তটা নিশ্চয়ই এক দিনে হয়নি। আরবিআই-এর বিশেষজ্ঞরা ভেবেচিন্তেই এগিয়েছেন। এত গোপনীয়তাও সে জন্যই ছিল।
শাওন: দূর! কে বলেছে কেউ জানত না? না জানলে রাত সাড়ে আটটার ঘোষণার পরে রাতের মধ্যে ছাপা হয়ে যাওয়া খবরের কাগজের ফ্রন্টপেজে পরদিন সকালেই অত বড় বিজ্ঞাপন দেখিস কী করে শুনি? যাদের বিজ্ঞাপন, তাদের কাছে খবর না থাকলে অত তাড়াতাড়ি এটা হতো? কিংবা ধর, কিছু ডিপার্টমেন্টাল স্টোর সঙ্গে সঙ্গে মাঝরাত অবধি খোলা থাকল, দেদার কেনাকাটা হল, সেটাই বা কী করে সম্ভব হলো কর্তৃপক্ষ আগাম না জানলে?
দ্বৈপায়ন: যাঃ বাবা, অনলাইন ওয়ালেট বা শপিং অ্যাপ এমন একটা সুযোগ ছেড়ে দেবে নাকি? আজব তো! এগুলো তো ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন!
গীতশ্রী, শাওন: পেপার মানি, ডিজিটাল মানি, ক্যাশলেস কেনাকাটা হবে, সবই তো বুঝলাম। কিন্তু আমার-তোর তো আর সমস্যা হচ্ছে না। যাদের হচ্ছে, তারা অনলাইন টাকাকড়ি বা কেনাকাটা কোনওটাতেই অভ্যস্ত নয়। তাদের অনেকেই দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষ। তাদের কথা না ভেবে এ রকম করে ফেলতে পারেন একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী? যে দেশে নাকি একটা বড় অংশই গরিব আর নিম্ন মধ্যবিত্ত?
শানু: সত্যি! এ ভাবে কি আর কালো টাকা পাওয়া যায়? সে তো বিদেশে! সেখান থেকে উদ্ধার করে দেখালে না হয় বুঝব দেশের এই সাফারিংটা দাম পেল।
শাওন: আমার কিন্তু আরও একটা কথাও মনে হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রচার তো মোটামুটি নগদ টাকার ভরসাতেই হয়। নোট বাতিল করাটা বিরোধী দলের প্রচার বানচাল করতেও কাজে দেবে।
দ্বৈপায়ন: যা-ই বলিস, আমার কিন্তু মনে হয় এই ডিসিশনটায় দেশের ভবিষ্যৎ ভাল হলে এইটুকু কষ্ট স্বীকার করাই যায়! হিসেবের বাইরে থাকা টাকাগুলো ইকনমিতে ঢুকলে দেশের ভবিষ্যতের পক্ষেই তো ভাল।
উষসী: থাম তো! এখনকারটা ভাব আগে। পাঁচশো-হাজার বাতিল, একশো শেষ। হাতে রইল দু’হাজারের নোট। ভাঙিয়ে দেবে কে শুনি? দু’হাজার টাকাই বা কত জন রোজগার করে উঠতে পারে?
অরিত্র: দেশের ভাল! সবটাই পলিটিক্স বাবা!
গীতশ্রী: আর ভুগবে কে? সাধারণ মানুষ। তাদের বিপদে ফেলতেই
তো করা!
অরিত্র, শানু: বলা হচ্ছে, এ ভাবে লোকে সরকারকে কালো টাকার হদিস জানাতে বাধ্য হবে। ভাব, কারও কাছে তিন কোটি টাকা আছে। সে কি আর নিজের অ্যাকাউন্টে জমা দেবে? ভাগ করে অনেকগুলো লোককে দিয়ে তাদের অ্যাকাউন্টে জমা করাবে না? পারবে ধরতে তখন?
শানু: এই মুহূর্তে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই বা ক’জনের আছে?
ফজল: গরিব মানুষ তো বটেই, ঝামেলা পোয়াচ্ছে তো রোগী, বাজারের ছোটখাটো ব্যবসায়ী, অন্য শহরে পড়তে যাওয়া স্টুডেন্ট, ট্যুরিস্টও। এদের কথা ভাবা উচিত ছিল না? এটুকু প্রিপারেশন করা যেত না নাকি?
কৃষ্ণদেব, দ্বৈপায়ন: হ্যাঁ, এটা অবশ্য ঠিক। ইনফ্রাস্ট্রাকচারটা আগে তৈরি করে নিলে এতটা সমস্যায় পড়ত না কেউ।
গীতশ্রী, অরিত্র: মাঝখান থেকে কী হল বল তো! কালো টাকা ধরতে গিয়ে কালোবাজারি বেড়ে গেল। নোট বদল করতে হন্যে হচ্ছে মানুষ আর সেই সুযোগে কিছু লোক ৫০০-র খুচরো করে দেওয়ার নামে ৪০০-৪৫০ টাকা দিচ্ছে। ব্যস, নিট ৫০ টাকা রোজগার। খুচরো নোট নিয়ে তো পুলিশের সামনেই রাস্তায় বসে পড়ছে এরা।
ফজল: আসলে ঠিক কী দাঁড়াল বুঝতে কয়েকটা মাস সময় দিতে হবে।
শাওন, গীতশ্রী: সরকার বলছে, নোট বাতিল তো পেটিএম করলেই হয়! আর সেটা করতে লাগবে স্মার্টফোন। তার মানে তো দাঁড়াচ্ছে, যার স্মার্টফোন নেই, তার ক্রয়ক্ষমতাও নেই।
কৃষ্ণদেব: আরে বাবা, এই স্টেপটায় যদি ২০% কালো টাকারও হিসেব মেলে আর সেটা ইকনমিতে ঢোকে, সেটা কি ভাল নয়?
শানু, অরিত্র: আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো বলেছিলেন, বিদেশে জমানো কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনবেন? তার কী হল? নোট বাতিল করে যাদের শিকার করা যাবে, সেই ডিভানে টাকা রাখা লোকগুলো কি আর আসল টার্গেট? বড়সড় শিল্পপতিরা কিন্তু ভোটব্যাঙ্ক, ফান্ডও বটে। এটা ভুলে যাস না।
কৃষ্ণদেব: টিভিতে কিন্তু দেখাচ্ছিল নোট পুড়িয়েছে লোকে, খালের ধারে-নদীর ধারে বস্তাভরা টাকা ফেলে যাচ্ছে, সেগুলো কে কী বলবি?
অরিত্র: সেই লোকগুলো দেশের কত পার্সেন্ট শুনি?
গীতশ্রী: এরা তো উলুখাগড়া ভাই! রাঘব বোয়ালরা হাতের বাইরেই থাকে। থাকবেও। ধরবে কে?
অরিত্র: আমি তো বলব, সরকার বকেয়া টাকার র্যাঙ্কে প্রথম ১০০ জন লোন-ডিফল্টার শিল্পপতি বা ব্যবসায়ীর লিস্ট বানিয়ে দেখাক! তবে বুঝব!
কৃষ্ণদেব, দ্বৈপায়ন: সে করুক বা না করুক, এখনও নোট বাতিলের এই স্টেপটা নিয়ে একটাই কথা বলব— ইট ক্যান বি ডিবেটেড, বাট ইট কান্ট বি ডাউটেড। চেঞ্জ আসবেই একটা। দেখিস!
গীতশ্রী: এত তুলকালাম কিন্তু উপরে-উপরে, এটা মনে রাখ। ভিতরে কিছু হল কী? না হচ্ছে?
শাওন: পুরনো নোট পাল্টে নতুন। এটা একটা চেঞ্জ বটে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy