Advertisement
০১ মে ২০২৪
Abhishek Banerjee Subrata Bakshi

বক্সীর মন্তব্যে তীব্র আপত্তি, কুণাল বললেন, অভিষেক লড়াইয়েই আছেন, তাঁর কথা শুনলে দলেরই মঙ্গল হবে

গত দু’মাস ধরে তৃণমূলে বিবিধ বিষয়ে ‘দ্বন্দ্ব’ চলছে। শাসকদলের সর্বোচ্চ স্তরে মতের বৈপরীত্য বার বার প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। সোমবার বক্সীর মন্তব্য তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

Abhishek Banerjee

(বাঁ দিক থেকে) সুব্রত বক্সী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:১৩
Share: Save:

প্রতিষ্ঠা দিবসেই নতুন বিতর্ক তৈরি হল তৃণমূলের অন্দরে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী যে মন্তব্য করেছেন সোমবার, তা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানালেন দলের অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। আনন্দবাজার অনলাইনকে কুণাল জানিয়েছেন, বক্সীর বাক্যগঠন নিয়ে তাঁর ‘আপত্তি’ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, তৃণমূলের অন্দরে ‘বক্সীগঞ্জ’ নিয়ে অভিষেক শিবিরের বরাবরই কিছু না কিছু বক্তব্য থাকে। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনায় সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের বিতণ্ডায় হস্তক্ষেপ করতে গিয়েছিলেন বক্সী। তিনি নিজেই গিয়ে হাজির হন নৈহাটিতে। সেখানে যাওয়ার পথে নিজের গাড়িতে তুলে নেন অর্জুনকে। কিন্তু সেই বৈঠকে শ্যাম আসেননি। উল্টে তিনি বলেন, এমন কোনও বৈঠক হচ্ছে বলে তিনি জানতেনই না! ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরে বক্সী এবং অর্জুন ফিরে আসেন। সেই ‘নিষ্ফলা’ প্রয়াস নিয়ে অভিষেকের ঘনিষ্ঠেরা দলের অন্দরে প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলেননি।

সোমবার, ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক বক্তৃতায় বক্সী বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সর্ব স্তরের ভারতবর্ষের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক। স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্বাচনে যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াই করেন, নিশ্চিত ভাবে আমাদের ধারণা, উনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। যদি লড়াই করেন, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে লড়াই করবেন উনি।’’

বক্সীর কথায় তৃণমূলের একাংশ যে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছে, তা হল প্রকারান্তরে এটা বলা যে, অভিষেক লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যেতে চাইছেন। বস্তুত, বক্সীর কথায় ‘যদি লড়াই করেন’, ‘পিছিয়ে যাওয়া’ ইত্যাদি শব্দবন্ধে ঠারেঠোরে একটা পলায়নী মনোবৃত্তির দিকে আঙুল তোলা হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

বক্সীর বক্তব্য সম্পর্কে কুণাল (যিনি গত শনিবার অভিষেকের সঙ্গে দলের একাংশের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন) সোমবার বলেন, ‘‘রাজ্য সভাপতিকে সম্মান করি। কিন্তু তাঁর বাক্যগঠন নিয়ে আপত্তি রয়েছে। এটা কখনওই কাঙক্ষিত নয়।’’ কুণালের কথায়, ‘‘অভিষেক লড়াইয়ের ময়দানেই রয়েছেন। আর তিনি যে কথা বলতে চান, তা শুনলে দলেরই মঙ্গল।’’ বক্সীর বাক্যগঠনে কেন আপত্তি, তা অবশ্য খোলসা করেননি কুণাল। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠদের ব্যাখ্যা, বক্সীর কথা শুনলে মনে হচ্ছে অভিষেক লড়াইয়ের ময়দানে নেই। যেন তিনি পালিয়ে যেতে চাইছেন! অভিষেক-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘এই ধরনের আলটপকা কথা বলে আসলে অভিষেকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা হয়েছে। যা দলের জন্য মোটেই ভাল সঙ্কেত নয়।’’

প্রসঙ্গত, পুজোর পর থেকেই অভিষেককে সে ভাবে দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না। অনেকের বক্তব্য, তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ দূরে দূরে থাকছেন। এ নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে চোরাস্রোত বইছিলই। তার মধ্যেই গত শনিবার অভিষেককে বোঝাতে তাঁর কালীঘাটের অফিসে বৈঠকে বসেছিলেন কুণাল, ব্রাত্য বসু, পার্থ ভৌমিক, তাপস রায়দের মতো নেতারা। যাঁরা তৃণমূলের অন্দরে ‘অভিষেক-ঘনিষ্ঠ’ হিসেবেই পরিচিত। তাঁরা আর্জি জানিয়েছিলেন অভিষেককে ‘সক্রিয়’ হওয়ার জন্য। কিন্তু ঘনিষ্ঠদের আর্জি ফিরিয়ে অভিষেক জানিয়ে দেন, লোকসভা ভোটে তিনি কেবল ডায়মন্ড হারবারেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন। দলের নীতিনির্ধারণ বা সংগঠন পরিচালনার ভূমিকায় তিনি অবতীর্ণ হবেন না। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠদের সামনে তাঁর অপারগতার নেপথ্যে দু’টি কারণের কথা উল্লেখ করেছিলেন অভিষেক। এক, তিনি যে আগ্রাসী আন্দোলনের পথে হেঁটেছিলেন, তা থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই, রাজ্য সরকারের আমলাদের একাংশের ভূমিকায় তিনি ক্ষুব্ধ। যাঁরা সময়ের কাজ সময়ে করছেন না। যে কারণে সাধারণ মানুষের সামনে দল তথা মমতার ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

গত দু’মাস ধরে তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ, বয়সবিধি নিয়ে ‘দ্বন্দ্ব’ চলছে। এই দু’টি ক্ষেত্রেই শাসকদলের সর্বোচ্চ স্তরের মতের বৈপরীত্য বার বার প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। সেই আবহে সোমবার বক্সীর মন্তব্য নতুন করে তৃণমূলের অভ্যন্তরে বিতর্ক তৈরি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যার সঙ্কেত মিলেছে কুণালের বক্তব্যেও। তা ছাড়া, অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের আরও বক্তব্য, তাঁদের ‘সেনাপতি’ তো কখনও বলেননি যে মমতাকে সামনে রেখে তিনি লড়বেন না! বরং প্রতিটি সভায় অভিষেক বলেন, ‘‘মমতাই নেত্রী।’’ তা হলে বক্সীর এই ধরনের বক্তব্যের অর্থ কী? সেই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে উত্তরও— দলের মধ্যে প্রবীণদের একটি অংশ ‘নিরাপত্তাহীনতা’য় ভুগছেন। তা থেকেই তাঁরা বিভিন্ন মন্তব্য করে দলকে ভিতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee Subrata Bakshi Kunal Ghosh TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE