অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।
হেড অফিসের বড়বাবু যে কামড়ে দিতে পারেন, সে সাবধানবাণী আগেই ছিল। কিন্তু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কলেজপড়ুয়ারা যে কামড়ে দেবেন, সে ব্যাপারে আগেভাগে কেউ সাবধান করেনি পুলিশকে। ফলে দু’দল পড়ুয়ার গোলমাল থামাতে গিয়ে থুতনিতে কামড় খেলেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক জন পুলিশকর্মী।
বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালের শতবার্ষিকী প্রেক্ষাগৃহে, বঙ্গবাসী মর্নিং কলেজের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের অনুষ্ঠানে। জোড়াসাঁকো থানায় এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন আক্রান্ত পুলিশকর্মী। টিএমসিপি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে ছাত্রছাত্রীদের গোলমালের খবর মেলে। টিএমসিপি-রই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গণ্ডগোল বাধে বলে কলেজ সূত্রের খবর। খবর পেয়ে ভিতরে ঢুকে পুলিশ পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করতেই বিপত্তি। এক পুলিশকর্মীর কথায়, “স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের এক কনস্টেবল হাতাহাতি থামাতে গেলে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। এক ছাত্রকে মাটি থেকে টেনে তুলতে গিয়ে তিনি থুতনির নীচে কামড় খান।” পুলিশ সূত্রে খবর, আহত কনস্টেবলকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। পরে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সম্প্রতি শতবার্ষিকী হলেই নবীনবরণ উৎসবের নামে সাইকেডেলিক আলো জ্বেলে চটুল নাচ-গানের আসর বসিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি ছাত্র সংসদ। এ বার বাইরের কলেজের ছাত্রছাত্রীরা গোলমাল পাকানো, পুলিশের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠায় প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে। কেন ওই প্রেক্ষাগৃহটি সকলকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে? উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “এত ভাল হলটিতে কেউ অনুষ্ঠান করতে চাইলে বাধা দিতে চাই না। কিন্তু তা যেন আইনসঙ্গত ও সুষ্ঠু ভাবে হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য হলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা আছে। দ্রুত সেই কাজ করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি।” তবে ঘটনার সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন না বলে সুরঞ্জনবাবুর দাবি। তিনি বলেন, “আমি রেজিস্ট্রার ও সংবাদমাধ্যম মারফত ঘটনাটা জানি। রেজিস্ট্রারকে পুলিশের থেকে জেনে রিপোর্ট দিতে বলেছি।” রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরীও জানান, ছাত্রছাত্রী বা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা পুলিশকর্মীরা তাঁকে কিছু জানাননি। সংবাদমাধ্যম থেকেই বিষয়টি তাঁর কানে এসেছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বাইরের কোনও কলেজের ছাত্রদের ওই হল ব্যবহার করতে দেওয়ার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ তা পেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ছাত্র সংসদই তাদের নামে হলটি ভাড়া নিয়ে ওই কলেজের পড়ুয়াদের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে দেয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কুণাল সামন্তের অবশ্য দাবি, বঙ্গবাসী মর্নিং কলেজের পাশাপাশি তাঁরাও ওই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিলেন। তাই হলটি ছাত্র সংসদের নামে ভাড়া নেওয়া হয়। তবে কী নিয়ে গোলমাল, তা তাঁর জানা নেই বলেও দাবি করেছেন কুণাল। টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “এই ঘটনায় আমাদের কোনও ভূমিকা নেই। বহিরাগতরাই গোলমাল পাকিয়েছে।”
বঙ্গবাসী মর্নিং কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ সিংহ জানান, সরকারি কাজে তিনি এ দিন একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যান। তবে আজ, বৃহস্পতিবার ওই গোলমাল নিয়ে ছাত্র সংসদের কাছে জবাব চাইবেন তিনি। ঘটনায় কলেজের কোনও পড়ুয়া জড়িত থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy