Advertisement
১৫ মে ২০২৪

শহর জুড়ে বাস ছাউনির চেয়ার চুরি, বিপাকে পুরসভা

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেও বাস না আসায় বিড়লা তারামণ্ডলের সামনের বাসস্টপের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এক বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী অরিজিত্‌ কোলে। পরের দিন অফিস থেকে ফেরার সময়ে ওই ছাউনিতে গিয়ে দেখলেন লোহার চেয়ারগুলি উধাও। পড়ে রয়েছে শুধু চেয়ারের নীচের ভাঙা অংশ।

এমনই হাল এলিয়ট পার্কের কাছের বাস ছাউনির। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

এমনই হাল এলিয়ট পার্কের কাছের বাস ছাউনির। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২২
Share: Save:

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেও বাস না আসায় বিড়লা তারামণ্ডলের সামনের বাসস্টপের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এক বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী অরিজিত্‌ কোলে। পরের দিন অফিস থেকে ফেরার সময়ে ওই ছাউনিতে গিয়ে দেখলেন লোহার চেয়ারগুলি উধাও। পড়ে রয়েছে শুধু চেয়ারের নীচের ভাঙা অংশ।

এক রাতের মধ্যে কোথায় গেল চেয়ারগুলি? নতুন চেয়ার লাগানোর জন্য পুরসভা সেগুলি খুলে নিয়ে গিয়েছে? নাকি অন্য কোনও কারণ? পুরসভা থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেগুলি তাঁরা খোলেননি। বরং চুরি গিয়েছে চেয়ারগুলি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি দু’টি নয়, বহু বাস ছাউনিতে এ ভাবেই চুরি যাচ্ছে একের পর এক লোহার চেয়ার।

পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১১ সাল থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ছাউনি দেওয়া যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। দু’ভাবে এই বাস ছাউনি তৈরি হয় বলে জানা গিয়েছে। প্রথমত, সাংসদ ও বিধায়ক তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হয় পুরসভায়। সেই টাকা থেকে ওই সাংসদ ও বিধায়কের নির্বাচনী এলাকায় ছাউনিগুলি তৈরি হয়। সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে পুরসভার উপরেই। কলকাতা পুর এলাকায় এ ধরনের একশোটিরও বেশি ছাউনি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতেও যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করা হয়। সংস্থার সঙ্গে পুরসভার চুক্তি অনুযায়ী, শহরের কিছু নির্বাচিত রাস্তার (স্থান নির্বাচন করে পুরসভা) ২০০ বর্গফুট জায়গায় প্রতীক্ষালয় তৈরি হয়। ছাউনি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে বিজ্ঞাপন সংস্থার উপরে। চেয়ার তৈরি করা বা যে কোনও ভাঙা অংশ মেরামতি সবই বিজ্ঞাপন সংস্থার দায়িত্ব। তবে সেখানে বিদ্যুত্‌ পরিষেবা দেয় পুরসভা। পাশাপাশি প্রতীক্ষালয়গুলিতে যাত্রী পরিষেবার বিষয়ে পুরসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয় ওই বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় এমন প্রায় ২০৩টি বাসস্টপে যাত্রী প্রতীক্ষালয় রয়েছে। কিন্তু পুরসভার এই উদ্যোগে জল ঢেলে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ছাউনিগুলি তৈরির সময়েই যাত্রীদের বসার জন্য লোহার চেয়ার তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া থাকত আলোর ব্যবস্থা। কোনও অংশ ভেঙে গেলে পুরসভা তা মেরামতিও করে দিত। কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। রাতে বা দিনে চুরি হয়ে যাচ্ছে চেয়ারগুলি।

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার নিজেই অভিযোগ করে জানালেন, রাতের অন্ধকারে, কখনও বা দিনের আলোতেই যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের লোহার চেয়ার কেটে নিয়ে পালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। মেয়র পারিষদ বলেন, “এ বিষয়ে পুলিশে বহু বার অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু যারা চেয়ার চুরি করছে তাদের কাউকেই ধরা যায়নি।”

কী অবস্থায় রয়েছে শহরের যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলি?

পুরসভা সূত্রে খবর, বেশির ভাগ বাস ছাউনির চিত্রটা কার্যত একই রকম। বালিগঞ্জের এক বাসিন্দা স্বরূপ নস্কর বলেন, “আমাদের এলাকায় বাস ছাউনি রয়েছে। কিন্তু প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস হয়ে গেল বসার জায়গা থেকেও নেই। লোহার চেয়ারের ভাঙা কিছু অংশ পড়ে থাকে। সেগুলিতে খোঁচা লেগে জামা কাপড় ছিঁড়ে যায়। পুরসভা বা পুলিশের কিছু করা উচিত।”

অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “আমি কয়েক মাস ধরেই শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছিলাম। কিন্তু মাস তিনেক আগে একটি ঘটনায় হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে যাই।” তিনি জানান, এক দিন দুপুরে বেকবাগান এলাকা থেকে দু’তিন জন যুবক চেয়ার চুরি করে পালাচ্ছিল। স্থানীয় লোকেরা তা দেখতে পেয়ে ওই যুবকদের তাড়া করে। তখন চেয়ারগুলি ফেলে পালায় দুষ্কৃতীরা। মেয়র পারিষদ জানান, সে দিন চেয়ারগুলি নিয়ে আসা হলেও দুষ্কৃতীদের ধরা যায়নি।

এক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্তা সুদীপ শ্রীমান বলেন, “বাস ছাউনিগুলি থেকে এত বেশি পরিমাণ চেয়ার চুরি হচ্ছে যে আমাদের লোকসান হয়ে যাচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরবর্তী টেন্ডারে আর কোনও যাত্রী ছাউনির দায়িত্ব নেব না।”

যদিও লালবাজারের এক পুলিশকর্তা জানান, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার চেয়ারের বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুরসভা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, চেয়ারের বদলে প্রায় বারো-তেরো ফুট লম্বা লোহার পাটাতন লাগানো হবে। পাশাপাশি দু’টি করে এ ধরনের পাটাতন থাকবে। ফলে যাত্রীদের বসতে কোনও অসুবিধা হবে না।

কিন্তু চোরেদের উত্‌পাতে আর হেলান দিয়ে বসা হবে না যাত্রীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE