সকালে। ট্রামলাইন বন্ধ করে দিনের পর দিন অবস্থান কেন? পুলিশকে প্রশ্ন করতেই বদলে গেল দৃশ্য।—নিজস্ব চিত্র
খাস কলকাতার ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ট্রামলাইন বন্ধ রেখে চলছিল অনশন ও অবস্থান-বিক্ষোভ। এক ঘণ্টা-দু’ঘণ্টা নয়। দু’-এক দিনও নয়। টানা পাঁচ-পাঁচটা দিন। তবুও পুলিশ প্রশাসন, এমনকী ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানিও (সিটিসি) কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ।
তবে ট্রামলাইন অবরোধের বিরোধিতা করে মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ ওই জায়গাতেই একদল মহিলা পাল্টা রাস্তা অবরোধ করলে টনক নড়ে পুলিশের। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ গিয়ে ট্রামলাইন থেকে অবস্থানকারীদের সরিয়ে দেয়। তবে তার পরেও রাস্তার একাংশ জুড়ে চলছে বেআইনি অবস্থান। গত পাঁচ দিন ধরে পার্শ্ব শিক্ষকদের এই অবস্থানের জেরে বেলগাছিয়া-ধর্মতলা, শ্যামবাজার-ধর্মতলা এবং বেলগাছিয়া-হাওড়া ব্রিজের ট্রামকে অন্য রুট দিয়ে ঘুরিয়ে দিতে হয়। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের দাবি, রাস্তাটিও ওয়ান-ওয়ে হওয়ায় গত পাঁচ দিন ধরে উত্তর দিক থেকে কোনও গাড়ি সেখানে ঢুকতেই পারছিল না। ওই অবরোধ তোলার ক্ষেত্রে প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতায় গত পাঁচ দিন ধরে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের।
কেন জনসাধারণের এই সমস্যা?
পুলিশ সূত্রের খবর, গত শুক্রবার থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিদ্যালয়ের পার্শ্ব শিক্ষকেরা কলেজ স্ট্রিটে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। ট্রামলাইন ও রাস্তার একাংশ জুড়ে তাঁদের অবস্থানের জেরে ওই লাইনে ট্রাম চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তার উপরে কলেজ স্ট্রিটের মতো ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গায় পরপর কয়েকটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান থাকায় সমস্যায় পড়েন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরা।
প্রতি দিনের এই ভোগান্তি সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় মঙ্গলবার অভিভাবকেরাই নিজেদের হাতে আইন তুলে নেন। নিজেদের প্রতি দিনের ভোগান্তির ফলে তৈরি ক্ষোভ এ দিন কার্যত উগরে দেন ওই মহিলারা। এ দিনও যাতায়াতের সমস্যা হওয়ায় বেলা ১১টা নাগাদ কিছু অভিভাবক পাল্টা বিক্ষোভ দেখিয়ে রাস্তা অবরোধ শুরু করেন। এ দিন তাঁরা বিক্ষোভস্থলের ব্যানার-পোস্টারও ছিঁড়ে দেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিনের এই ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় বচসা। পার্শ্ব শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন, কিছু মহিলা তাঁদের উপরে চড়াও হয়ে মারধর করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। দু’ দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে থাকে। যদিও ওই অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, গত পাঁচ দিন ধরে তাঁদের এবং তাঁদের ছেলেমেয়েদের সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। পুলিশ কোনও রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই তাঁরা প্রতিবাদ করেতে বাধ্য হয়েছেন।
কিন্তু ট্রামলাইনের উপরে অবস্থান কেন? পুলিশই বা গত পাঁচ দিন ধরে বেআইনি ভাবে এই অবস্থান চলতে দিল কী করে?
রাতে। লাইন থেকে কয়েক হাত দূরে সরিয়ে দেওয়া হল বিক্ষোভকারীদের। তাতেও রাস্তার এক দিক বন্ধই।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত শুক্রবার থেকে বিদ্যালয়ের পার্শ্ব শিক্ষকেরা তাঁদের একগুচ্ছ দাবি নিয়ে কলেজ স্কোয়ারের ভিতরে অবস্থানের জন্য কলকাতা পুরসভার কাছে অনুমতি চান। তা না পেয়ে ওই পার্শ্ব শিক্ষকদের দল কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে রাস্তার উপরে ট্রামলাইন দখল করে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ বারংবার অনুরোধ করলেও তাঁরা সেখান থেকে সরে যাননি। সাধারণ মানুষের পাঁচ দিনের দুর্ভোগের পরে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়।
প্রশাসনের গড়িমসি নিয়ে লালবাজারের এক কর্তা জানান, প্রথম দিনই ওই পার্শ্ব শিক্ষকদের বেআইনি ভাবে রাস্তার উপরে বসতে বারণ করা হয়েছিল। পরিবর্তে তাঁরা ধর্মতলার ‘ওয়াই চ্যানেলে’ বসার জন্য অনুরোধও করেন। কিন্তু পার্শ্ব শিক্ষকেরা তা শোনেননি। লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, “গণতন্ত্রে এ রকম বহু কিছুই মেনে নিতে হয়। তবে আমরা তো মামলা রুজু করেছি।” কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দূর হওয়ার কথা নয়। লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, জোর করে অবরোধ তুলে বিতর্কে জড়াতে চায়নি পুলিশ। তবে অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও সে ভাবে করেনি পুলিশ। সিটিসি-র এক কর্তা বলেন, “পদ্ধতিগত ভাবে পুলিশকে যা জানানোর তা আমরা জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওই লাইনে ট্রাম চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy