পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং কাজে সুবিধার জন্য কলকাতা হাইকোর্ট ভবনে তিনটি প্রকল্পে কাজ শুরু হল। এর জন্য রাজ্যের আইন ও বিচার দফতর বরাদ্দ করেছে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। কাজ কী ভাবে এগোচ্ছে, সম্প্রতি তা সরেজমিন দেখে এসেছেন পদস্থ পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারেরা।
সার্ধশতবর্ষ ভবন তৈরির পরেও হাইকোর্টের স্থানাভাবের সমস্যা কাটেনি। মুশকিল আসানে নতুন একটি দশ তলা ভবন তৈরি শুরু হয়েছে। এতে খরচ হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্রকল্পে হাইকোর্ট ভবনের চলাফেরার সুবিধার জন্য বসবে এসক্যালেটর এবং ট্র্যাভেলেটর অর্থাত্ চলমান পথ। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। হাইকোর্টের দু’টি ভবনের মাঝে এগুলি থাকবে। এ ছাড়াও মূল ভবনে দু’টি নতুন লিফ্ট বসাতে বরাদ্দ হয়েছে আরও দেড় কোটি টাকা। তৃতীয় প্রকল্পে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে আরও প্রায় ১৫.৫০ কোটি টাকা।
নয়া ভবনটি হবে হাইকোর্টের শতবার্ষিকী ভবন ও সার্ধশতবর্ষভবন অর্থাত্ ‘সেসকুইসেন্টেনিয়াল বিল্ডিংয়ের’ মাঝে। ৫১ মিটার দীর্ঘ এবং সাড়ে ১৮ মিটার চওড়া ওই অংশে বিদ্যুত্ সরবরাহের একটি সাবস্টেশন আছে। সেটি স্থানান্তরের কাজ চলছে। পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, মে মাসে প্রস্তাবিত ভবনের পাইলিং শুরু হবে। নয়া ভবনের প্রতি তলের আয়তন হবে প্রায় ৬ হাজার বর্গফুট।
হাইকোর্টে মূল ভবনে তিনটি লিফ্ট আছে। আরও দু’টি লিফ্ট বসানোর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। মাস ছয়েকের মধ্যে সেগুলি চালু হওয়ার কথা। ট্র্যাভেলেটর বসবে দু’টি অংশে, সাত মিটার উচ্চতায়। প্রথমটি মূল ভবনের সামনে থেকে ও শতবার্ষিকী ভবন পর্যন্ত। এর দৈর্ঘ্য ৩৭ মিটার। ২৩ মিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় ট্র্যাভেলেটরটির এক প্রান্ত হবে শতবার্ষিকী ভবনে। অপর প্রান্ত ‘সেসকুইসেন্টেনিয়াল বিল্ডিংয়ের’ সামনে। এক মিটার চওড়া এই চলমান পথগুলির গতি হবে সেকেন্ডে দেড় মিটার। দু’প্রান্তের নাগাল পেতে তৈরি হবে সাত মিটার উঁচু এসক্যালেটর। এর জন্য যন্ত্রাংশ আসবে চিন থেকে।
অন্য দিকে, হাইকোর্টের বিভিন্ন এজলাস এবং বিচারপতিদের চেম্বার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হলেও প্রশাসনিক বিভিন্ন বিভাগ ও আইনজীবীদের বসার ঘরগুলিতে এসি বসানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি উঠেছে। এর জন্য হাইকোর্টে মূল ভবনের মাঝে বসানো হবে ‘প্লান্ট’। শুরু হয়েছে তারও প্রস্তুতিপর্ব।
আইনের খোঁজে বা বিচারের আশায় কলকাতা হাইকোর্টে দৈনিক গড়ে প্রায় ১৭ হাজার লোক আসেন। বার কাউন্সিলের অন্যতম কর্তা উত্তম মজুমদার এ কথা জানিয়ে বলেন, “এ ছাড়া আছেন প্রায় ১০ হাজার আইনজীবী, তাঁদের প্রায় তিন হাজার ‘ক্লার্ক’, হাইকোর্টের বিভিন্ন কাজের হাজার দুই কর্মী।” এতগুলো লোকের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো একেবারে নেই বলে তাঁর অভিযোগ। উত্তমবাবু বলেন, “আইনজীবী এবং আবেদনকারীদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে বেশ ক’বছর ধরেই আমরা দাবি জানাচ্ছি।”
আইনজীবীদের অভিযোগের ভিত্তি স্বীকার করে হাইকোর্টের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “নয়া ভবন তৈরি হলে এ সব সমস্যার অনেকটাই মিটবে।” নয়া পরিকল্পনায় গাড়ি রাখার যথেষ্ট বাড়তি জায়গা বরাদ্দ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ প্রসঙ্গে পূর্ত দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার করুণ দে বলেন, “বিচারকদের গাড়ি রাখার জন্য ভূগর্ভস্থ পার্কিং স্পেস আগেই করা হয়েছে। কাছেই কিরণশঙ্কর রায় রোডে পুরনো ‘পঞ্চায়েত ভবন’ ভেঙে তৈরি হচ্ছে গাড়ি রাখার বহুতল প্রকল্প। সেখানেও হাইকোর্টের প্রায় ৫০০ গাড়ি রাখার চেষ্টা হবে।” এ ব্যাপারে হাইকোর্টের তরফে ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy