নর্দমার জল মিশছে এই পুকুরে। ছবি: অরুণ লোধ।
ভেঙে গিয়েছে গুরুসদয় মিউজিয়ামের সাজানো পুকুরপাড়। ভেঙে গিয়েছে পাড় সংলগ্ন রেলিংও। পাড়ের মাটি বসে গিয়েছে। ফলে ডায়মন্ড হারবার রোডের নর্দমার নোংরা জল মিশছে পুকুরে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, হচ্ছে দূষণও। এতে মিউজিয়ামে রাখা মূল্যবান জিনিসের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের।
১৯৬১ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় মিউজিয়াম ভবনটির উদ্বোধন করেছিলেন। ১৯৬৩-তে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী হুমায়ুন কবীর গ্যালারিটির উদ্বোধন করেছিলেন। বাংলার কাঁথার কাজ, পটচিত্র, পুতুল-সহ পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার লোকশিল্প ও হস্তশিল্পের সংগ্রহ রয়েছে এখানে। জাতীয় ঐতিহ্যশালী সংগ্রশালার তকমা পাওয়া গুরুসদয় মিউজিয়ামে রয়েছে তিন হাজারের উপরে শিল্পবস্তু। এটি এখন কলকাতা পুরসভার নব সংযোজিত ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে।
এই মিউজিয়ামে মাঝেমধ্যে যান অনিল সরকার। তিনি জানালেন, এক বছর ধরে পুকুরটির বেহাল অবস্থা। মিউজিয়ামের সামনে ডায়মন্ড হারবার রোডের উপরে বছর দুই ধরে একটি ভ্যাট তৈরি হয়েছে। সেখান থেকেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অনেক সময়ে মিউজিয়ামের মধ্যেও দর্শকদের নাকে রুমাল চাপা দিয়ে ঘুরতে হয়। কর্র্তৃৃপক্ষের দাবি, এ ভাবে বেশি দিন থাকলে ক্ষতি হবে সংগ্রহালয়ের।
মিউজিয়াম সূত্রে খবর, পুকুরপাড় এবং নর্দমা সারাই নিয়ে তাঁদের সঙ্গে পিডব্লিউডি-র মত পার্থক্য রয়েছে। মিউজিয়ামের কিউরেটর ও এগ্জিকিউটিভ সেক্রেটারি বিজনকুমার মণ্ডল বলেন, “ডায়মন্ড হারবার রোডের ওই নর্দমার জল গিয়ে পড়ার কথা নিকটবর্তী চড়িয়াল খালে। কোনও কারণে ওই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। গত বছর এক টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে নর্দমা জলে ভরে যায়। সেই জলের চাপে মাটি সরে বসে যায় রেলিং-সহ পুকুরের বাঁধানো পাড়। এই নিয়ে কলকাতা পুরসভাকে এবং পিডব্লিউডি-কে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছিল। কিছুই হয়নি।” পিডব্লিউডি-র সাউথ সাবার্বান বিভাগের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বিষ্ণু বক্সি বলেন, “পুকুরপাড় নর্দমার জলের চাপে ভাঙেনি। ফলে পাড় সারানোর দায় পিডব্লিউডি-র নয়। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে বলেছি আগে পুকুরপাড় সারাতে। তার পরে নর্দমা তৈরি করে দেব। নতুবা পাড় আবার ভাঙবে।”
ভ্যাট প্রসঙ্গে বিজনবাবু জানান, সংগ্রহালয়ের গুরুত্বের কারণেই এখান থেকে ভ্যাট সরানোর জন্য কলকাতা পুরসভাকেও জানিয়েছিলাম। পুরসভা জানিয়েছে, ভ্যাট সরানো সম্ভব নয়। মেয়র পারিষদ (বর্জ্য) দেবব্রত মজুমদার জানান, জায়গার অভাব রয়েছে। ওখান থেকে ভ্যাট সরানো যাবে না। তবে এ বছরের মধ্যে ওখানে কম্প্যাক্টর বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার উপরে সার দিয়ে বাস দাঁড়িয়ে থাকায় অনেক সময়ে মিউজিয়ামে আসা দর্শকরা বিভ্রান্ত হন। এক দর্শক আশিস দাস বললেন, “মিউজিয়ামকে আড়াল করে এমন ভাবে বাসগুলি দাঁড়িয়ে থাকে, যে প্রথমবার ভুল করে বাকড়াহাটের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম।” মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ জানান, দু’টি বেসরকারি বাস টার্মিনাস রয়েছে সংগ্রহালয়ের সামনে। কখনও কখনও গেটের সামনে বাস, অটো দাঁড়ায়। এই নিয়ে বাস মালিক সংগঠনকে অনেক বার বলা হয়েছে। কোনও সহযোগিতা মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy