কলকাতায় পর্যটকদের পাশে দাঁড়াতে দাওয়াই এ বার পর্যটন পুলিশ।
দেশের কিছু শহরে ইতিমধ্যেই তারা সক্রিয়। গোলমেলে গাইডের পাল্লায় পড়ে সমস্যা হলে তো বটেই, সফরের যে কোনও পরামর্শে ভরসা এরাই। শহরের পর্যটকবহুল এলাকায় নির্দিষ্ট উর্দিধারী এমন পুলিশ বসানো নিয়ে নতুন করে কথাবার্তা শুরু হচ্ছে।
আগেও এ বিষয়ে বৈঠক কম হয়নি রাজ্যে। ফাইল চালাচালিও চলেছে দফায় দফায়। কিন্তু নবান্ন তথা রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের ছাড়পত্র মেলেনি। সদর স্ট্রিটে গাইডের খপ্পরে পড়ে জাপানি তরুণী ধর্ষিতা হওয়ার অভিযোগের পরে সেই পুরনো ভাবনাই কবর খুঁড়ে বার করার চেষ্টা করছেন প্রশাসনের কর্তারা।
ক’বছর আগে গোয়ায় বিদেশিনী খুনের জেরে দানা বাঁধে পর্যটন পুলিশের ভাবনা। কোচি, বারাণসী বা চণ্ডীগড়ের মতো জায়গায় চোখেও পড়ছে তাদের উপস্থিতি। সদর স্ট্রিটের ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে রবিবারই মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী মহেশ শর্মা। তবু কলকাতার ‘ট্যুরিস্ট পাড়া’র চেহারায় কোনও বদলের লক্ষণ নেই।
বারাণসীতে বেড়ানোর পরে ঢাকার ভিসার অপেক্ষায় এ শহরে দিন দশেকের বেশি পড়ে আছেন ব্রাজিলীয় তরুণী লেচিসিয়া। তাঁর দাবি, “কই, এত দিনে এক বারও এ তল্লাটে পর্যটকদের পরামর্শ দেওয়ার মতো পুলিশ চোখে পড়েনি।” ডাচ যুবক অস্কার বা লেচিসিয়া তাই দোকানদার বা বিক্ষিপ্ত ঘুর-ঘুর করা ‘ট্র্যাভেল এজেন্ট’দের উপরে নির্ভরশীল। এমন এক দোকানদারই বলছিলেন, নিউ মার্কেট বা অন্যত্র কোনও দোকানের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন আছে, যারা পর্যটকদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে জোচ্চুরির কারবার করে। বিদেশি ভাষার বুলি আউড়ে মন জয় করে সফরকারীদের।
এই অবস্থাটা পাল্টাতে বছর চারেক আগেও কলকাতার জন্য পর্যটন পুলিশবাহিনী গড়ার কথা ভেবেছিল লালবাজার। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। কয়েক জন পর্যটন সচিব বদলি হওয়ায় চেষ্টা ভেস্তে যায়। নবান্ন সূত্রের খবর, মাস ছয়েক আগেও পর্যটন দফতরের তরফে কলকাতা-সহ রাজ্যের কয়েকটি দ্রষ্টব্য স্থানের জন্য পর্যটন পুলিশের প্রস্তাব তৈরি হয়। বলা হয়, থানায় থানায় পর্যটন পুলিশের শাখা থাকবে। পর্যটকেরা সহজে চিনতে পারবেন, এমন উর্দি ও গাড়িও দেওয়া হবে এই পুলিশকে। কিন্তু প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে সে-প্রস্তাব বাতিল হয়। পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু রবিবার বলেন, “বিষয়টি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে।”
সদর স্ট্রিট-কাণ্ডের ধাক্কায় লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা অবশ্য এ বার ফের পর্যটন দফতরের সঙ্গে পর্যটন পুলিশ নিয়ে আলোচনার কথা বলছেন। কিন্তু পুলিশের নিচুতলায় বিদেশি পর্যটকদের পাশে দাঁড়াতে কী করণীয়, তা নিয়ে ঠিকঠাক বোধই তৈরি হয়নি। ফলে, এ দিনই পুলিশের টহল সদর স্ট্রিটে অনেকের বিরক্তি বাড়িয়েছে। কয়েক জন বিদেশি পর্যটককে রাস্তায় ঘুরতেও নিষেধ করেছে পুলিশ।
ক’বছর ধরে নিয়মিত ভারত সফর করছেন টরন্টোর মহিলা রোবি রসি। বললেন, “এই রাস্তাটা আমার ঘর-বাড়ি হয়ে গিয়েছে। পুলিশ পারলে পর্যটকদের সাহায্য করুক। সাহায্যের নামে চলাফেরায় কড়াকড়ি কেন, বুঝলাম না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy