সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন এসেছেন অন্তত ৫০ বার। দেবযানী মুখোপাধ্যায় বার বিশেক। দিল্লি থেকে ডেকে আনা হয়েছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহ, তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনা সিংহকেও। কিন্তু সারদা কেলেঙ্কারির অন্যতম মূল অভিযুক্ত কুণাল ঘোষকে এখনও এক বারের জন্যও ডেকে উঠতে পারেনি শ্যামল সেন কমিশন। এমনকী, কুণাল নিজে থেকেই কমিশনে হাজির হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন, তা-ও অনেক দিন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কমিশন তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি। ফলে প্রায় দেড় বছর ধরে কুণালকে এড়িয়েই সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত চালাচ্ছে শ্যামল সেন কমিশন।
কমিশনে কাদের ডাকা হবে, তার যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তার প্রথম দিকেই রয়েছে কুণালের নাম। তবু কেন এখনও ডাকা হল না তাঁকে? এ ব্যাপারে কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলকুমার সেন সোমবার বলেন, “তালিকায় ওঁর নাম আছে। কিন্তু এত বিষয় যে, সময় পাওয়া যাচ্ছে না।”
সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরেই ২০১৩ সালের এপ্রিলে মহাকরণ থেকে এই কমিশন তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলা হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরতের পাশাপাশি মূল অপরাধীদেরও চিহ্নিত করবে এই কমিশন। কিন্তু কেলেঙ্কারির অন্যতম প্রধান সাক্ষী তথা অভিযুক্ত এই তৃণমূল সাংসদকে না ডেকেই কী ভাবে এগোচ্ছে তদন্ত? এ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি। কমিশনের এ দিনের বক্তব্য বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও।
মাস কয়েক আগে কুণাল নিজেই কমিশনে হাজির হওয়ার আর্জি জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে কুণাল লিখেছিলেন, সারদা সংস্থার কাছে তিনি টাকা পান। কমিশন ওই টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুক। এর পরই গত জুন মাসে কমিশনের এক জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কুণালকে ডাকা হবে। সে সময় শ্যামলবাবু বলেছিলেন, “ডাকার কথা আগেই ভাবা হয়েছিল। কমিশনের নানা কাজ। এ বার কুণালকে ডাকা হবে।” কবে ডাকা হবে জানতে চাইলে সে সময় তিনি বলেছিলেন, “কমিশনের সব সদস্যরা হাজির থাকবেন, এমন একটি দিনে তাঁকে ডাকা হবে।” এখন কমিশন সূত্রেই জানা যাচ্ছে, আপাতত ওই সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কেন কুণালের ছোঁয়া এড়াচ্ছে কমিশন? কমিশনের একটি সূত্রের মতে, ধরা পড়ার পর থেকেই একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করছেন কুণাল। সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার ধার আরও বেড়েছে। দিন কয়েক আগে আদালতে বিচারকের সামনে কুণাল বলেছেন, সারদা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে তাঁকে জেরা করা হোক। ওই দিনই সল্টলেকে সিবিআই অফিস চত্বরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘সারদা সংবাদমাধ্যমের থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যদি সব থেকে বেশি সুবিধা কেউ পেয়ে থাকেন, তা হলে তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ কমিশনের কর্তাদের তাই আশঙ্কা, সাক্ষী দিতে এলেই কুণাল রাজ্যের প্রভাবশালী নেতাদের নাম সরকারি ভাবে রেকর্ড করিয়ে নেবেন। মূল সাক্ষী যদি অন্য কোনও ব্যক্তির নাম সরকারি ভাবে জড়িয়ে দেন, তখন তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার দায় বর্তাবে কমিশনের উপরে। বিরোধীরাও বিষয়টি নিয়ে শোরগোল করলে চাপ বাড়বে কমিশনের উপরেও। কুণালকে ডাকার ব্যাপারে তাই রীতিমতো চিন্তায় পড়েছেন কমিশনের কর্তারা।
কমিশন সূত্রের খবর, আগামী ২৩ অক্টোবর কমিশনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। নতুন করে কমিশনের মেয়াদ আর বাড়ানো হবে কি না, রাজ্য সরকার এখনও তা জানায়নি। নবান্নের এক কর্তার কথায়, “আগের বার মেয়াদ শেষ হওয়ার মাস দুয়েক আগেই তা বাড়ানোর জন্য সরকারের নির্দেশ গিয়েছিল। এ বার মাত্র এক মাস বাকি। এখনও কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।” এ অবস্থায় কমিশনের অনেকেই ধরে নিয়েছেন, হয়তো রাজ্য সরকার আর কমিশনের ভার বহন করতে আগ্রহী নয়। এই অবস্থায় কমিশনও আর কুণালকে ডেকে সরকারের বিরাগভাজন হতে চাইছে না বলে সন্দেহ করছেন কমিশনেরই কেউ কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy