Advertisement
২১ মে ২০২৪

মালবিকা থাকুন অক্টোবর পর্যন্ত, চাইছেন অমর্ত্যও

আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-পদে মালবিকা সরকারের মেয়াদ বাড়িয়েছেন তিন মাস। মে পর্যন্ত। তবে প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন চান, প্রেসিডেন্সির ভালর জন্যই অক্টোবর পর্যন্ত মালবিকাদেবীকে ওই পদে রাখা হোক।

অমর্ত্য সেনকে সংবর্ধনা জানাচ্ছেন লেখিকা ইশার জাজ অহলুওয়ালিয়া। মঙ্গলবার।  ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

অমর্ত্য সেনকে সংবর্ধনা জানাচ্ছেন লেখিকা ইশার জাজ অহলুওয়ালিয়া। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-পদে মালবিকা সরকারের মেয়াদ বাড়িয়েছেন তিন মাস। মে পর্যন্ত। তবে প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন চান, প্রেসিডেন্সির ভালর জন্যই অক্টোবর পর্যন্ত মালবিকাদেবীকে ওই পদে রাখা হোক। মেন্টর গ্রুপকে তিনি তেমনই পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে অমর্ত্যবাবু মঙ্গলবার জানান।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এ দিন মালবিকাদেবীর প্রশংসা করেন। প্রেসিডেন্সির জন্য মালবিকাদেবী যে-কাজ করছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদও দেন। তবে উপাচার্যের কার্যকাল বৃদ্ধির ব্যাপারে আচার্য-রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু অমর্ত্যবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, মালবিকাদেবীর মেয়াদ অক্টোবরের বদলে মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্তে তিনি কিঞ্চিৎ ব্যথিত হয়েছেন।

জাতীয় গ্রন্থাগারে মেন্টর গ্রুপের অন্যতম সদস্য ইশার জাজ অহলুওয়ালিয়ার সদ্য প্রকাশিত একটি বই নিয়ে এ দিন আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল প্রেসিডেন্সি। প্রাক্তন শিক্ষক অমর্ত্যবাবুকে বইটি উপহারও দেন ইশার। সেখানেই মালবিকাদেবীর প্রসঙ্গ ওঠে। অমর্ত্যবাবু এবং ইশার দু’জনেই উপাচার্যের প্রশংসা করেন।

প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, অমর্ত্যবাবুর পরামর্শেই অক্টোবর পর্যন্ত মালবিকাদেবীকে উপাচার্য-পদে রেখে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন তাঁরা। এ দিন অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অমর্ত্যবাবুও বলেন, “হ্যা।ঁ আমি অক্টোবর পর্যন্ত এই উপাচার্যকে রেখে দেওয়ার পরামর্শ দিই। ভাল হবে ভেবেই এমন পরামর্শ দিয়েছিলাম মেন্টর গ্রুপকে। তবে শুনেছি, রাজ্যপাল তা মানেননি।”

প্রেসিডেন্সির অস্থায়ী উপাচার্য মালবিকাদেবীর কার্যকাল ছিল গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু ১৫ অগস্ট তাঁর ৬৫ বছর বয়স হয়ে যাওয়ায় আইনত মালবিকাদেবী আর ওই পদে থাকতে পারবেন না, এই যুক্তিতে নতুন উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য সার্চ বা সন্ধান কমিটি গড়ে রাজ্য সরকার। পরে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপে মালবিকাদেবীর মেয়াদ চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্সির প্রথম স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য সন্ধান কমিটি গড়ে সরকার। কিন্তু সেই কমিটি এখনও পর্যন্ত একটিও বৈঠক করে উঠতে পারেনি। পরিস্থিতি বিচার করে এবং মেন্টর গ্রুপের সুপারিশ মেনে মালবিকাদেবীর কার্যকাল ৬ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে আচার্য-রাজ্যপালকে চিঠি দেয় রাজ্য।

রাজ্যপালের উত্তর আসার আগেই প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, অক্টোবর পর্যন্ত মালবিকাদেবীই উপাচার্য থাকছেন। কিন্তু রাজ্যপাল তিন মাস মেয়াদ বাড়িয়েছেন উপাচার্যের। কেন তিনি রাজ্য সরকারের আবেদন মানলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, অতীতে মালবিকাদেবীর প্রশংসা করেছেন রাজ্যপালও।

মালবিকাদেবীর কার্যকালেই প্রেসিডেন্সিতে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে পাঠ্যক্রম তৈরি হয়েছে এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঁধাধরা ছকের বাইরে বেরিয়ে কলা ও বিজ্ঞান শাখার মেলবন্ধন ঘটিয়ে অভিনব পঠনপাঠন রীতিও চালু হয়েছে সেখানে। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লোগো তৈরি, ছাত্র সংসদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিতর্কসভার আয়োজন থেকে শুরু করে নতুন ক্যান্টিন চালু করা এই সমস্ত কিছুর কৃতিত্ব মালবিকাদেবীকেই দিয়ে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা।

কার্যত তাঁদের বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটিয়েই ইশার এ দিনের সভায় বলেন, “প্রেসিডেন্সির অগ্রগতির কৃতিত্ব প্রধানত যাঁর, তিনি হলেন উপাচার্য মালবিকা সরকার।” অমর্ত্যবাবু তার পরেই মালবিকাদেবীর প্রশংসা করেন। আলোচনাসভার আয়োজক ছিল প্রেসিডেন্সিই। এবং এই কথাবার্তার সময় মালবিকাদেবী বসে ছিলেন অমর্ত্যবাবুর পাশেই। তবে এই সব ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE