Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বিদায়ীর ক্ষোভের মধ্যেই প্রেসিডেন্সি নতুন হাতে

বিদায়ী উপাচার্য মালবিকা সরকারকে মেন্টর ধরে এবং তাঁর পরামর্শ নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কাজ করতে চান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এবং প্রথম স্থায়ী উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। শুক্রবার কার্যভার নিয়ে এ কথা জানান বোস ইনস্টিটিউটের জৈব রসায়নের শিক্ষিকা অনুরাধাদেবী।

বিদায়ী ও বর্তমান। নতুন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার (ডান দিকে) হাতে দায়িত্ব তুলে দিলেন মালবিকা সরকার। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী।

বিদায়ী ও বর্তমান। নতুন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার (ডান দিকে) হাতে দায়িত্ব তুলে দিলেন মালবিকা সরকার। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০২:৪৪
Share: Save:

বিদায়ী উপাচার্য মালবিকা সরকারকে মেন্টর ধরে এবং তাঁর পরামর্শ নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কাজ করতে চান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এবং প্রথম স্থায়ী উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। শুক্রবার কার্যভার নিয়ে এ কথা জানান বোস ইনস্টিটিউটের জৈব রসায়নের শিক্ষিকা অনুরাধাদেবী।

তবে এই দায়িত্ব-বদল মোটেই বিতর্কমুক্ত হল না। বিদায়ী উপাচার্য এ দিন নতুনকে স্বাগত জানান। সেই সঙ্গেই তিনি প্রশ্ন তোলেন, উপাচার্যের দায়িত্ব কবে ছাড়তে হবে, উচ্চশিক্ষা দফতর বা রাজ্যপালের সচিবালয় কোনও তরফেই সরকারি ভাবে চিঠি দিয়ে তাঁকে সেটা জানানো হল না কেন? মালবিকাদেবী বলেন, “যা জানার, সবই সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছি।” এই বিষয়ে নিজের ক্ষোভ-অভিমান গোপন করেননি তিনি।

রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর অবশ্য জানিয়েছে, কবে নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নেবেন, কবে মালবিকাদেবীকে দায়িত্ব ছাড়তে হবে এ-সব জানিয়ে গত বুধবার দফতরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সচিব প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি পাঠান। তার প্রতিলিপি গিয়েছে অনুরাধাদেবী ও মালবিকাদেবীর কাছে। মালবিকাদেবীর সচিবালয় সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারও করেছে।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিন বলেন, “মালবিকাদেবীর কার্যকাল বাড়ানোর চিঠিতেই উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ১৫ মে বা নতুন উপাচার্যের যোগদান যেটি আগে হবে, সেই সময়েই তাঁকে উপাচার্যের পদ থেকে অব্যাহতি নিতে হবে। অনুরাধাদেবীর যোগদানের কথা উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিব টেলিফোনে মালবিকাদেবীকে জানিয়েছিলেন।” সেই সঙ্গে মন্ত্রী জানান, উচ্চশিক্ষা দফতরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সচিব প্রেসিডেন্সিতে চিঠি পাঠিয়ে উপাচার্য বদল এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করার কথা জানিয়েছেন।

“মনে হয়, কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে মালবিকাদেবীর প্রতি আমার আস্থা আছে। উনি নিশ্চয়ই বিষয়টা বুঝবেন,” মন্তব্য শিক্ষামন্ত্রীর।

আর প্রেসিডেন্সিতে উচ্চশিক্ষা দফতরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সচিবের পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গে মালবিকাদেবী বলেন, “এ দিন সকালেই জানতে পেরেছি, রেজিস্ট্রারের কাছে একটি চিঠি এসেছে, যাতে দু’টি লাইনে উল্লেখ করা হয়েছে, কবে নতুন উপাচার্যকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।” সরাসরি তাঁকে চিঠি দিয়ে অব্যাহতি নেওয়ার কথা জানানো হলে প্রেসিডেন্সিতে তাঁর কার্যকালের বৃত্ত সম্পূর্ণ হতো বলে মন্তব্য করেন মালবিকাদেবী। তাঁর ক্ষোভ, “আমি তো রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে নির্দেশ পাই না!” উচ্চশিক্ষা দফতর অবশ্য জানাচ্ছে, এ ব্যাপারে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যে-পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, প্রেসিডেন্সির বেলায় তা-ই হয়েছে।

অনুরাধাদেবী এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ প্রেসিডেন্সিতে পৌঁছন। রেজিস্ট্রার, ডিন, পরীক্ষা নিয়ামক-সহ বিভিন্ন আধিকারিক এবং প্রবীণ শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ পৌঁছন মালবিকাদেবী। তাঁর সঙ্গেও কিছু ক্ষণ আলোচনার পরে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করেন বিদায়ী ও নতুন উপাচার্য। সেখানে মালবিকাদেবী বলেন, “অনুরাধা লোহিয়া এই দায়িত্ব নেওয়ায় আমি খুব খুশি। ওঁকে একশো শতাংশ সাহায্য করব।” আর অনুরাধাদেবী বলেন, “মালবিকাদিকে বলেছি, মনে করবেন না যে, আপনার কাজ শেষ হল। যখন-তখন ফোন করে সাহায্য চাইব আপনার কাছে।”

এর পরেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খানিকটা অভিমানের সুরে উচ্চশিক্ষা দফতর ও রাজ্যপালের সচিবালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান মালবিকাদেবী। প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর, মালবিকাদেবী কবে অব্যাহতি নিতে চান, উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে আগেই তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই বিদায়ী উপাচার্য নিজের শুভ সংখ্যা হিসেবে ১৩ মে তারিখটিকে অব্যাহতির জন্য বেছে নেন। কিন্তু আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন গত ২৮ এপ্রিল, সোমবার অনুরাধাদেবীকে জানান, যত দ্রুত সম্ভব দায়িত্ব নিতে হবে। ৬ মে, মঙ্গলবার অনুরাধাদেবীর বিদেশ যাওয়ার কথা। আচার্যের কথা মেনেই তিনি শুক্রবার দায়িত্ব নিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

কিন্তু বিদায়ী উপাচার্যের প্রশ্ন, দায়িত্ব নেওয়া, কার্যকাল বাড়ানো এ-সবই তাঁর কাছে রাজ্যপালের সচিবালয় থেকে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছিল। তা হলে অব্যাহতি নেওয়ার কথাটাই বা তাঁকে সেখান থেকে জানানো হবে না কেন? তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্সিকে বিশ্ব মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু হার্ভার্ড, কেমব্রিজ ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বড় পরিবর্তন সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জানতে হয় বলে শুনিনি!”

এই ব্যাপারে নিজের কর্মপদ্ধতির কথা তুলে মালবিকাদেবী জানান, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান, কাউন্সিলের সদস্য বদলের সময় তিনি নিজে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যেটুকু শিক্ষা পেয়েছি এবং প্রেসিডেন্সিতে এসে যে-রুচিবোধ তৈরি হয়েছে, তা থেকেই আমি চিঠি লিখে জানিয়েছি প্রত্যেককে। আশা করব, ভবিষ্যতে কোনও উপাচার্যকে অব্যাহতি নিতে হলে তাঁকে সেটা জানানো হবে।”

৬৫ বছর বয়স হয়ে যাওয়ায় তিনি আর উপাচার্য থাকতে পারবেন না, এই যুক্তিতে গত বছর ১৫ অগস্টের পরেই প্রেসিডেন্সির জন্য নতুন উপাচার্য খুঁজতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। তখন রাজ্যপালের হস্তক্ষেপে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মালবিকাদেবীর কার্যকাল বাড়ানো হয়। তার পরে ফের তা বাড়ানো হয় ১৫ মে পর্যন্ত। তবে ইতিমধ্যে স্থায়ী উপাচার্য বাছাই হয়ে যাওয়ায় আচার্য-রাজ্যপাল আর দেরি করতে চাননি বলে রাজভবনের খবর।

কোন কোন কাজ অসমাপ্ত থেকে গেল, বিদায়বেলায় তারও উল্লেখ করেন মালবিকাদেবী। তিনি জানান, ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি, ‘রেগুলেশন’ বা নিয়ম, অর্ডিন্যান্স ইত্যাদি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ করা হল না। পরিকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন আর শিক্ষক নিয়োগের কাজও অসম্পূর্ণ থেকে গেল।

অনুরাধাদেবী নতুন দায়িত্ব নিয়েই বলেন, “সকলের সঙ্গে আলোচনা করে দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা আর্থিক সঙ্কট আছে। সকলের সঙ্গে কথা বলে দেখব, কী করে এই সমস্যা মেটানো যায়। যথেষ্ট অর্থের জোগান না-থাকলে ভাল শিক্ষক, ভাল ছাত্রছাত্রী বা ভাল পঠনপাঠন কিছুই হবে না।” শুধু রাজ্য সরকার নয়, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এবং প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

presidency malabika sarkar anuradha lohiya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE