Advertisement
২৪ মে ২০২৪

শহর জুড়ে নিষ্প্রদীপ ত্রিফলার বহু স্তম্ভ

গাড়িতে যাওয়ার সময়ে তাঁর সতর্ক চোখ থাকে রাস্তার ধারের ত্রিফলা আলোর দিকে। কোনও আলো না জ্বললেই খবর যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে। সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করতে হয় ত্রিফলা আলো। রাস্তার ধারে ত্রিফলা আলো লাগিয়ে শহরের সৌন্দর্য বাড়ানোর পরিকল্পনা তো তাঁরই।

বিবেকানন্দ রোড

বিবেকানন্দ রোড

সায়নী ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০১:৩১
Share: Save:

গাড়িতে যাওয়ার সময়ে তাঁর সতর্ক চোখ থাকে রাস্তার ধারের ত্রিফলা আলোর দিকে। কোনও আলো না জ্বললেই খবর যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে। সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করতে হয় ত্রিফলা আলো। রাস্তার ধারে ত্রিফলা আলো লাগিয়ে শহরের সৌন্দর্য বাড়ানোর পরিকল্পনা তো তাঁরই। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সারা শহরের ত্রিফলার হাল দেখা তো সম্ভব নয় একা মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে। তাই তাঁর যাতায়াতের পথের বাইরে রয়ে যায় অনেক না-জ্বলা ত্রিফলা আলো।

যেমন, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে চাঁদনি চক মোড়ের মুখের ত্রিফলাটিই খারাপ। তিনটির মধ্যে দু’টি বাতিই জ্বলছে না। আরও একটু এগোলে একটি ত্রিফলার তিনটি বাতিই খারাপ। কয়েকটি জায়গায় অবস্থা আরও খারাপ। যেমন, বিবেকানন্দ রোডে চালতাবাগান মোড়ের কাছে চোখে পড়বে, সার দিয়ে বহু ত্রিফলা খারাপ। পরপর বহু স্তম্ভে কোনও বাতি জ্বলে না। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সামনের ফুটপাথে সার দিয়ে লাগানো ত্রিফলা। অথচ হাসপাতালে ঢোকার গেটের দু’পাশের দু’টি ত্রিফলা স্তম্ভই বাতিহীন। যার ফলে সন্ধ্যার পর থেকে ফুটপাথের ওই অংশ একেবারেই অন্ধকার হয়ে থাকে। একই হাল দরগা রোডের একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সামনেও। একটি স্তম্ভে দু’টি বাতি জ্বলছে, তৃতীয়টি খারাপ। যে দু’টিতে আলো জ্বলছে, তার একটি আবার ভাঙা।


চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ

বিবেকানন্দ রোডে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের কিয়স্কের পাশের ত্রিফলাটিও খারাপ। কোনও বাতি জ্বলছে না রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের সামনে একাধিক স্তম্ভে। খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে কসবায় রাস্তার মাঝ বরাবর লাগানো অধিকাংশ ত্রিফলা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিদ্যাপীঠ এবং যাদবপুর থানার সামনেও একই হাল। প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে ব্যস্ত শপিং মলের সামনেও চোখে পড়বে গাছের ডাল এবং বিদ্যুতের তারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ভাঙা ত্রিফলা।

শহরের রাস্তা চিরদিনই সোডিয়াম ভেপার লাইট বা মেটাল হ্যালাইডের আলোয় ঝকঝকে হয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও কোথাও দু’টি সোডিয়াম ভেপার লাইটের মাঝখানে, কোথাও আবার তার পাদদেশেই গুঁজে দেওয়া হয়েছে সুসজ্জিত ত্রিফলা। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের রাস্তার আলো বাড়ানোর পাশাপাশি সৌন্দার্যায়নের প্রয়োজনেও বসানো হয়েছে এই ত্রিফলা বাতি। কিন্তু কোনও ভূমিকাই যে পালন হচ্ছে না, এই বাতিগুলির হাল থেকেই তা স্পষ্ট।

ত্রিফলার দুর্দশা যে পরিচর্যার অভাবে হয়েছে, তা মানতে নারাজ পুরসভা। এক আধিকারিক জানান, তিনটি করে বরো নিয়ে একটি জোন তৈরি করা হয়েছে। আর প্রত্যেকটি জোনের এক জন এগ্জিকিউটিভ অফিসার রয়েছেন। এলাকার কোথায় কোথায় ত্রিফলা খারাপ হয়ে রয়েছে, তা নিয়মিত ঘুরে দেখে রিপোর্ট তৈরি করে পুরসভায় জমা দেওয়া ওই অফিসারদেরই দায়িত্ব। তা সত্ত্বেও শহরে ত্রিফলার এ হেন দুর্দশা কেন? পুরসভার ওই আধিকারিক জানান, ত্রিফলা বাহারি আলো হওয়ার কারণে তা সহজেই খারাপ হয়ে যায়। তিনি বলেন, “রাস্তায় গাড়ির কম্পন এবং ঝড়-বৃষ্টি খুবই ক্ষতি করে এই বাতির। কোথাও কোনও ত্রিফলা খারাপ হয়ে গেলে আমাদের পক্ষ থেকে তা সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

ওই আধিকারিকের দাবি, হরিশ মুখার্জি রোড, হসপিটাল রোড, শরৎ বসু রোড, চিড়িয়াখানার সামনে, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, হাজরা ইত্যাদি রাস্তায় লাগানো সব ত্রিফলাই ঠিকঠাক রয়েছে। খারাপ বাতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালালেও কিছু খারাপ ত্রিফলা নজর এড়িয়ে যায়। আবার এমনও হয়, সব ক’টি খারাপ ত্রিফলা সারানোর জন্য যে পরিমাণ সামগ্রী প্রয়োজন, অনেক সময়ে তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে অনেক সময়ে কাজ অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে।” তবে তিনি বলেন, “শহরের কিছু রাস্তায় ত্রিফলা খারাপ হয়ে যাওয়ার খবর বহু সময়েই আসে আমার কাছে। সেই মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sayani bhattacharya trifola calcutta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE