কলকাতার চেনা মুখ নয়। নয় জেলার দাগিরাও। বরং কলকাতার কেপমারির জগতে এ বার আনাগোনা বাড়ছে ভিন্ রাজ্যের দুষ্কৃতীদের!
পুলিশ সূত্রের খবর, এর আগেও শহরে কয়েকটি কেপমারির ঘটনায় দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের দুষ্কৃতীরা জড়িত ছিল। সম্প্রতি যাদবপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় কেপমারির ঘটনাতেও তেমনই কোনও দুষ্কৃতী চক্রকে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। একইসঙ্গে পুলিশের বক্তব্য, ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে আগের ঘটনায় ভিন্ রাজ্যের দুষ্কৃতীদের ছবি মেলেনি। ফলে এই দলটি নতুন বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।
গত শনিবার সকাল দশটা নাগাদ যাদবপুরের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রতনকুমার বর্ধন। কাউন্টার থেকে ৩০ হাজার টাকা তোলার পরে ব্যাঙ্কের একটি চেয়ারে বসে টাকা গুনছিলেন তিনি। সে সময়ে প্রথম এক যুবক রতনবাবুর গা ঘেঁষে টাকায় হাত বুলোতে থাকে। ওই যুবকের মুখে একটি দুর্বোধ্য ভাষাও শুনেছিলেন রতনবাবু। এই সময় মাঝবয়সী এক ব্যক্তি রতনবাবুর কাঁধের উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে একটি ১০০ টাকার নোট রতনবাবুকে দেখান। এতে অন্যমনস্ক হওয়ার ফাঁকে রতনবাবুর ১০ হাজার টাকা নিয়ে পালায় ওই যুবক এবং মাঝবয়সী ব্যক্তি। সিসিটিভি ফুটেজে ওই দু’জনের সঙ্গে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা এক বৃদ্ধের সন্দেহজনক গতিবিধিও নজরে পড়েছে পুলিশের। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই বৃদ্ধও কেপমারি চক্রে জড়িত।
শহরে ভিন্ রাজ্যের কেপমার ঢুকে পড়ছে, এটা আঁচ করেই কপালে ভাঁজ পড়েছে লালবাজারের গোয়েন্দাদের। সাধারণত, শহরের কোন এলাকায় কোন ছিনতাই ও কেপমারি চক্র কাজ করে, তার একটা হিসেব লালবাজারের অফিসারদের কাছে থাকে। কোনও ঘটনার পরে সেই হিসেব মিলিয়েই প্রাথমিক ভাবে তদন্তের কাজ শুরু করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছিল। কিন্তু সেটা মেলেনি।
লালবাজার সূত্রের খবর, যাদবপুরের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে স্থানীয় কোনও কেপমার চক্রের সদস্যদের ছবি মেলেনি। ওই ছবি দেখে শনাক্ত করতে পারেননি গোয়েন্দাদের সোর্সরাও। জেলার দুষ্কৃতীদের সঙ্গেও ছবি মেলেনি। তা থেকেই গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়, এটা ভিন্ রাজ্যের দুষ্কৃতীদের কাজ কি না। রতনবাবুও জানিয়েছিলেন, দুষ্কৃতীদের এক জন দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলছিল। ওই দুর্বোধ্য ভাষাতেও ভিন্ রাজ্যের ইঙ্গিত পাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
লালবাজারের কর্তারা জানান, দিল্লি, গাজিয়াবাদের মতো শহরগুলি থেকে দু’-তিনটি কেপমারের দল এর আগেও শহরে ঢুকেছে। তার পরে অভিনব কোনও কায়দায় টাকা-গয়না হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে ভিন্ রাজ্যের দুষ্কৃতীরা ধরা পড়ার পরে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার যাদবপুরের ঘটনার পরে ফের ভিন্ রাজ্যের কেপমারদের আনাগোনায় সিদুঁরে মেঘ দেখছেন গোয়েন্দারা। কেন?
লালবাজারের একাংশের বক্তব্য, ভিন্ রাজ্যের দুষ্কৃতীরা ট্রেনে চেপে শহরে আসে। সস্তার হোটেল কিংবা বস্তি এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে আস্তানা তৈরি করে। তার পরে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ঢুকে সহজ শিকার বেছে কাজ হাসিল করে শহর ছেড়ে চম্পট দেয়। সাধারণত এই ধরনের অপরাধে পুলিশের প্রধান হাতিয়ার ‘সোর্স নেটওয়ার্ক’। কিন্তু ভিন্ রাজ্যের দুষ্কৃতীরা এ ভাবে কাজ সেরে পালিয়ে যাওয়ায় সোর্স নেটওয়ার্কেও সব সময়ে খবর পৌঁছয় না। কিংবা যতক্ষণে পৌঁছয়, ততক্ষণে তারা শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে।
তা হলে কি ভিন্ রাজ্যের অপরাধীরা পুলিশের নাগালের বাইরেই থাকবে?
গোয়েন্দারা অবশ্য অপরাধীদের ধরতে আশাবাদী। এর আগে গোয়েন্দারা দেখেছেন, ভিন্ রাজ্যের কেপমারেরা কলকাতার পাশাপাশি লাগোয়া জেলাগুলিতেও ঘাঁটি গাড়ে। সে ব্যাপারে খোঁজ চলছে। পুরনো ঘটনায় যে সব সোর্সরা পুলিশকে সাহায্য করেছিলেন, তাঁদেরও কাজে লাগানো হয়েছে বলে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy