Advertisement
০২ জুন ২০২৪

মালিকানা বদলেছে, বাজার বদলায়নি

পায়ের তলায় কাদাজল। মাথার উপরে তারের জট। গোটা বাজারের জন্য বরাদ্দ মাত্র দু’টি জলের কল। ঢোকার পথে স্তূপীকৃত জঞ্জাল। বেহাল এই অবস্থা পাতিপুকুরের পাইকারি মাছবাজারের। এটি কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। প্রতি দিন রাত দশটা থেকে ভোর তিনটে পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশার চিল্কা, পারাদ্বীপ, সম্বলপুর, বালেশ্বর, মধ্যপ্রদেশের রায়পুর, মহারাষ্ট্র থেকে লরিতে মাছ আসে। ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা এই বাজারের ১২২ জন আড়তদারের থেকে প্রায় ১৫-১৬ হাজার খুচরো ব্যবসায়ী মাছ কেনেন।

এমনই বেহাল অবস্থা মাছবাজারের।—নিজস্ব চিত্র।

এমনই বেহাল অবস্থা মাছবাজারের।—নিজস্ব চিত্র।

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩৪
Share: Save:

পায়ের তলায় কাদাজল। মাথার উপরে তারের জট। গোটা বাজারের জন্য বরাদ্দ মাত্র দু’টি জলের কল। ঢোকার পথে স্তূপীকৃত জঞ্জাল। বেহাল এই অবস্থা পাতিপুকুরের পাইকারি মাছবাজারের। এটি কলকাতা পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত।

প্রতি দিন রাত দশটা থেকে ভোর তিনটে পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশার চিল্কা, পারাদ্বীপ, সম্বলপুর, বালেশ্বর, মধ্যপ্রদেশের রায়পুর, মহারাষ্ট্র থেকে লরিতে মাছ আসে। ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা এই বাজারের ১২২ জন আড়তদারের থেকে প্রায় ১৫-১৬ হাজার খুচরো ব্যবসায়ী মাছ কেনেন।

বাজারে কালো পাথর বিছানো পথ গর্তে ভরা। গর্ত বোজাতে কোথাও পড়েছে ইট, কোথাও কংক্রিটের চাঙর। বরফ গলা জলে রাস্তা ডুবে গিয়েছে। কারণ, মাছের আঁশে বুজে গিয়েছে নর্দমার মুখ। মুটে শঙ্করলাল যাদব বলেন, “এ পথ দিয়ে হাঁটতেই অসুবিধা হয়। বরফ আর থার্মোকলের মাছ বোঝাই বক্স টেনে নিয়ে যাওয়া আরও কষ্টের। বর্ষাকালে জল জমে বাজারের ভয়াবহ অবস্থা হয়।”

ব্যবসায়ীদের দাবি, এটি এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারি মাছবাজার। এত দিন বাজারটি ব্যক্তি-মালিকানাধীন ছিল। নাম ছিল ‘বি কে পাল বাজার’। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে বাজারের কোনও রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় এই বেহাল দশা। বহু টালবাহানার পরে এক বছর আগে বাজারের হাত বদল হয়ে মালিকানা এসেছে ‘বি কে পাল পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি’-র হাতে। সমিতিতে ১০৪ জন সদস্য আছেন।

মালিকানা বদলের পরেও বাজারটির অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ। বৈদ্যুতিক তারের জট থেকে যে কোনও সময়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। থার্মোকলের বক্স থেকেও আগে ছোটখাটো আগুন লেগেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। সমিতি সূত্রে খবর, আগুন মোকাবিলায় রিজার্ভার তৈরি হয়েছে। কিন্তু অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর এখনও অনুমোদন মেলেনি।

‘বি কে পাল পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি (পাতিপুকুর)’-র সেক্রেটারি কমল দাস বলেন, “মালিকানা হাতে আসার পরে পুরসভার থেকে আরও একটি জলের লাইন আনা হয়েছে। রিজার্ভার থেকেও ২৪ ঘণ্টা জল পাওয়া যাচ্ছে। তাতে জলের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। নিয়মিত আবর্জনাও পরিষ্কার হচ্ছে।” যদিও এ কথা মানছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীদের বড় অংশ। এক ব্যবসায়ী ফণীগোপাল দাস বলেন, “হাজার হাজার মানুষ আসেন। খুব অপরিচ্ছন্ন-নোংরা বাথরুম। মাটির সঙ্গে মিশে থাকা জলের পাইপ ভরসা। তাও অনেক সময় জল পাওয়া যায় না।”

স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা জানাচ্ছেন, মাঝেমধ্যেই ভ্যাটের ময়লা উপচে যায়। দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। গরম আর বর্ষায় দুর্বিষহ অবস্থা হয়। স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি ব্রজেন্দ্রকুমার বসু বলেন, “বাজারটি পুরসভার নয়। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে পুরসভা সপ্তাহে তিন দিন ময়লা পরিষ্কার করে। ওঁরা জানালে তবেই পুরসভার গাড়ি যায়।” ব্রজেন্দ্রবাবু জানান, মাছ বাজারের বর্জ্য নর্দমায় ঢুকে জমে যায়। তাই সমিতিকে নর্দমার মুখে নেট বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও বাজার সমিতি তা করেনি। এর জন্যে বর্ষায় অনেকটা এলাকা জুড়ে অসুবিধা হয়। ‘বি কে পাল পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরকার জানান, সবে বাজারটি হস্তান্তর হয়েছে। উন্নয়নের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jayati raha patipukur market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE