Advertisement
১১ জুন ২০২৪

ক্রেতার অভাবে ধুঁকছে বেহাল সুপার মার্কেট

বন্ধ বেশ কিছু দোকানের ঝাঁপ। বাজারের ভিতরে বৈদ্যুতিক তারের জটের নীচেই চলে প্রতি দিনের বিকিকিনি। বাজারে আজও নেই জলের লাইন, নলকূপই ভরসা। মাত্র দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। মান্ধাতার আমলের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ব্যবহারই জানেন না ব্যবসায়ীরা। এই পরিকাঠামো নিয়ে ক্রেতার অভাবে ধুঁকছে বেহালার ডায়মন্ড হারবার রোডের কলকাতা পুরসভা পরিচালিত সখেরবাজার সুপার মার্কেট।

বাজার থাকলেও নেই ক্রেতা।  ছবি: অরুণ লোধ।

বাজার থাকলেও নেই ক্রেতা। ছবি: অরুণ লোধ।

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:২৫
Share: Save:

বন্ধ বেশ কিছু দোকানের ঝাঁপ। বাজারের ভিতরে বৈদ্যুতিক তারের জটের নীচেই চলে প্রতি দিনের বিকিকিনি। বাজারে আজও নেই জলের লাইন, নলকূপই ভরসা। মাত্র দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। মান্ধাতার আমলের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ব্যবহারই জানেন না ব্যবসায়ীরা। এই পরিকাঠামো নিয়ে ক্রেতার অভাবে ধুঁকছে বেহালার ডায়মন্ড হারবার রোডের কলকাতা পুরসভা পরিচালিত সখেরবাজার সুপার মার্কেট।

১৯৭৬-এ বাজারটি তৈরির সময়ে ‘সাউথ সাবারবান মিউনিসিপ্যালিটি’র অধীন ছিল বেহালা। ১৯৮৪-র জানুয়ারি থেকে বেহালা কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত হলে বাজারটিও পুরসভার আওতায় আসে। এখন এটি কলকাতা পুরসভার ১২৬ নম্বর ওয়ার্ডে পড়ে। ১৯৯৫-এ বাজারটি দোতলা তৈরি হয়। এর পরে আর কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ।

সুপার মার্কেট এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ ব্লকে বিভক্ত। ডি ব্লকে সব্জি, মাছ, মাংস, ফল মিলিয়ে ৩১২টি দোকান রয়েছে। মাছ, মাংসের দোকান ভাড়া দৈনিক আট টাকা। সবজির দোকানের ক্ষেত্রে এই ভাড়া চার থেকে আট টাকার মধ্যে। ‘সখের বাজার সুপার মার্কেট দৈনিক কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতি’র সদস্য বিশ্বনাথ ধাড়া জানান, অনেক বলেও এত বছরেও জলের লাইন এল না। একটি টিউবওয়েলই ভরসা। সেটি খারাপ হলে খুব সমস্যা হয়।

অন্য ব্লকগুলিতে আছে কম্পিউটার সামগ্রী, ওষুধ, জামাকাপড়, খেলার সরঞ্জাম, প্রসাধনী, ক্যুরিয়ার পরিষেবার দোকান এবং বিজ্ঞাপনের অফিস। সব মিলিয়ে এই সব ব্লকে ৯৬টি দোকান রয়েছে। পুরসভা টেন্ডার ডেকে দোকানগুলি ব্যবসায়ীদের হস্তান্তর করে। এখানে দোকানের জন্য পুরসভাকে ন্যূনতম ১৬৪ এবং সর্বোচ্চ ১৪০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে খবর, হস্তান্তরের পরেও দোতলার ৫০টি দোকান বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। তিনটি দোকানের টেন্ডারই হয়নি।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, লাভ তো দূর অস্ৎ, এ বাজারে খুব কম ক্রেতা আসেন। ‘বড়িশা ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি মান্তু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সামনের দিকে সিঁড়ি না থাকায় ক্রেতারা দোতলার পথই খুঁজে পান না। অনেকে তাই এক তলা থেকেই ফিরে যান। তা ছাড়া বাজারে কেনাকাটা করতে এসে ক্রেতারা গাড়ি বা মোটরসাইকেল রাস্তায় রাখলে ট্রাফিক পুলিশ ঝামেলা করে।”

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মাত্র দু’জন নিরাপত্তারক্ষী এত বড় বাজারের পক্ষে যথেষ্ট নয়। মাঝেমধ্যেই ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘটে। তাঁদের দাবি, এই সব নিয়ে স্থানীয় পুর প্রতিনিধিকে বার বার জানিয়েও কিছু হয়নি।

সখেরবাজার এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, বাজারটি ঠিকঠাক চললে দূরে বেহালা বাজারে যেতে হত না। স্থানীয় ব্যবসায়ী অভিজিৎ গায়েন বলেন, “কয়েক বছর আগেও বাজারের বেসমেন্টে জল জমে থাকত। ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হয়ে থাকত। ২০১২-র অগস্টে এই বেসমেন্টেই পুরসভা ইন্টারনেটে কর জমা করার কেন্দ্র খুলেছে।

কিন্তু বর্ষায় এখনও সমস্যা হচ্ছে।” আর এক বাসিন্দা ইলা মজুমদারের কথায়: “ছাদের জল পাইপ দিয়ে নেমে সিঁড়ি ভাসিয়ে বেসমেন্টে জমে যায়। আমার সামনেই এক দিনে দু’জন পড়ে গিয়েছিলেন।”

স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের শিপ্রা ঘটক বলেন, “সুপার মার্কেটের জন্য অনেক কাজ করেছি। বাকি ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।” পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) তারক সিংহ বলেন, “জল জমার ব্যাপারে আমাকে কেউ জানায়নি। দোকান নিয়েও যদি কেউ না খোলেন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও আইনানুগ ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি না।

তবে বিষয়টি দেখব। পার্কিংয়ের জন্য আমরা কিছু করতে পারি না।” তিনি জানান, বাজারের সামনের দিকে সিঁড়ি করার বিষয়ে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে আরও একটি তল বাড়ানোর জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jayati raha sakherbazar super market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE