Advertisement
১০ জুন ২০২৪

প্রশ্নের মুখে পথচারীদের সচেতনতাও

যত তাড়া শহরের রাস্তায়। জেব্রা ক্রসিং বা ট্রাফিক সিগন্যাল আছে যে যার মতো। দিনেদুপুরে কতর্ব্যরত পুলিশকর্মীরও অভাব নেই। কিন্তু পথচারীরা থাকেন নিজেদের মেজাজে। ধাবমান বাস-ট্যাক্সি-গাড়ির ঝাঁকের সঙ্গে কখনও পাল্লা দিচ্ছেন অকুতোভয়। কখনও বা মর্জিমাফিক থমকে যেতে বাধ্য করছেন পথচলতি যানবাহনকে। শহরে পুলিশের ট্রাফিক সচেতনতা সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনেও দেখা গেল, পথচারীরাই পথের বাদশা। মঙ্গলবার কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে সেটাই মালুম হল।

গিরিশ পার্ক এলাকায় পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ উপলক্ষে মহিলাদের প্রচার-যাত্রা।

গিরিশ পার্ক এলাকায় পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ উপলক্ষে মহিলাদের প্রচার-যাত্রা।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৪
Share: Save:

যত তাড়া শহরের রাস্তায়। জেব্রা ক্রসিং বা ট্রাফিক সিগন্যাল আছে যে যার মতো। দিনেদুপুরে কতর্ব্যরত পুলিশকর্মীরও অভাব নেই। কিন্তু পথচারীরা থাকেন নিজেদের মেজাজে। ধাবমান বাস-ট্যাক্সি-গাড়ির ঝাঁকের সঙ্গে কখনও পাল্লা দিচ্ছেন অকুতোভয়। কখনও বা মর্জিমাফিক থমকে যেতে বাধ্য করছেন পথচলতি যানবাহনকে। শহরে পুলিশের ট্রাফিক সচেতনতা সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনেও দেখা গেল, পথচারীরাই পথের বাদশা। মঙ্গলবার কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে সেটাই মালুম হল।

গড়িয়াহাট মোড়

মূর্তিমান ধর্মের ষাঁড়ের মতো দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া একটি গাড়ি। রাজপথে বেপরোয়া হওয়ার পরিণতি হাতে-কলমে বোঝাতে আমজনতা থেকে গাড়িচালকদের জন্য জলজ্যান্ত শিক্ষার স্মারক। বিজন সেতুর দিক থেকে ছুট্টে রাস্তা পেরিয়ে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের দিকে যাওয়া তরুণীদের দলটার তাতে তাপ-উত্তাপ নেই। গোলপার্কের দিক থেকে আসা বাসটা আর একটু হলেই ঘাড়ের উপরে পড়ছিল। আর ওই মেয়েদের খুব কাছ থেকে ডান দিকে বাঁক নিল অটো। তরুণীদের পড়ি-মরি ভাবটা তাতে টাল খেল না। হাত দেখিয়ে বাসটা থামিয়ে অটো এড়িয়ে ছুটতেই ছুটতেই ও-পারে ফুটপাথের পোশাক বিপণির সামনে। টেনশনের চিহ্ন নেই। এমন বিপজ্জনক রাস্তা পারাপারের জন্যই সম্ভবত ফুটপাথে উঠে তরুণীদের খিলখিলিয়ে হাসিটা চার গুণ বেড়ে গেল।


রাস্তা পেরোচ্ছেন মোবাইলে মগ্ন পথচারী।

রাসবিহারী মোড়

হুট করে মনে হতেই পারে কোনও ‘রোড-ম্যারাথন’ হচ্ছে শহরে। তবে ভঙ্গিটা প্রায় ১০০ মিটারের ফিনিশিং লাইন ছোঁয়ার। দৌড়বীরের পরনে কিন্তু সাধারণ অফিসযাত্রীর পোশাক। প্রায় ৪৫ ডিগ্রি কোণে এঁকেবেঁকে ছুটে চলেছেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড ধরে ছুটে যেন যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই পৌঁছে গেলেন রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাথে, যেখানে গড়িয়াহাটগামী অটো ভিড় জমায়।

এই অবাক রাস্তা পারাপার দেখে থমকে গিয়েছিল কতর্ব্যরত পুলিশও। আমনাগরিকের পথ-নিরাপত্তার দোহাই, এক উর্দিধারী পুলিশকর্মীও রেগেমেগে ছুটন্ত নাগরিকের পিছু নিলেন। পুলিশ এসে বকুনি দিলেও ওই যুবক নির্বিকার। জোড়হাতে সন্তসুলভ স্মিত হাসি। তিতিবিরক্ত পুলিশকর্মীর মন্তব্য, “জেব্রা ক্রসিং ছেড়ে রাস্তা পার হলে তো ক’টা টাকা মোটে জরিমানা। এতে কী আর এই বীরপুরুষদের শিক্ষা হয়!”

বি বা দী বাগ

সচেতনতার যম হল মোবাইল ফোন। চলভাষ কানে গুঁজে যত কথা সব রাস্তা পারাপারের সময়ে। আরএন মুখার্জি রোড থেকে রাস্তা পেরিয়ে টেলিফোন ভবনের দিকে যেতে যেতে গড়পরতা পথচারীর কানেই মোবাইল ফোন। ট্রাফিক পুলিশের উপরতলার কর্তাদের নির্দেশ আছে, মোবাইল ফোন কানে কাউকে রাস্তা পার হতে দেখলেই ‘স্পট ফাইন’ করবেন। তাতে কী? সকাল থেকে সন্ধে, মোবাইল কানে বিপজ্জনক পারাপারের বিরাম নেই। এক পুলিশকর্মী ক্লান্ত স্বরে বললেন, “সকাল থেকে লোকজনকে বোঝাতে বোঝাতেই থ’কে যাচ্ছি। কোনও পরিবর্তন নেই।”


লালবাজারের ট্রাফিক কন্ট্রোলে স্কুলপড়ুয়ারা। মঙ্গলবার শহরে।

লালবাজার-কথা

শহরের এই হাল ফেরাতে এ দিন দুপুরে একঝাঁক স্কুলপড়ুয়াকে ট্রাফিক কন্ট্রোলরুমে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন লালবাজারের কর্তারা। সিসিটিভি আর ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা শহরের ফ্রেমে চোখ রাখলেন লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজের ‘সেফটি পেট্রলিং স্কোয়াড’-এর সদস্যেরা। এক ট্রাফিক-কর্তা বললেন, “আগামীর নাগরিকদের তৈরি করা ছাড়া উপায় নেই।” এ ধরনের উদ্যোগই ভরসার রুপোলি রেখা।

— নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

road safety week supriyo tarafdar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE