Advertisement
১৭ মে ২০২৪
South City Mall

‘টয়লেটে গিয়ে স্তন্যপান করান’! সাউথ সিটিতে মহিলাকে অপদস্থ করলেন কর্মীরাই!

সাত মাসের সন্তানকে নিয়ে সাউথ সিটি মলে যান অভিলাষা পাল। তিনি মলের একটি জায়গায় তাঁর শিশুকে স্তন্যপান করাতে শুরু করেন। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মলের কর্মীরা এসে তাঁকে নিষেধ করে বলেন, ‘‘এখানে স্তন্যপান করানো যাবে না। স্তন্যপান করাতে হলে টয়লেটে যেতে হবে।’’

সাউথ সিটি মলে স্তন্যপান করানোয় মহিলাকে অপদস্থ করার অভিযোগ কর্মীদের বিরুদ্ধে।

সাউথ সিটি মলে স্তন্যপান করানোয় মহিলাকে অপদস্থ করার অভিযোগ কর্মীদের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:০৪
Share: Save:

সাউথ সিটি মলের মধ্যে কোলের শিশুকে স্তন্যপান করানোয় চরম অপদস্থ হতে হল এক মহিলাকে। অভিলাষা পাল নামে ওই মহিলার অভিযোগ, মলের কর্মীরা তাঁকে স্তন্যপান করাতে নিষেধ করেন। এমনকী টয়লেটে গিয়ে স্তন্যপান করানোর কথাও বলেন। পরে তিনি ফেসবুকে ঘটনাটি শেয়ার করতেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সমাজকর্মী ও নারীবাদীরা। শিক্ষাবিদ-সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার বলেন, ‘‘মায়ের স্তন্যপান করেই সন্তান বড় হয়। অথচ সেই ভুমিকা ভুলে গিয়ে যৌন আকর্ষণের বিষয়বস্তু হিসাবেই স্তনকে গণ্য করে মানুষ।’’ সমাজকর্মী ও অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘‘বিমানবন্দরে স্তন্যপানের জন্য আলাদা জায়গা তৈরি হয়েছে। শপিং মলেও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার মতো বাধ্যতামূলক ভাবে স্তন্যপান করানোর মতো জায়গা করা উচিত।’’ নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী সোহিনী রায়ের বক্তব্য, ‘‘সরকারি হাসপাতাল, শপিং মলের মতো জায়গায় স্তন্যপানের জন্য আলাদা জায়গা করা উচিত। দেশে কোনও আইনও নেই এই সংক্রান্ত। কেন ওই মহিলা পাবলিকলি স্তন্যপান করাতে পারবেন না, এটা নিয়েও যেমন কথা উঠতে পারে, তেমনই কোন পরিকাঠামো আমাদের দেশে এখনও নেই। তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।’’

‘‘পাবলিক ব্রেস্টফিডিং’ নিয়ে আমরা আন্দোলনও করেছি, বাঘাযতীন হাসপাতাল ও চিত্তরঞ্জন শিশু হাসপাতাল-সহ বেশ কয়েকটি সরকারি জায়গায় সমীক্ষা করে আমরা দেখেছি, সেখানে আউটডোর বিভাগে শিশুদের স্তন্যপান করানোর জন্য কোনও আলাদা ঘর নেই, শবচেয়ে বড় কথা শৌচালয়ে গিয়ে শিশুকে স্তন্যপান করানোর মতো কথা বলাটাই তো ঠিক নয়। এটা তো মারাত্মক অস্বাস্থ্যকরও’’, এমনটাই জানান সোহিনী।

কিন্তু অভিলাষা পালের ওই পোস্টেও শপিং মলের পক্ষ থেকে বিরূপ মন্তব্য করা হয়। লেখা হয়, এটা কোনও ইস্যু হতে পারে না। শপিং মলে যে স্তন্যপানের মতো জায়গা নেই, সেটা জেনেই দুধের শিশুকে নিয়ে মলে আসা উচিত। বাড়ি থেকেই পরিকল্পনা করে শিশুকে স্তন্যপান করিয়ে তার পর কেনাকাটায় বের হওয়া উচিত। তবু জরুরি পরিস্থিতিতে মলের কর্মীরা সাহায্য করেন। এর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। মল কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তুলে ক্ষোভ আছড়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে বাধ্য হয়ে মল কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে নেন ওই মহিলার কাছে।

আরও পড়ুন: বছরের পর বছর শিকল বেঁধে ধর্ষণ, স্বাভাবিক হতে ১৫ বছর লাগল ওরাংওটাংয়ের!

জানা গিয়েছে, সাত মাসের সন্তানকে নিয়ে সাউথ সিটি মলে যান অভিলাষা পাল। তিনি মলের একটি জায়গায় তাঁর শিশুকে স্তন্যপান করাতে শুরু করেন। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মলের কর্মীরা এসে তাঁকে নিষেধ করে বলেন, ‘‘এখানে স্তন্যপান করানো যাবে না। স্তন্যপান করাতে হলে টয়লেটে যেতে হবে।’’

অভিলাষা পাল শপিং মল থেকে ফিরে ফেসবুকে লেখেন, ‘‘এত বড় মলে কোনও স্তন্যপানের জায়গা নেই! আপনাদের কর্মী আবার টয়লেটে গিয়ে ব্রেস্ট ফিড করাতে বলেন। বিরক্তিকর, অসহ্য। জঘন্য জায়গা।’’ এই পোস্টের পরই নেটিজেনরা ওই মলের বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনায় সরব হয়। তারপর মলের পক্ষ থেকে বিরূপ মন্তব্য করে পোস্ট করায় ক্ষোভ আরও তীব্র হয়।

আরও পড়ুন: ফের বিষমদ, শান্তিপুরে মৃত সাত, ২ লাখ ক্ষতিপূরণের ঘোষণা সরকারের

অবশেষে বাধ্য হয়ে ওই মহিলার কাছে শর্তহীন ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন ওই শপিং মল কর্তৃপক্ষ। আলাদা একটি পোস্ট করে অবশ্য দায় ঝেড়ে ফেলে ‘ফেসবুক হ্যান্ডলিং এজেন্সি’র ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টাও হয়েছে। শপিং মলের ম্যানেজারের পক্ষ থেকে ওই পোস্টে বলা হয়েছে, ‘‘শপিং মলে চেঞ্জিং কাম ফিডিং রুম রয়েছে সব ফ্লোরেই। মলের একটি অংশের সংস্কারের কাজ চলছে। তবু দ্বিতীয় তলায় কিডস টয়লেট, ফিডিং কাম ড্রেসিং রুমও সচল রয়েছে। তার পরও কর্মীরা এরকম ব্যবহার করলে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী।’’

(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

South City Mall Breast Feeding Harassment Viral
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE